মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৭ এএম
আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ সাল থেকে দিনটিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস পালিত হয়ে আসছে।
এই পৃথিবীর নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষের সমভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে যেসব অধিকার মানুষের জন্মগত, নৈতিক, আইনী, সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, তা-ই মানবাধিকার। অবিচ্ছেদ্য অধিকার যা সে ভোগ করবে এবং মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে সমমর্যাদায় জীবন অতিবাহিত করবে। অথচ, মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকে মানবাধিকার নিয়ে চলছে বাকবিতণ্ডা আর দ্বন্দ্ব-সংঘাত। আজ যখন সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে, তখন চলছে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানি আর মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত হওয়ার মহোৎসব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে মানবাধিকার রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথা, সেখানে তাদের ভূমিকা আজ হতাশাজনক ও প্রশ্নবোধক। সবল জাতি বা দেশগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশ ও জাতির উপর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন চালাচ্ছে। অসহায় ও নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করছে। এমনকি নারী ও শিশুদেরর রেহায় দিচ্ছে না। জ্বালিয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল পর্যন্ত। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান তো নেই-ই, বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ইরাক, ইউক্রেন, কাশ্মির ও মায়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানবাধিকারের নির্লজ্জ ও চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে চালানো হচ্ছে গণহত্যা। ঘর-বাড়ি হারিয়ে প্রতিদিন উদ্ভাস্তু হচ্ছে লাখো মানুষ। একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পাড়ি দিচ্ছে দেশের সীমানা। স্বার্থ আর ক্ষমতার মোহে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বমোড়লরা। একদিকে ‘মানবাধিকারের বুলি অন্যদিকে মানুষের মাথার খুলি’ এই যেন আজকের বাস্তবতা! মানবতা আর মানবাধিকারের বিচারে বিশ্ব আজ বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মানবাধিকার দিবস পালন আজ যেন আনুষ্ঠানিকতানির্ভর হয়ে অনেকটা অর্থহীন হয়ে পড়েছে। কাগজে-কলমে, সভা-সেমিনোরে, বক্তৃতা আর বিবৃতিতে সবাই মানবাধিকার কিংবা মানবতার কথা বলে বেড়ায়। বাস্তবে বিশ্বের একাংশ দেশ এবং সরকার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যেমন জড়িত, তেমনি যারা এই কাজে জড়িত তাদের ইন্ধনদাতাও বটে। যারা নিজেদের মানবাধিকারের রক্ষক মনে করে তাদের হাতেই আজ বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। পশ্চিমা রাষ্ট্র বা নেতারা মানবাধিকারের ব্যাপারে নিজেদের বেশি সোচ্চার মনে করলেও তা কেবল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই। নিজেদের পছন্দসই হলে অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে আর ভিন্ন মতাবলম্বী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা নিজেদের বলয়ের মধ্যে না থাকলে নেমে আসে কঠিন নির্যাতন আর নিপীড়ন। চাপিয়ে দেয়া হয় অসম যুদ্ধ, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে। এখন গাজায় চলছে ইসরাইলের নির্মম হত্যাকাণ্ড! নিরীহ মানুষের আর্তনাদে প্রকৃতিও স্তব্দ, বোমা আর গোলা-বারুদের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ফিলিস্তিনের আকাশ। অমানবিকতার নির্মমতায় গাজা এখন মৃত্যুর উপত্যকা। কোথায় মানবিক বিশ্ব আর মানবাধিকার! মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক নৃশংস হত্যাকাণ্ড পুরো বিশ্ব দেখলেও বিশ্বমোড়লরা আজও তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেনি, ফিরিয়ে দিতে পারেনি বাংলাদেশে আশ্রিত দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বিনা চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে মরছে ফিলিস্তিন, সিরিয়া আর ইয়েমেনের লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। তথাকথিত গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধ বাঁধিয়ে হত্যা করা হচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ এবং জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হচ্ছে দেশের পর দেশ।
একদিকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ব্যয় করা হয় প্রচুর অর্থ, অন্যদিকে যুদ্ধ বাঁধিয়ে ধ্বংস করা হয় মানবতা এবং অস্ত্র বাণিজ্য করে কোটি কোটি ডলার কামিয়ে নেয়া হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং পরাশক্তিধর দেশগুলো তৈরি করছে একের পর এক মানবতাবিধ্বংসী অস্ত্র। গড়ে তুলছে সমরাস্ত্রের কারখানা। এসব রাষ্ট্র বিভিন্ন অজুহাতে পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখে। অথচ, জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রথম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমমর্যাদার অধিকারী।’ তাহলে কোথায় আজ স্বাধীনতা আর সমমর্যাদা? বেঁচে থাকার অধিকারই যেখানে ব্যাহত সেখানে স্বাধীনতা ও সমমর্যাদা তো সুদূরপরাহত। জাতিসংঘ আজ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর তল্পিবাহক হয়ে অকার্যকর সংস্থায় পর্যবসিত হতে চলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ব্যর্থ।
লেখক: প্রাবন্ধিক, সৌদি আরব প্রবাসী।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী