ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

শরণার্থী শিবিরেও ইসরাইলি বোমা হামলা

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা জায়নবাদী ইসরাইলী বিমান হামলায় বিদ্ধস্ত। ফিলিস্তিনিদের উপর নিপীড়ন ও আল-আকসার উপর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ এবং অবমাননার প্রতিবাদে গত ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাসের আল কাসেম ব্রিগেড ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, হামাসের এই আকষ্মিক হামলা শুন্য থেকে শুরু হয়নি। দশকের পর দশক ধরে গাজাবাসির উপর অবরোধ-নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া হামাসের এই ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ অভিযান। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে হামাস-হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় চুক্তি ইত্যাদিও হয়েছে। এবার ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত ও সংক্ষিপ্ত অভিযানের দিন থেকেই ইসরাইল গাজার উপর বেপরোয়া, অনিয়ন্ত্রিত বোমা বর্ষণ শুরু করে। গত ২৫ দিনের অব্যাহত বোমা হামলায় উত্তর গাজার অধিকাংশ ভবন ও অবকাঠামো মাটিতে মিশে গেছে। ইসরাইলি বিমান হামলা ও কামানের গোলায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের প্রায় অর্ধেক শিশু এবং নারী। ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু করা বিমান হামলার শুরু থেকেই যুদ্ধের কোনো রীতি নীতি, আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও মানবিক কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। হাজার হাজার বেসামরিক বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হাসপাতাল ও গণমাধ্যমের অফিসের উপর বোমা বর্ষন করেছে। গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালের উপর জঙ্গী বিমানের বোমা বর্ষণে ৫শতাধিক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বিশ্ববিবেককে নাড়িয়ে দিলেও ইসরাইলের জায়নবাদি শাসকরা নির্বিকার।

বাড়িঘর ধ্বংসের সাথে সাথে একের পর এক হাসপাতালে বোমা বর্ষণ করে গাজার হতাহত মানুষের বেঁচে থাকার ন্যুনতম অবলম্বনগুলোকেও ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজা ও পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিমান হামলা ও সাঁড়াশি অভিযান জোরদার করে নির্বিচার হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে। গাজা, জেনিন, রামাল্লা ও জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে গণহত্যার নেশায় মেতে উঠেছে ইসরাইলি বাহিনী। রাফা, জাবালিয়া ও খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৮ সাল এবং পরবর্তী প্রতিটি আরব ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের বাস্তুচ্যুত করার মধ্য দিয়ে ইসরাইল আরবদের ভূমি দখল করেছে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের বসবাসের জন্য অতি স্বল্প জমিতে নতুন নতুন শরণার্থী শিবির গড়ে উঠেছে। এবারের যুদ্ধে ইসরাইল এসব শরণার্থী শিবিরের ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত করে কার্যত পুরো গাজা উপত্যকাকে দখল করার পাঁয়তারা করছে এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও প্রতিরোধ আন্দোলনের সব শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। পশ্চিমা অস্ত্রশক্তি ও পৃষ্ঠপোষকতায় আরবদের ভূমি দখল করে গড়ে ওঠা জায়নবাদী ইসরাইল এখন ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা তা প্রকাশ্য ও অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করে চলেছে। যুদ্ধবিরতি, গাজায় ত্রাণ সহায়তা, খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহের মত মৌলিক চাহিদার যোগান নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের কোনো আহ্বানের প্রতি কর্ণপাত করছে না নেতানিয়াহু।

গাজা উপত্যকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরনার্থী শিবিরে ইসরাইলী বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় গত মঙ্গলবার শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। কোনো যুদ্ধ নীতিতেই শরণার্থী শিবিরে এ ধরণের বোমা হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। পক্ষপাতদুষ্ট পশ্চিমা মিডিয়াও এ ধরনের হামলাকে সমর্থন করছে না। এরই মধ্যে জাবালিয়ায় বুধবার দ্বিতীয় দিনের বোমা হামলায় আরো অন্তত ৮০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। রাষ্ট্রহীন, অবরুদ্ধ গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নির্মূল করার নামে গাজার ২৩ লাখ মানুষকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার টার্গেট করেছে ইসরাইল। এই যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী লক্ষ্য অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররাও সামরিক-অর্থনৈতিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ইসরাইলের পাশে বিপুল রণসজ্জা ও বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিপূর্বে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে কোটি কোটি মানুষকে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে পশ্চিমারা। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার বিভক্তির সুযোগে তারা এসব করতে পেরেছে। চতুর্দিকে আরব রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ইসরাইলকে নিবৃত্ত করতে অথবা মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন গাজাবাসীকে খাদ্য, চিকিৎসা ও ত্রাণ সহায়তা দিয়ে রক্ষা করতে এসব আরব দেশকে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না। হামাসের আল কাশেম ব্রিগেড ও হেজবুল্লাহর প্রতিরোধের মুখে নাস্তানাবুদ ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধ থেকে নিবৃত্ত করতে এবং যুদ্ধ বিরতি মানতে তাদের এহেন নির্লিপ্ততার কারণে জায়নবাদিরা গণহত্যার সাহস পাচ্ছে। হাসপাতাল, গির্জা ও শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলার মতো ঘটনার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ মানুষও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধে ক্যাপিটাল হিলে প্রতিবাদ জমায়েত করেছে। ইতিমধ্যে গাজায় অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মানবিক বিপর্যয় ক্রমে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। এহেন বাস্তবতায় জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও তা বাস্তবায়নে ওআইসি ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সমন্বিত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে সব বিভেদ ভুলে আরব ও মসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে লেবানন, জর্ডান, মিশর, সিরিয়া ও ইরানের উপর সম্ভাব্য জায়নবাদী আগ্রাসন মোকাবেলায় আরব ও মুসলিম বিশ্বের ইস্পাত কঠিন ঐক্যের বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ