অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
সাত দিনের যুদ্ধবিরতির পর ফের ইসরাইল গাজায় হামলা শুরু করেছে। জল, স্থল ও আকাশÑ তিন দিক দিয়েই হামলা চলছে। এর আগে প্রধানত উত্তর গাজা ইসরাইলি হামলার প্রধান লক্ষ্যস্থল ছিল। তখন উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজায় দলে দলে মানুষ পালাতে থাকে। ইসরাইলি বাহিনী এখন দক্ষিণ গাজায় হামলা কেন্দ্রীভূত করেছে। এখন উত্তর-দক্ষিণ পুরো গাজা ইসরাইলি হামলার নির্বিচার শিকার। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক জানিয়েছেন, উপত্যকায় এখন আর নিরাপদ কোনো এলাকা নেই। গত রোববার ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। এসব এলাকায় যে হামলা হবে, এমন আশংকা ছিল স্থানীয় লোকজনের। কারণ, আগেই আশপাশের কয়েকটি এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছিল। উত্তর গাজার জয়তুন ও তেল আল জাতার এলাকায় দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। শরণার্থী শিবির আল জাবালিয়া, ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত একটি স্কুলসহ বাড়িঘর, স্থাপনা ইত্যাদি হামলায় বড় রকমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজা কর্তৃপক্ষ রোববার জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসাইলের হামলায় ৭শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। তাদের দুই তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। ইসরাইলি বাহিনীর এই বর্বর হত্যাকাণ্ডকে ইতোমধ্যে ‘গণহত্যা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকের মন্তব্য, গাজা এখন ‘মৃত্যুর উপত্যকা’। একে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। ইসরাইল যা-ই বলুক, তার কাজই প্রমাণ করে, একটি জাতিগোষ্ঠিকে সম্পূর্ণ নির্মূল, উম্মুল অথবা বিতাড়নই তার লক্ষ্য। এ পর্যন্ত গাজায় ১৮ লাখ বা ৮০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুৎ হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িঘর, ধ্বংস হয়েছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থান ও উপাসনালয় ধ্বংস অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই গণহত্যা, এই ধ্বংসকাণ্ডের লাগাতার প্রতিবাদ হচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে। এমন কি যুক্তরাষ্ট্রেও। সেখানকার অন্যান্য ধর্মের নাগরিকদের মতো ইহুদিরাও হামলা-হত্যার নিন্দা-প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোতে জনগণ পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তারপরও ইসরাইল হামলা, হত্যা ও ধ্বংস থেকে বিরত হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের উদ্যোগ ও মধ্যস্থতার সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। গাজার মানুষের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস এবং ইসরাইলের মানুষের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, যুদ্ধবিরতি প্রলম্বিত হবে এবং একসময় যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে। কিন্তু যুদ্ধ-বিরতির ঘোষিত সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরপরই ইসরাইল হামলা শুরু করে। গাজায় এখন যে বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দরকার। ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়। হামাসও বলেছে, হামলা বন্ধ না হলে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসবে না। এদিকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, গাজাবাসী ইতোমধ্যে যথেষ্ট ভুগেছে। জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলো। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ কাতারের রাজধানী দোহাই বৈঠকে বসছেন। বিশ্ববাসী নিশ্চিতই জানে, যুদ্ধবিরতির চেষ্টা-আলোচনা যতই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত ছাড়া ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে না। এ জন্য মূল ভূমিকা নিতে হবে যুদ্ধরাষ্ট্রকেই। অতীতের মতো এবারও ইসরাইলকে সব রকমের নিরংকুশ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নীতিগত সমর্থনের পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়মিত পাঠাচ্ছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইসরাইল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। তাদের সবকিছু ধ্বংস করছে। সম্প্রতি মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলে আবারো শক্তিশালী বাংকার ব্লাস্টার পাঠিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন। যুদ্ধবিরোধী বিশ্ববিবেকের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাইডেন প্রশাসন যা করছে তার অর্থ দাঁড়ায়, শুধু ইসরাইলই নয়, যুদ্ধরাষ্ট্রও গাজায় মানুষ হত্যার জন্য সমান দায়ী। অবশ্য সব কিছুরই একটা সীমা আছে, জবাবদিহি আছে। বাইডেন প্রশাসনকে একদিন এজন্য জবাব দিতে হবে, খেসারত গুনতে হবে। ইতোমধ্যেই খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে। এটা অথবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, বাইডেন প্রশাসনের অনেকে এখন ভিন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত শনিবার দুবাইয়ে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, গাজায় যত মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, যেসব ভিডিও ও ছবি আমরা দেখছি, তা ধ্বংসাত্মক।’ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন ক্যালিফোনিয়ায় প্রতিরক্ষা বিষয়ক এক ফোরামে বলেছেন, বেসামরিক লোকজনদের সুরক্ষা দেয়া ইসরাইলের নৈতিক দায়িত্ব।
অবশ্যই ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্রও এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। কারণ, এই একতরফা গণহত্যা ও ধ্বংসকাণ্ডে ইসরাইলকে প্ররোচনাসহ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রই। ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্ধসমর্থন ও সহযোগিতা তার জন্য মোটেও কল্যাণকর ও সম্মানজনক নয়। মধ্যপ্রাচ্যে শিখণ্ডি হিসাবে ইসরাইলকে টিকিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষায় হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে ইসরাইল। যখনই তার সমর্থন ও সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই ইসরাইল রাষ্ট্রের আর অস্তিত্ব থাকবে না। অথচ, যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলকে টিকিয়ে রাখা, সেই মধ্যপ্রাচ্যে তার আধিপত্য নিঃশেষিত প্রায়। মধ্যপ্রাচ্য তার মিত্র দেশগুলো একে একে তার নাগপাশ ছিন্ন করছে। তার ‘ইসরাইল নীতি’ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তার উচিত যুদ্ধ বন্ধ করা এবং বেসামরিক নাগরিক হত্যা রহিত করা। আমরা আশা করবো, বাইডেন প্রশাসন বিবেকের তাড়না অনুভব করবে এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এই সঙ্গে ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানে তার ভূমিকাকে জোরালো করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী