বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব কাম্য নয়
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি এবং বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন রফতানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা। বাহ্যত শ্রমনীতি ও শ্রমিক অধিকারের কথা বলা হলেও আদতে এটি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পশ্চিমাদের আহ্বান ও প্রত্যাশা পুরণ না হওয়া, সরকারের একতরফা নির্বাচনের প্রচেষ্টা, অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপর দমন-পীড়নের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়েও সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সাথে রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পশ্চিমা স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং শতকরা ৮০ভাগ মানুষের প্রত্যাশাও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল নিশ্চিত করা মেয়াদ শেষে ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিরোধীদলের সাথে সংলাপ ও আপসরফা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। মূলত ক্ষমতাসীনদের একগুয়েমির কারণে আরেকটি একতরফা নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে চলেছে দেশ। ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন বলে জানা যায়। সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার ও শ্রম আইনের উন্নয়ন সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টদের বোঝানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। বিদ্যমান বাস্তবতায় এ বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই।
দেশের গার্মেন্ট রফতানিকারকদের মধ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক ভর করেছে। তাদের এই আশঙ্কা অমূলক নয়। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টরা এখনো মনগড়া কথাবার্তা বলে একতরফা নির্বাচনের ডামাঢোল বাজিয়ে চলেছেন। শুধু সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাই নয়, শীর্ষ আমলাদের কেউ কেউ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কোনো যুক্তি দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন। দু’দিন আগে বাণিজ্য সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরী হয়নি। তার এই বক্তব্য স্পষ্টতই বাস্তবতার অপলাপ ছাড়া কিছুই নয়। মাসের পর মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দৌড়-ঝাঁপ, নানাবিধ তৎপরতা, ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি, সবই হয়েছে একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বানকে ঘিরে। গার্মেন্ট সেক্টরে সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব এখনই পড়তে শুরু করেছে। গতকাল ইংরেজী দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়, সাম্প্রতিক ক্রয়াদেশে এলসি’র সাথে কিছু পশ্চিমা ক্রেতা একটি নতুন শর্ত যুক্ত করেছে, তা হচ্ছে; বাংলাদেশের উপর পশ্চিমা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি হলে ক্রেতারা পণ্যের মূল্য পরিশোধসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো দায় বহন করবে না। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে। আশঙ্কা মাথায় নিয়েই নির্বাচন করার ঝুঁকি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে লঙ্ঘিত হওয়ার বিষয়ে পশ্চিমাদের চাপ ও ক্রমবর্ধমান অভিযোগকে অগ্রাহ্য করায় বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনের আমন্ত্রণ তালিকা থেকে বাদ পড়ার পাশপাশি এলিট ফোর্স র্যাব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গুম-খুনের অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ তদন্ত না করে শুধুমাত্র লবিস্ট ও কূটনৈতিক চ্যানেলে দৌড়-ঝাঁপ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান কোনো কাজে আসেনি। ইতিমধ্যে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ব্যক্তিদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি বলবৎ হয়েছে। এতদসত্ত্বেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের আহ্বান অগ্রাহ্য করে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ৭ জানুয়ারী আরেকটি একতরফা নির্বাচনের আয়োজনকে সামনে রেখে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা ক্রমেই মূর্ত হয়ে উঠতে শুরু করলেও মন্ত্রীদের কেউ কেউ এ রকম কিছুই হবে না বলে মন্তব্য করছেন। সরকারের সংশ্লিষ্টদের ঊটপাখির মত বালিতে মাথা গুজে ঝড় পার করার চিন্তা মোটেও কাম্য নয়। তারা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পরিস্থিতি তৈরী হয়নি বলছেন বটে, কোন পরিস্থিতিকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পরিস্থিতি বলা যাবে এবং নিষেধাজ্ঞা হলে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, সে সম্পর্কে কিছুই বলছেন না। ভিসা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কার কথা হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে আমাদের গার্মেন্ট সেক্টরের প্রধান ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে। সেই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা স্থগিতের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের ভোটে ক্ষমতার পালাবদল সাধারণ রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা, গণগ্রেফতার ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে দন্ডাদেশ দিয়ে মাঠছাড়া করে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার বিষয় পশ্চিমা বিশ্ব মেনে নিচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে সাময়িকভাবে দাবিয়ে রাখতে পারলেও পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ভয়াবহ পরিনাম থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা সরকারের হাতে নেই। ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবেশের তরফে পাঠানো চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডামের আওতায় বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার নতুন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ অন্যতম টার্গেট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশিদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় অনেক বড় বড় অর্থনীতির দেশকেও মুখ থুবড়ে পড়তে দেখা গেছে। শতকরা ৮০ভাগ রফতানির ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোকে টেক্কা দিয়ে দেশের গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতিকে বড় ধরনের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়ার অপরিণামদর্শী চেষ্টা ও তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী