ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম

যে দেশে গুণীর কদর হয় না, সে দেশে গুণী জন্ম নেয় না। আমাদের দেশে গুণীর জন্ম হলেও তাদের কদর খুব কমই হয়। সরকারিভাবে তো বটেই, বেসরকারিভাবেও তাদের মূল্যায়ন হতে দেখা যায় না। যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়েও তারা কাজ চালিয়ে যান। অবমূল্যায়নের বেদনা নিয়ে অনেকে বিদেশে পাড়ি জামান। ভিনদেশে তাদের কদরের কমতি নেই। তাদের মূল্যায়ন করা হয়। ফলে দেশের সম্পদ বিদেশি সম্পদে পরিণত হয়। ব্রেইন ড্রেইন বা মেধা পাচারের এই প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চলে আসছে। দেশ থেকে তরুণ প্রজন্মের মেধাবীরা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। তাদের অনেকে সেখানে উচ্চশিক্ষা নিয়ে থেকে যাচ্ছে। দেশে ফিরছে না। বিদেশে তাদের গবেষণালব্ধ একেকটি বিস্ময়কর উদ্ভাবন ও কাজ সেখানের সম্পদ হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে আমাদের মেধাবীদের উদ্ভাবন ও আবিষ্কার দেখে যেমন গর্ববোধ হয়, তেমনি মনে হরিষে-বিষাদের সৃষ্টি হয়। আফসোস হয়, তাদের এ কাজের সুফল আমরা ভোগ করতে পারছি না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে। আমাদের মেধাবী তরুণরা বিদেশে অভাবনীয় অনেক বিষয় আবিষ্কার করেছেন এবং করছেন। এর অনেক নজির রয়েছে। প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক সায়মা বেগম চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম অগ্রগতি ইউনিভার্সাল ফ্লু ভ্যাকসিন তৈরির ফর্মুলা আবিষ্কার করে বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। তার আগে লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. হাসান শহীদ ও শাকির আহমদ বিশ্বের প্রথম সৌরচালিত হেলিকপ্টার উদ্ভাবন করে অনন্য নজির স্থাপন করেন। নামিবিয়ার মরু অঞ্চলে মাছের চাষ প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে সে দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশণে বিজ্ঞানী তাহের খান বিষমুক্ত খাবার ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য বাজারজাতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শুভ রায় বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। স্পেকট্রোমিটার নামে মানুষের শরীরে যেকোনো ধরনের বিস্ফোরক উপাদান সহজে শনাক্তকরণ মেশিন আবিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্রে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ড. আনিসুর রহমান। দেশের বাইরে এমন অনেক বাংলাদেশী আছেন, যারা বিজ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করে সংশ্লিষ্ট দেশে অবদান রেখে চলেছেন। দেশে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম তোষা পাটের পর দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। তিনি পেঁপের জেনোম সিকোয়েন্সিং উৎঘাটন করে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষার কৌশলও আবিষ্কার করেন। দেশেÑবিদেশে এমন আরও অনেক বাংলাদেশী গবেষক ও বিজ্ঞানী রয়েছেন, যারা নিরলসভাবে গবেষণা করে নতুন নতুন আবিষ্কার করে চলেছেন। বিদেশে তাদের এই আবিষ্কারের সুফল আমরা পাচ্ছি না, দাবিও করতে পারছি না। দেশে যারা আবিষ্কার করছেন, তারাও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না।

দুই.
একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চেহারা স্থায়ীভাবে বদলে দিতে বিজ্ঞানের একটি-দুটি আবিষ্কারই যথেষ্ট। আমাদের দেশে কৃষি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী-গবেষকরা যেসব পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছেন, কার্যক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে জীবনমান স্থায়ীভাবে বদলে যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। রাষ্ট্র কি তাদের আবিষ্কারকে যথাযথভাবে লালন ও সংরক্ষণ করতে পারছে? এদিকে তেমন মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ কোন আবিষ্কার হলে ঘোষণা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়। পরবর্তীতে আবিষ্কারের কি হলো, কতটুকু এগুলো, তার বাস্তব প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, এসবের খোঁজ খুব একটা পাওয়া যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে, যেসব বিজ্ঞানী কৃষি, তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিয়োজিত তাদের প্রতি রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। তাদের গবেষণার জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা তারা পাচ্ছেন না। তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ১১৫ জনের বেশি বিজ্ঞানী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫০ জন এবং ২০০১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ৬৫ জন চাকরি ছেড়েছেন। আরও অনেকে চাকরি ছেড়েছেন, কেউ অবসরে চলে গেছেন কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, অনেকে বঞ্চনা ও হতাশার শিকার হয়ে গবেষণা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। চাকরি ছেড়ে যাওয়াদের অভিমত, বিজ্ঞানীদের বেতনকাঠামো দেশে খুব বেশি ভাল নয়। তারপরও দেশের টানে বিজ্ঞানীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান। কিন্তু যোগ্যতা থাকার পরও তারা যদি যথাযথ মূল্যায়ন ও সুযোগ-সুবিধা না পান, তাহলে কেন থাকবেন? ব্রি’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন ড. শেখ তানভীর হাসান। একটি উদ্ভাবনের জন্য তিনি ৭৬টি দেশের দেড় হাজার বিজ্ঞানীর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে অর্গানিক ফার্মিং ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড (ওফিয়া) পান। পদোন্নতি না পেয়ে ২০০৮ সালে হতাশা নিয়ে চাকরি ছেড়ে বেসরকারি একটি সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশ তার কাছ থেকে আর কিছু পেল না, একজন বিজ্ঞানী হারালো। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যদি তাদের চাকরি ও সুযোগ-সুবিধা বা জীবনযাপনের দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়, তবে তার পক্ষে নিমগ্ন হয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু গবেষণা নয়, সৃষ্টিশীল কোন কাজই দুঃশ্চিন্তা নিয়ে করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন চিন্তামুক্ত ও নির্ভার পরিবেশ। ২০০৮ সালে নোবেল জয়ী সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী ড. রিচার্ড আর. আর্নস্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন। এক সেমিনারে বলেছিলেন, ল্যাবরেটরি ও গবেষণার সঙ্গে যার যোগাযোগ নেই, তার বিজ্ঞানী থাকার কোন সার্থকতা নেই। বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়। দেশের মানুষ কী খাবে, কীভাবে খাবে, কী ব্যবহার করবে? এসব প্রশ্ন নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করাই তার দায়িত্ব। কোন দেশের বিজ্ঞানীরা এসব প্রশ্নের সমাধান দিতে পারলেই ওই দেশ সার্বিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। কৃষি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দায়িত্ব বিজ্ঞানীদের, তেমনি খাদ্য ও ব্যবহার্য দ্রব্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দায়িত্বও তাদের। এই দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে জাতীয় অগ্রগতিও থমকে দাঁড়াবে। মি. আর্নস্ট-এর এই বক্তব্য একজন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্বাভাবিক। অথচ তিনি যে পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকে গবেষণা কর্ম চালিয়েছেন এবং নোবেল জয়ী হয়েছেন, আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা তা কল্পনাও করতে পারেন না। তিনি বলেছেন, আমার বাসায় কোন টেলিভিশন নেই। অর্থাৎ তার গবেষণা কর্ম বিঘ্নিত হতে পারে, এমন কোন পরিবেশ তিনি সৃষ্টি হতে দেননি। একজন বিজ্ঞানীর গবেষণার জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তিনি তাই পেয়েছিলেন। তাকে প্রতিনিয়ত চাকরি ও কীভাবে জীবনযাপন করবেন, এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে হয়নি। তিনি আত্মনিবেদিত হয়ে গবেষণা কর্ম চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের এই আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করার যথাযথ পরিবেশ আমাদের দেশে সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে মেধাবী তরুণ ও বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়ে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় বা বিদেশ চলে যাচ্ছেন। ফলে দেশ মেধা থেকে বঞ্চি হচ্ছে এবং পিছিয়ে পড়ছে। অথচ তারা বিদেশ গিয়ে যখন পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তখন তাদের মেধার স্ফূরণ ঘটতে দেখা যায। একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। দেশে বসে আমরা গর্ববোধ করলেও, এতে দেশের কোন উপকার হয় না।

তিন.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেসব দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে, তাদের সক্ষমতার পেছনে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অবদান অসীম। তাদের একের পর এক আবিষ্কার দেশগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে। গত কয়েক দশকে চীন ও ভারত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে অর্থনৈতিকভাবে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চীন যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অসামান্য উন্নতির দেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। ভারত বিদেশে অবস্থানরত তাদের কৃতি সন্তানদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে। দেশে ফিরে তাদের গবেষণা দেশের কাজে লাগাতে বলছে। তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক বিশ্বে বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের সরকার যখন তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীকে আকড়ে ধরছে, তখন তা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি যে গবেষক ও বিজ্ঞানী হতে পারে, বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। মেধা পাচার কিংবা বিজ্ঞানীদের কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়ায় পদক্ষেপ এবং সুযোগ-সুবিধা খুব কম। ক্ষমতাসীন হওয়া রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক লক্ষ্য হলেও উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাসীন হওয়ার মূল লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থাকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত উন্নয়নের লক্ষ্য। তাদের কর্মসূচী ও কর্মকাণ্ডে দেশের সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়ন খাতগুলোকে এগিয়ে নেয়ার এজেন্ডা থাকে না বললেই চলে। থাকলেও তা খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।

চার.
দেশের টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের বিকল্প নেই। যারাই এ কাজে মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়েছে, তারাই এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গুরুত্ব ও উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নিলে বিভিন্ন খাতে দেশ অনেক এগিয়ে যেত। জাতীয় স্বার্থে বিজ্ঞানী ও গবেষক এবং তাদের উদ্ভাবনকে সংরক্ষণ ও কাজে লাগানো প্রয়োজন হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। যখন বিস্ময়কর কোন আবিষ্কার হয়, তখন এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সরকারের তরফ থেকেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা আসে। কিছুদিন যেতেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয়টি আড়ালে চলে যায়। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের সাড়া জাগানো আবিষ্কারের পর ২০১০ সালে সরকারের তরফ থেকে বিজ্ঞানীদের দেশে ধরে রাখার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগের কথা শোনা গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক বেতন কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আলাদা বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং নতুন করে ৪ হাজার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এসব উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে, তার খবরাখবর এখন আর পাওয়া যায় না। এসব উদ্যোগ কি কেবল কথার কথায় পরিণত হয়েছে, নাকি বাস্তবায়িত হয়েছে, তা দেশবাসী জানতে পারছে না। ড. রিচার্ড বলেছেন, বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। জীবনমুখী করে তুলতে হবে। বাংলাদেশকে এগুতে হলে মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে। একজন নোবেল জয়ী বিজ্ঞানীর এ কথা উপেক্ষার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে এগুতে হলে ভেতরের মেধাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে, উন্নয়নের অন্যতম শক্তি বিজ্ঞানী ও গবেষক। তাদেরকে এবং তাদের উদ্ভাবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন ধারার অগ্রভাগে রাখতে হবে। দেশের উন্নয়ন বেগবান করতে বিজ্ঞানীদের যত্ন নিতে হবে। তারা যাতে নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে গবেষণা কর্ম চালিয়ে যেতে পারে এবং বিদেশ চলে না যায়, সেজন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন, তা দিতে হবে। বিদেশে যেসব বিজ্ঞানী ও গবেষক রয়েছেন, তাদেরকে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে ফিরে আসতে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানী, গবেষক ও তাদের উদ্ভাবনকে সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগের দায়িত্ব সরকারের। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা