ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

নদ-নদী দখলমুক্ত করতে শক্তিশালী কমিশন জরুরি

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদসহ আশপাশে বেদখল হয়ে যাওয়া সব খাল ও নদনদী পুনরুদ্ধার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। নদী সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও জরিপ রিপোর্টের আলোকে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তিনি এই নির্দেশনা জারি করেন। জরিপ রিপোর্টের আলোকে বেদখল হওয়া নদনদী ও খাল পুনরুদ্ধারে ৭টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। গাজীপুর, সাভার, পূর্বাচল, কল্যাণপুর, কামরাঙ্গিরচর ও নারায়ণগঞ্জে চিহ্নিত হটস্পট টার্গেট করে নদী-খাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইভাবে সারাদেশে এই হটস্পট কৌশল অনুসরণে নদনদী ও খাল পুনরুদ্ধারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদনদী, খাল ও জলাভূমি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত করণে গত দেড় দশকে সরকার অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সংস্থার উচ্ছেদ অভিযানের পেছনে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আদতে কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। তা নাহলে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে নদী ও খাল পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা দিতে হতো না।

প্রায় একদশক ধরে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় স্থান পাচ্ছে। এজন্য মূলত নদনদীর দূষণ ও অপরিকল্পিত উন্নয়নকে দায়ী করা হয়। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত ঢাকার চারপাশের নদনদী পুনরুদ্ধার ও দূষণমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনার আলোকে গত দেড় দশকে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর দখল উচ্ছেদ ও সংরক্ষণে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে এ খাতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, নদীর সীমানা নির্ধারণ ও সীমানা পিলার স্থাপনের মাধ্যমে দখল উচ্ছেদ পরিচালনা ও সংরক্ষণে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকার কথা নয়। সীমানা পিলার স্থাপনে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির সুযোগে দখলদাররা সময় ক্ষেপণের সুযোগ লাভ করেছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা নিরসনের মাধ্যমে নদনদী ও খাল পুনরুদ্ধার জোরদারে নদীরক্ষা কমিশনের নিস্ক্রিয়তা পরিলক্ষিত হয়েছে। নদী ও জলাভূমি দখলদারদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নদীরক্ষা কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব নদী দিবসের একটি সেমিনারে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে সরকারের একজন মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছিলেন। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকি পাচ্ছেন বলে জানিয়ে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। নদনদী দখল ও দূষণের সাথে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমান থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের চুক্তি বাতিলের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আবারো স্পষ্ট হয়েছে। সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের নদীর তালিকা ও সীমানা নিয়েও সংশ্লিষ্ট অনেকের আপত্তি এবং ভুলত্রুটির অভিযোগ রয়েছে।

হটস্পট চিহ্নিত করে দখল পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। নদীসমূহের নাব্য রক্ষা, পুনরুদ্ধার ও দূষণমুক্তকরণের উপর আমাদের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং জনপদের বাসযোগ্যতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাত কিংবা আপসকামিতার কোনো সুযোগ নেই। নদী দখল ও দূষণের সাথে যে বা যারা যত প্রভাবশালী হোন না কেন, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। নদনদী দখল করে গড়ে উঠা সরকারি স্থাপনা যেমন উচ্ছেদ করতে হবে, তেমনি বেসরকারি স্থাপনাও উচ্ছেদ করতে হবে। নদীরক্ষা কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার আইনগত সক্ষমতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ প্রতিষ্ঠানে দক্ষ এবং যে বোঝে তাকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে। সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের দিকে না তাকিয়ে সক্ষমতা ও সাহসী ব্যক্তিদের নদীরক্ষা কমিশনে যুক্ত করতে হবে। দক্ষ ও অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে প্রভাবশালীদের তাবেদার, অপেশাদারদের নিয়োগ দিয়ে এ সংক্রান্ত মাস্টারপ্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনা, টাস্কফোর্স ও নদী কমিশনের সমন্বিত সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর ভয়াবহ দূষণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, দূষণ রোধে নানা রকম উদ্যোগ, অবৈধ দখল এবং উচ্ছেদের নামে ইঁদুর-বেড়াল খেলা অনেক হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। সরকারের মেয়াদের শেষপ্রান্তে এসে ঢাকার আশপাশের নদী ও সব খাল পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে, তা হবে সরকারের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী