পরিসংখ্যানের মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে
৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম
দেশে পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক আগেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের এই অস্বচ্ছতা ও আস্থাহীনতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রির্জাভের হিসাব নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র আপত্তির পর সরকার এ বিষয়ে তাদের সুপারিশ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সাম্প্রতিক খানা জরিপে দেশের জনসংখ্যা, নারী ও পুরুষের সংখ্যায় তারতম্য এবং প্রবাসীর সংখ্যা নিয়ে বড় ধরণের সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত জরিপ রিপোর্ট অনুসারে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮লাখ ২৮হাজার। এর মধ্যে পুরুষ জনসংখ্যা ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার এবং নারী জনসংখ্যা ৮ কোটি ৫৬লাখ ৮৬ হাজার। এ হিসেবে দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। অতীতে আর কখনো এমনটা দেখা যায়নি। এর কোনো যৌক্তিক কারণও নেই। অন্যদিকে আলোচ্য খানা জরিপে প্রবাসী জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ ৫৩ হাজার। অথচ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসেবে প্রবাসীর সংখ্যা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ। গতকাল প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ। কোথায় ১ কোটি ৫০ লাখ, আর কোথায় মাত্র ৫০ লাখ। সরকারি হিসেবের চেয়ে খানা জরিপের হিসেবে প্রবাসীর সংখ্যা তিনভাগের একভাগেরও কম। এভাবেই জনশুমারি ও খানা জরিপের সঠিকত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
দেড় কোটিরও বেশি সংখ্যক প্রবাসীকে জনশুমারি ২০২২ এর হিসেবে মাত্র ৫০লাখ দেখানো পরিসংখ্যানে পুরুষের চেয়ে নারী সংখ্যাবৃদ্ধির যে হার তুলে ধরা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই ভুল। এক কোটির বেশি প্রবাসীকে হিসেবের বাইরে রাখায় এখানে বড় ধরণের পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। প্রবাসী জনসংখ্যার আশিভাগের বেশী পুরুষ হওয়ায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশী বলে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাও প্রশ্নবিদ্ধ। এসব ব্যত্যয়গুলো ধর্তব্যে নিলে দেশের প্রকৃত জসংখ্যা, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সংখ্যানুপাতিক হারসহ জনশুমারির সামগ্রিক সঠিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা অস্বাভাবিক নয়। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বিবিএসের জনশুমারি রিপোর্টে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার, চারমাস পর তা ৪৭ লাখ বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভ্রান্তিকর তথ্যপূর্ণ শুমারি রিপোর্টকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করলে দেশের কৃষি ও শিল্পখাতসহ সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা, বন্টন ও সেবামূলক কার্যক্রমে বড় ধরণের ব্যত্যয় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। এ কারণেই দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, খাদ্য চাহিদা এবং কৃষি উৎপাদনের হিসেবে বড় ধরণের গরমিল তৈরী হওয়ায় আমদানি ও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্য সম্পর্কে আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের তরফ থেকে আপত্তির তথ্য জানা যায়। একই সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষও বিবিএসের জরিপ রিপোর্ট সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। গত মার্চ মাসে প্রকাশিত বিবিএসের এক রিপোর্টে তাদের তথ্য সম্পর্কে শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষের অসন্তোষের কথা জানা যায়। দেশি-বিদেশি কোনো পক্ষই দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ রিপোর্টের প্রতি আস্থাশীল নয়। অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে গৃহীত উৎপাদন ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় গলদ থাকা স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি মওসুমে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের কথা বলা হলেও প্রতি বছর ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি এবং চালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গড়মিলের সরাসারি প্রভাব থাকতে পারে। সরকারি হিসেবে গত মওসুমে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি। দেশে আলুর চাহিদা বছরে ৮৫ লাখ টন। এ হিসেবে অন্তত ২৫ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা। বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে আলুর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে বিদেশ থেকে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত থেকে বলা যায়, আলু উৎপাদন ও চাহিদার তথ্যে গড়মিল রয়েছে। অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে সরবরাহ ও বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে হলে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে দেয়া দেশের জনসংখ্যা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, চাহিদা ও উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণসহ কোনোকিছুই সঠিকভাবে সমাধা করা সম্ভব নয়। পদ্ধতিগত ভুল কিংবা রাজনৈতিক জনতুষ্টিমূলক প্রচারণা নীতি, যে কারণেই পরিসংখ্যানে এমন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উঠে আসুক না কেন, এর ফলে সামগ্রিকভাবে সরকারের অর্জনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও দেশের মানুষ। এ বিষয়ে সর্ব প্রকার অস্বচ্ছতা ও বিভ্রান্তি দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী