ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজ প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে
০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল গত ৩০ ডিসেম্বর। বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপি ও তার সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিরোধীদলগুলো আগেই জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচনে যাবে না। তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র জাতীয় পার্টিসহ ছোট ছোট দলগুলোসহ বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর ৩০০ আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৪১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীই চার শতাধিক। দলটি ২৯৮ আসনে দলীয় মনোনয়ন দিলেও দলের হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে অনেকে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ তার কৌশল হিসেবে আগেই দলের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানোর ঘোষণা দেয়। এর লক্ষ্য ভোটারের উপস্থিতি বাড়িয়ে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানো। ফলে যে যেভাবে পারছে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, যারা প্রার্থী হয়েছে, তাদের মধ্যে নির্বাচনী বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী, কতজন যোগ্য? নির্বাচনে সাজাপ্রাপ্ত, ঋণখেলাপীসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিযুক্ত হলে প্রার্থী অযোগ্য বিবেচিত হয়। এসব বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে সক্রিয় থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ খেলাপি প্রার্থীর তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তুলে ধরবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারা বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর তালিকা সংগ্রহ করেছে। এদের মধ্যে ঋণখেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ঋণখেলাপি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। মানোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের দিন হলেও খেলাপি ঋণ নবায়ন বা পরিশোধ করতে হবে।
বিগত একদশকে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় ও উপনির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। নানা অভিযোগ থাকলেও নির্বাচন কমিশন তা উপেক্ষা করে গেছে। নির্বাচনী শর্তপূরণ না করাসহ সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তরা নির্বাচন করেছে এবং নির্বাচিত হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটতে বেশি দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন অভিযোগ পেলেও তা উপেক্ষা করে দায়সারাভাবে কারণ দেখিয়ে বৈধতা দিয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধীদলের প্রার্থীদের সামান্য ছুঁতোয় প্রার্থীতা বাতিল করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ক্ষমতাসীনদলের প্রার্থীদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কাছে নির্বাচন কমিশন নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেসব প্রার্থী ক্ষমতাসীনদলের আনুকূল্যে প্রতাপশালী হয়ে উঠেছে, তাদের অনিয়মের কাছে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করলেও প্রতিকার মিলেনি। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রার্থীদের প্রতাপের কাছে টিকতে না পেরে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে গেছে। ফলে ওইসব প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিগত একদশকে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তাতে সৎ, দক্ষ ও সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার নজির খুব কমই সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদল ও তার স্বতন্ত্র কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে, যেখানে ভিন্নমত বা দলের প্রার্থীদের সুযোগ খুব কমই হয়েছে। এতে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ভোটারবিহীন ও একতরফা নির্বাচনের অপসংস্কৃতি শেকড় গেঁড়ে বসেছে। ভোটারদের মধ্যেও ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচনও সেরকম একটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সচেতনমহল ও ভোটারদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। বরাবরের মতো ক্ষমতাসীনদলের মনোনয়ন পাওয়া মানেই নিশ্চিত বিজয়, এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঋণখেলাপী, দুর্নীতিবাজ থেকে শুরু করে সন্ত্রাসীরাও এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ঋণখেলাপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ যথাযথ। তবে এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, ক্ষমতাসীনদলের কোনো প্রার্থী অভিযুক্ত হলে, তা নির্বাচন কমিশন নানা উছিলায় আমলে নেবে কিনা কিংবা তার দৃঢ়তা কতটা থাকবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় ক্ষমতাসীনদলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার আচরণবিধিই কেউ মানছে না, নির্বাচন আরো ঘনিয়ে এলে, তখন কি পরিস্থিতি হবে, তা সহজেই অনুমেয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, নির্বাচন বিশ্লেষকরা একে সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করলেও, নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কোনো কোনো নির্বাচন কমিশনারকে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি বলে সাফাই গাইতে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীনদল ও অন্যান্য প্রার্থীদের কেউ যদি ঋণখেলাপি হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থীতা বাতিল করার হিম্মত দেখাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা অমূলক নয়। অথচ বিধিঅনুযায়ী, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের প্রার্থীতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হিসেবে যাদের চিহ্নিত করবে, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থীতা বাতিল করবে। প্রত্যেক প্রার্থীর হলফনামা সূচারুভাবে যাচাই করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। পাশাপাশি যে প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করবে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিধিঅনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী