বিএসএফ’র বাংলাদেশি হত্যা বাড়ছে
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
সীমান্তে বিএসএফ’র বাংলাদেশী হত্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তা বিএসফ মানছে না। বরং বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও লালমনিরহাট সীমান্তে তিন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২২ জনকে এবং গত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ জনসহ মোট ২৫ জন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩ জন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৫০তম সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফ প্রধান রাকেশ আস্তানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। এই প্রতিশ্রুতির পরও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য পুনরায় সম্মত হয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। বিএসএফ কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ হাজার ১৫০ কিলোমিটার। ভারতের সাথে চীন, পাকিস্তান, নেপালের সীমান্ত থাকলেও এর কোনোটির সীমান্তে বিএসএফ সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের হত্যা করতে সাহস দেখায় না, যতটা সে বাংলাদেশী হত্যার ক্ষেত্রে দেখাচ্ছে। সেসব দেশের সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ড হয় না বললেই চলে। এর কারণ, ঐসব দেশের সীমান্ত বাহিনী কিংবা সরকার যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে থাকে। দুঃখের বিষয়, বিএসএফ প্রতি মাসে গড়ে দুই জনের বেশি বাংলাদেশী হত্যা করলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় না। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি কেবল প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত তার সব চাওয়া-পাওয়ার অবাধ ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশকে। যখন যেটা চাচ্ছে, তখন সেটা পেয়ে যাচ্ছে। তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে সহজ যোগাযোগ এবং মালামাল পরিবহনের করিডোর, সমুদ্র ও নৌবন্দর ব্যবহারের অবারিত সুবিধা পেয়েছে। বাংলাদেশকে তার অঙ্গরাজ্য সমূহের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম বানিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম বড় বাজারে পরিণত করেছে। দেশটির জনশক্তির আয়ের শীর্ষ পাঁচ দেশের একটি বাংলাদেশ। লাখ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ ভারতের চতুর্থ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের দেশ। প্রতি বছর প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার দেশটি বাংলাদেশ থেকে আয় করে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে একচেটিয়া সুযোগ নিচ্ছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। ভারত তিস্তা চুক্তি আজও করেনি। বাংলাদেশী পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। এমনকি, নেপালের সাথে স্থল যোগাযেগের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে যে প্রায় ২২ কিলোমিটার করিডোর রয়েছে, তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করছে। করিডোরটুকুর পূর্ণ সুবিধা পেলে নেপালের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অধিক সহজ হয়ে যেত। ভারত তা দিতে নারাজ। সে বাংলাদেশ থেকে তার সব চাওয়া পূর্ণ করবে, বাংলাদেশকে কোনো সুবিধা দেবে না। উল্টো সীমান্তে বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে মারছে। নৃশংসতার উদাহরণ হিসেবে কিশোরী ফেলানিকে হত্যা করে কাটাতারে বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল। প্রায় প্রতি মাসেই নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করে উল্লাস প্রকাশ করে। সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার কথা বলা হলেও বিএসএফ তা মানছে না। শুধু গুলি করে হত্যাই নয়, বাংলাদেশীদের তুলে নিয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন করেও হত্যা করছে।
বিশ্বের বহুদেশেই স্থলসীমান্ত রয়েছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেরই একটির সাথে আরেকটির স্থলসীমান্ত রয়েছে। সেখানো হত্যাকাণ্ড দূরে থাক নাগরিকদের কোনো ধরনের হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে হয় না। অথচ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে দুই দেশই এমনসব কথাবার্তা বলে যে, পৃথিবীতে আর কোনো দেশের সাথে যেন এমন সম্পর্ক নেই। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, রাখিবন্ধন এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্কের কথা বললেও ভারত বরাবরই বাংলাদেশের সাথে বিরূপ আচরণ করে চলেছে। এ কারণে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিদ্বেষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন এ বিদ্বেষ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, কোনো খেলায় ভারত হারলে বাংলাদেশের জনগণ উল্লাস প্রকাশ করে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারত সরকারের আচরণের কারণে দুই দেশের জনগণের মধ্যেও পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিদ্বেষের অন্যতম সীমান্ত হত্যাকাণ্ড। ভারতের উচিৎ বাংলাদেশের সাথে যে বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য আচরণ করছে, তা থেকে বিরত থাকা। বলা বাহুল্য, মানুষ হত্যা করে কখনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে না। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ, সীমান্ত হত্যাকাণ্ডসহ ভারতের সকল অন্যায্য আচরণের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী