প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বাস্তবোচিত বক্তব্য
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও গার্মেন্ট শিল্প বাঁচাতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। তার এই বক্তব্যকে কেউ কেউ বিলম্বিত উপলব্ধি বলে মনে করলেও ২২ মাস আগে সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর পর প্রথম বক্তব্যেই তিনি একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তাঁর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদাররাও দীর্ঘদিন ধরে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের একরোখা মনোভাব এবং বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকবার সীমাবদ্ধতা এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নি:শর্ত সংলাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে গত ১৪ নভেম্বর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট তিনটি দলের কাছে হস্তান্তরের সাথে সাথেই সরকারী দলের পক্ষ থেকে সংলাপের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার পর কালবিলম্ব না করেই সিইসি হাবিবুল আউয়াল ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে সরকারীদল, কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিকদল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেও ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্দোলন, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরামসহ অন্যদলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে।
বিলম্বে হলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল নির্বাচন সুষ্ঠু করার অনিবার্য বাস্তবতার কথাগুলো তুলে ধরেছেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান, চাপ ও সম্ভাব্য হুমকি অগ্রাহ্য করে যেনতেন প্রকারে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা সক্ষমতা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে সেই বিষয়টিই উঠে এসেছে। তিনি স্বীকার করেছেন, বিদেশিদের ক্রেডিবল ইলেকশনের দাবি অন্যায্য নয়। বলা বাহুল্য, সরকারের সদিচ্ছা ও সক্রিয় উদ্যোগ ছাড়া সিইসি’র পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিগত দুইটি নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। নজিরবিহিন ভোট কারচুপির এসব নির্বাচন দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকার ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যবেক্ষকরা করছেন। বিরোধীদলের আন্দোলন দমন, গণগ্রেফতার ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে যেনতেন প্রকারে একটি নির্বাচন করা হয়তো সম্ভব। তবে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। এবার পশ্চিমা দেশ যারা বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার, তারা দীর্ঘদিন ধরে অংশ্রগহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। এই নির্বাচনের সাথে আন্তর্জাতিক মহলের নানাবিধ তৎপরতা, সক্ষমতা এবং নির্বাচনের পর দেশের অর্থনীতি ও রফতানি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সিইসি কিছুটা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ দেখাতে পারেননি। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ‘ক্রেডিবল’ ও ‘কারচুপি মুক্ত’ নির্বাচন সম্ভব কিনা তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। কেবল উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন, তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়ার চেয়ে সীমাবদ্ধতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ না করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ করলে ভাল হতো।
সরকার চাইলে সমঝোতার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা অসম্ভব নয়। ঘোষিত তফসিল অনুসারে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায়ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। তাঁর এই ভূমিকা ইতিবাচক এবং ধন্যবাদযোগ্য। তিনি নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ, ভোটের দিন সিল মেরে বাক্স ভরার মত নির্বাচনী সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। তবে তা থেকে উত্তরণে কি করণীয় তা সুস্পষ্টভাবে বলেননি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, নব্বই দশকে এক মাগুরা উপনির্বাচনে কারচুপির ঘটনা নিয়ে শুধু সরকারই পরিবর্তন হয়নি, সরকার পদ্ধতিই পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তবে তখনো ‘নির্বাচনে বিদেশি থাবা’ এবং তৎপরতা এতটা প্রকট হয়ে উঠেনি। গত দু’তিন দশকে পশ্চিমাবিশ্বের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় অনেক দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি ও রফতানি বাণিজ্য বড় ধরণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। অর্থনীতিতে কোনো সুখবর নেই। এহেন বাস্তবতায় একটি একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশকে গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত হলে এ দেশের গার্মেন্ট শিল্পে বিনিয়োগ এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। ক্ষমতাসীনদের চাপে, কিবা সংবিধানের দোহাই দিয়ে আপস-সমঝোতার উদ্যোগ ছাড়া এমন নির্বাচন করা সমীচীন হবে না, যা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দেবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী