ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

টানেলে কার রেসিং : কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না

Daily Inqilab ইনকিলাব

০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেশের অবকাঠামো খাতে একেকটা মাইলফলক। পদ্মাসেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলের মত প্রকল্প আমাদের নাগরিক জীবনে নতুন বাস্তবতা ও অভ’তপূর্ব অভিজ্ঞতা সংযোজন করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব মেগা প্রকল্পের ব্যয়বাহুল্য ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ এখানে আলোচ্য নয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর এসব অবকাঠামোর উপর অস্বাভাবিক নিরাপত্তাহীনতা, বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা ও অপরাধপ্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত দেশের এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে নিজে উপস্থিত হয়ে জাঁকজমকের সাথে উদ্বোধন করেছেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের নিরাপত্তার প্রশ্নে নানা রকম গাইডলাইন ও সতর্কতার কথা বলা হলেও উদ্বোধনের একদিনের মধ্যেই টানেলে গাড়ী দুর্ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ২৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টায় টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে একটি প্রাডো গাড়ী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোলপ্লাজার রেলিংয়ে আঘাত করলে রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ীটি জব্দ করে।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, নিরাপত্তা ইস্যুতে কর্তৃপক্ষের হাঁকডাক ও সতর্কতার বিষয়গুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উদ্বোধনের পর একদিন যেতেনা যেতেই স্থানীয় তরুণরা কর্ণফুলী টানেলে হলিউডি মুভির মত কার রেসিংয়ে মেতে উঠেছে। এটি কোনো আকষ্মিক ঘটনা নয়, উন্মাতাল তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ খুলে টানেলের ভেতর রেসিংয়ের প্রতিযোগিতা করে তার ভিডিও শেয়ার করে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে টানেলের ভেতর গাড়ীর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬০ কিলোমিটারে সীমিত রাখার কথা বলা হলেও তারা তা মানেনি এবং অকারণে শুধু মজা লুটতেই টানেলের ভেতর দিয়ে বার বার গাড়ি ঘোরাচ্ছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও নজরদারির প্রশ্নে কর্ণফুলী টানেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্বোধনের পর এক সপ্তাহ না যেতেই টানেলে দুর্ঘটনা এবং উচ্ছৃঙ্খল তরুণদের একসাথে ১২-১৫টি গাড়ী নিয়ে রেসিং প্রতিযোগীতা করার যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তা উদ্বেগজনক ও অপ্রত্যাশিত। তাদের রেসিংয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের নাম-পরিচয় কিংবা জবাবদিহিতার আনার কোনো পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি। দামি গাড়ী নিয়ে টানেলে রেসিংয়ে জড়িতরা সম্ভবত রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী ধনীর দুলাল। পরিচয়ে যেই হোক, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের নিবৃত্ত করতে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বিভাগের শৈথিল্য ও ব্যর্থতা স্পষ্ট। সিসি ক্যামেরা ফুেিটজ ও গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে এদের আইনের আওতায় আনা অসম্ভব নয়।

প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও গত ২ সেপ্টেম্বর মহাসমারোহে আংশিক উদ্বোধন হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপরে নিরাপত্তাহীনতা ও অপরাধীচক্রের অবাধ তৎপরতার চিত্র ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। উদ্বোধনের ৭ দিনের মাথায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে একটি প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর দু:সাহসিক ডাকাতির খবর প্রকাশিত হয়। অক্টোবরের ১০ তারিখে দিনেদুপুরে এলিভেটেড রাস্তায় র‌্যাব পরিচয়ে গাড়ী আটকে ৪৮ টাকা ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই এক্সপ্রেসওয়েতে সংঘদ্ধ ডাকাত ও অপরাধীচক্র সক্রিয় থাকার তথ্য পেয়েছে। সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাত্র ১১ কিলোমিটার কিংবা ২০কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অথবা তিন কিলোমিটার টানেলে চলাচলকারি যানবাহনের উপর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। কর্তৃপক্ষ টোলপ্লাজা বসিয়ে টাকা আদায়ে মনোনিবেশ করলেও এসব মেগাপ্রকল্পের স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নজরদারি নিশ্চিত করতে পারছে না। টানেলে গাড়ির গতিসীমাসহ ১৪ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে যে ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তার যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি ঋণে দেশের অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে সরকার একেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেই যেন দায়িত্ব শেষ করছে। এসব প্রকল্পের সম্ভাব্য উপযোগিতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিধানে ব্যর্থতা থাকলেও তার কোনো জবাবদিহি নেই। অবকাঠামো ব্যবহারকারীরা নির্ধারিত টোল দিচ্ছে। প্রকল্প ঋণের বোঝা দেশের সব মানুষকেই বহন করতে হচ্ছে। প্রকল্পব্যয় ও টোলের অর্থ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার অভিযোগ যেমন রয়েছে, মূল প্রকল্পের নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিয়ে তাদের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। বিশ্বমানের আধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে এসব প্রকল্পের নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও নজরদারি ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ