গভীর সংকটের আশঙ্কায় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম
দেশে এখন সর্বাধিক আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। ইসির তথ্য মতে, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ১২৮ জন নারীসহ মোট ২,৭১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ২৯টি নিবন্ধিত দলের প্রার্থী ১,৯৬৪ জন ও বাকি ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। যাচাই-বাছাই শেষে ১,৯৮৫টি বৈধ ও ৭৩১টি বাতিল হয়েছে। বাতিলের ব্যাপারে ৫-৯ ডিসেম্বর আপিল চলবে, যা ১০-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ হবে। প্রার্থীরা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। নির্বাচনে আর্মি মোতায়েন থাকবে। দেশের প্রায় শতেক পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি পেয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রার্থী ও তাঁর কর্মীরা অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। কিন্তু কোথাও নির্বাচনের আমেজ সৃষ্টি হয়নি! অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হলে কিছু আমেজ তৈরি হবে। তবে, অতীতের মতো আমেজ সৃষ্টি হবে না। কারণ, দেশ-বিদেশের ব্যাপক আকাক্সিক্ষত নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্থলে ভোটারদের এক তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্বকারীদের নিয়ে এ নির্বাচন হচ্ছে! (আ’লীগের ৩০% এবং জাপা ও বাকীরা ৩%)। উপরন্তু এদেরও অধিকাংশই ভোট দিতে যাবে না নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় এবং নির্বাচন বর্জনকারীদের বাধার কারণে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি, জামায়াতসহ ডান- বাম মিলে ৬৩টি দল এই নির্বাচন বর্জন করে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে, যাদের সাকুল্যে সমর্থন মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের অধিক। তারা ভোট দিতে যাবে না। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা দলীয় কিছু একনিষ্ঠ লোকদের বিপুল উপঢৌকন দিয়ে সারাদিন ভোট কেন্দ্রে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখলেও মোট ভোট কাস্টিং নগণ্যই হবে, যদি অতীতের মতো দিনের ভোট রাতে না হয় কিংবা কেন্দ্র দখল করে ইচ্ছামতো সিল মারা না হয়! ফলে এই নির্বাচন একতরফা ও তামাসার নির্বাচনে পরিণত হবে। তাই জাতিসংঘ এই নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র ডুজাররিক। তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। টিআইবি বলেছে, ‘তফসিল ঘোষণার আগে ও পরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ বলতে যা বোঝায়, তা আমরা এবারও দেখতে পাচ্ছি না’। সাবেক ইসি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘বিএনপি ভোটে আসছে না। সরকারি দল আ’লীগ ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছে। আ’লীগ আর বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না’। তাই নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের শিডিউল বাতিল করে নতুন করে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করার কথা বলছে। এসব কথায় কান না দিয়ে সরকার ও ইসি নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি বলেছেন, দেশি-বিদেশি নানা চাপ, ষড়যন্ত্রের মধ্যেই নির্বাচন যথাসময়ে হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। ফলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে (জার্মান বেতার)। অপরদিকে, বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেছেন, এখন কিছু ক্রেতা এলসিতে শর্ত দিচ্ছে যে, নিষেধাজ্ঞায় পড়লে পণ্য নেবে না এবং জাহাজীকরণ হলেও মূল্য পরিশোধ করবে না।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হচ্ছেই। তবে তা অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। সরকারের একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। ফলে এ নির্বাচনও দেশ-বিদেশে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতোই। পণ্ডিতদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের নির্বাচনকালীন সংকট চলতেই থাকবে। স্মরণীয় যে, গত ২৮ অক্টোবর পরিকল্পিতভাবে বিএনপির ঢাকার সমাবেশ পুলিশ ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালিয়ে পণ্ড করার পর থেকে দলটির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও অবিশ্বাস্য গতিতে বিচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কারাদণ্ড প্রদান, বেশিরভাগ দলীয় অফিস বন্ধ, দুই কোটির মতো নেতাকর্মী পলাতক, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা ও আপনজনদের গ্রেফতার ইত্যাদি কারণে চরম দুর্দিন চলছে বিএনপির, যার নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এই অবস্থায় দলটির বেশিরভাগ লোকদের নানা প্রলোভন ও চাপ দিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে নব গঠিত কয়েকটি কিংস পার্টিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। কিছু দলত্যাগী ও বহিষ্কৃত এবং গুটিকয়েক অতি লোভী ব্যক্তি ছাড়া (৮ জন কেন্দ্রীয় ও ৬ জন আঞ্চলিক নেতা। তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একজন তো জামিন পাওয়ার পরের দিনই নৌকার টিকেট পেয়েছেন। যার দেন দরবার কারাগারে হয়েছে এবং জামিনও হয়েছে সে কারণেই বলে জনমনের ধারণা! এছাড়া, আ’লীগের এক নেতার নমিনেশন পেপার গ্রহণ করার পর সরকারি এক কর্মকর্তা তাকে বিজয় চিহ্ন দেখিয়েছেন। আ’লীগের মনোনয়ন পাওয়া অন্য এক নেতাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পুলিশের এক এসআই। এসব কর্মকাণ্ডে অনুমেয় যে, সরকারি সব জনবল আ’লীগের কর্মীতে পরিণত হয়েছে!) তেমন কেউ যায়নি। তাই দলগুলো সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে কিংস পার্টি সুপার ফ্লপ করেছে। একই অবস্থা হয়েছে যারা এমপি হওয়ার প্রলোভনে আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের। আ’লীগের দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গীরাও চরম হতাশ হয়েছে, আ’লীগ একাই সব আসনে দলীয় ও ডামি প্রার্থী দেওয়ায়। ২০১৪ সালের ন্যায় বেশিরভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়া ঠেকানোর জন্য এবার যারা দলীয় নমিনেশন পায়নি, তাদের আ’লীগ উৎসাহিত করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য। তাই এবার দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার কারণে পূর্বের ন্যায় কাউকে বহিষ্কার করেনি। ফলে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। জাপা আসন ভাগাভাগির সমঝোতা করার চেষ্টা করছে আ’লীগের সাথে। এটা সফল না হলে অধিকাংশ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আ’লীগের আসল প্রার্থী বনাম ডামি প্রার্থীর মধ্যে। তাই অন্য প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অবশ্য ব্যাপক দেন-দরবারের প্রেক্ষিতে ১৪ দলীয় জোটের কয়েকটি দলকে কিছু আসন ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে আ’লীগ। এ জোটের সমন্বয়ক বলেছেন, ‘নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, জাপার সঙ্গেও আলোচনা হবে। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে’। আ’লীগের জোট শরীকরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। কারণ, এককভাবে ও স্বীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জামানত রক্ষা করার অবস্থাতে নেই তারা। বিএনপি ভাঙ্গতে না পেরে আ’লীগের লোকরা চরম হতাশ হয়েছে আর বিএনপির লোকরা চাঙ্গা হয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলে হেরে গিয়ে জাপার রওশন এরশাদ ও তাঁর সঙ্গীদের সর্বনাশ হয়েছে! আ’লীগ থেকে অনেক হাইব্রিড নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা মর্মাহত হয়েছে। এবার নির্বাচনে আ’লীগ-জাপা সমঝোতা হলে জাপা পুনরায় সংসদের বিরোধী দল হবে আর সমঝোতা না হলে বিজয়ের ক্ষেত্রে আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হতে পারে। সেটা হলে সংসদের বিরোধী দলের আসনে কে বসবে? স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মিলিত হয়ে তা হতে পারে। তাহলে সংসদের সরকারি ও বিরোধী দল আ’লীগের হয়ে উদ্ভট গণতন্ত্র প্রবর্তিত হয়ে আরো নাজুক হবে। অবশ্য এটা আ’লীগের ঐতিহ্য। দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই গণতন্ত্র বিপাকে পড়ে! যা’হোক, জয়-পরাজয়ের এই হিসাব ওলট-পালট হতে পারে। কারণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির একটি প্রক্রিয়া চলছে। সেটা সফল হলে ইলেকশনের চেয়ে সিলেকশনই প্রাধান্য পাবে। দ্বিতীয়ত: আসন ভাগাভাগির/পাতানো নির্বাচনের সংসদ কতদিন চলবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ইসি নিরপেক্ষতার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই।
সিইসি বলেছেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাহির থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা (বিদেশি) থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, পোশাক শিল্পসহ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল করতে হবে। কারচুপি করা যাবে না’। দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং অধিকাংশ মিডিয়াও বলছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কারণে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। কারণ, তারা নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে বলছে। জাতিসংঘও একই কথা বলছে অনেক দিন থেকেই। তারা কেউই কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করেনি। তবুও আমেরিকা ও তার মিত্রদের নির্বাচন নিয়ে পরামর্শের কাউন্টার দিয়েছে চীন, রাশিয়া ও ভারত। চীন ও রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল। আর ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বলেছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য আ’লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসা দরকার, যা এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ! অবশ্য, আ’লীগের প্রতি ভারতের সমর্থন এটাই প্রথম নয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিনাভোটের ও রাতের ভোটের নির্বাচনও সমর্থন করেছে! এ মধুর সম্পর্কের কারণ হচ্ছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারত তার কাক্সিক্ষত সব কিছুই পেয়েছে কিছু না দিয়েও, যা বিশ্বে বিরল! আর সে কারণেই আ’লীগ দীর্ঘদিন যাবত ক্ষমতায় টিকে আছে। ভারতই আ’লীগের ক্ষমতার উৎস!
বাংলাদেশ থেকে স্বার্থ উদ্ধার নিয়ে চীন, রাশিয়া ও ভারত বনাম আমেরিকা ও তার মিত্রদের তীব্র লড়াই চলছে, যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, দেশের রফতানি, শিক্ষা, অনুদান ও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আমেরিকা ও তার মিত্রদের মুখাপেক্ষী বেশি। তাদের কাছ থেকে অর্থ ও শিক্ষা অর্জন হয় এবং উন্নতির সহায়তা আসে। আর চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে হয়, রফতানি হয় না। বিনিয়োগ কিছু আসে। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে আমদানির চেয়ে রফতানির গুরুত্ব বেশি। বিশেষ করে গার্মেন্ট, যা মোট রফতানির ৮৪% এবং যার প্রধান মার্কেট আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। সে মতে, শ্রমিকের অধিকার ক্ষুণ্নকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হবে। তাই, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের দুতাবাস দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছে, আমেরিকার নতুন শ্রমনীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া, সম্প্রতি প্রকাশিত জিএসপি নিয়ে ইইউ’র মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ফলে ইইউতে জিএসপি অব্যাহত রাখা হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কারণে চরম শংকায় পড়েছেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও আমেরিকার শ্রমনীতির কারণে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে এবং ইউরোপের জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে তা হবে বাংলাদেশে জন্য মরার উপর খাড়ার ঘার শামিল। কারণ, দেশে চলছে ব্যাপক ডলার, জ্বালানি ও রিজার্ভ সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন এবং রেমিটেন্স, রফতানি, বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাতে ভাটা, ভয়াবহ বেকারত্ব, উচ্চমাত্রার আয় ও সম্পদ বৈষম্য, দক্ষ জনবলের অভাব, সেকেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ও নিম্ন মান, বিপুল খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের অবস্থা নাজুক, শেয়ার বাজার পঙ্গু, কর জিডিপির হার নগণ্য, ব্যাপক দুর্নীতি, বিপুল অর্থ পাচার, ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, সুশাসনের অভাব। এছাড়া, অস্বাভাবিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ পরিবারে চলছে চরম হাহাকার! সর্বোপরি দেশ ঋণের ফাঁদে পড়েছে। মোট ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৪৫% ছাড়িয়ে গেছে। তবুও ঋণ গ্রহণ চলছেই! ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করতে নতুন ঋণ নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কারণে কিংবা মার্কিন শ্রমনীতি লঙ্ঘনের কারণে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইইউয়ের জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে তা সামাল দেওয়া কঠিন। এখন প্রায় লাগাতার হরতাল ও অবরোধ চলছে, যা নির্বাচনের পরও অব্যাহত থাকবে এবং তীব্রতর হবে। এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে! স্মরণীয় যে, ১৯৭৪ সালে আমেরিকা একটি খাদ্যের জাহাজ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়ে লাখ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছিল। এখন দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই বটে, তবে গার্মেন্ট রফতানি বন্ধ হলে দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী