তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম
সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০নং কূপের প্রাথমিক স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল তেলের প্রবাহ নির্ণীত হয়েছে। গত রোববার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি উল্লেখ করেছেন, তেল মজুদের তথ্য জানতে আরো চার-পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে। ওই কূপের তিনটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। দু’মাস আগে কূপটির খনন শুরু হয়। সিলেট-তামাবিল-জাফলং মহাসড়কের পাশে গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীগাঁও ইউনিয়নের বাঘের সড়ক এলাকায় অবস্থিত কূপটির খননকাজ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড কোম্পানি। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, প্রথম দিন দু’ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল তোলা হয়েছে। আপাতত উত্তোলন বন্ধ। ইতোমধ্যে তেল পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠানো হয়েছে। এই কূপে তেল ও গ্যাস মিলে জ্বালানির যে মজুদের ধারণা করা হচ্ছে, তাতে অন্তত ২০ বছর সুফল পাওয়া যাবে। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৮৭ সালে এই ক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তেলযুগে পদার্পণ করে। প্রথম কয়েক বছর তেল উত্তোলনের হার ছিল প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ ব্যারেল। পরে তা কমতে থাকে এবং ১৯৯৪ সাল নাগাদ উত্তোলন প্রতিদিন একশ ব্যারেলে দাঁড়ায়। ওই বছরই ওই ক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলন স্থগিত করা হয়। সাধারণত গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের পাশাপাশি তার উপজাত হিসেবে কিছু তেলও পাওয়া যায়, যাকে বলে কনডেনসেট। আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতেও পাওয়া গেছে এই তেল। তবে সিলেট গ্যাস ক্ষেত্রের ওই কূপে যে তেল পাওয়া গেছে, সেটা কনডেনসেট নয়। এটা কূপের এমন একটি আলাদা স্তর যেখানে শুধু তেলই আছে, গ্যাস নেই। এদিক দিয়ে বলা যায়, ১০নং কূপটি একাধারে গ্যাস ও তেলের খনি।
স্বতন্ত্র তেলখনি বা তেলক্ষেত্র দেশে আজো আবিষ্কৃত হয়নি, যদিও বলা হয়ে থাকে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের পাশাপাশি তেলেরও বড় রকমের মজুদ আছে। এদেশে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান ব্রিটিশ আমলে যেমন হয়েছে, পাকিস্তান আমলেও হয়েছে। এসব অসুন্ধানে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। স্বাধীনতার পর সোভিয়েট বিশেষজ্ঞরা এব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক অসুসন্ধান চালান। তাদের অনুসন্ধানেও ধরা পড়ে দেশে আশাতীত মজুদ আছে তেল-গ্যাসের। তখন এরকম একটা কথা চালু হয় যে, বাংলাদেশ তেল-গ্যাসের ওপর ভাসছে। মনে পড়ে, দৈনিক ইনকিলাবের সহযোগী প্রত্রিকা ‘সাপ্তাহিক পূর্ণিমা’র কোনো এক সংখ্যায় ইনকিলাবের মহাসম্পাদক এ কে এম মহিউদ্দীনের এ সংক্রান্ত একটি লেখা ছাপা হয়। ওই লেখাটিতে তেল-গ্যাসের বিশাল মজুদের কথা বলা হয়। বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে তেলের একটি নদী আছে, যার সবচেয়ে গভীর এলাকা বাংলাদেশের ভাগে পড়েছে। আমরা জানি না, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের রিপোর্ট সরকারের কাছে আছে কিনা। স্বাধীনতার পরপরই তা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সরকারই এ অভিযোগের সত্যাসত্য বলতে পারবে। সোভিয়েট বিশেষেজ্ঞদের অসুন্ধান রিপোর্ট কী অবস্থায় আছে, সেটাও সরকারই বলতে পারবে। বর্ণিত অনুসন্ধান রিপোর্টগুলোর ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান তৎপরতা চালালে অবশ্যই অর্জিত সুফলের চেয়ে অনেক বেশি সুফল পাওয়ার কথা। স্বাধীনতার পরের সরকারগুলোর অধিকাংশ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে তেমন একটা গরজ দেখায়নি। স্থলভাগে কিছু গ্যাস অনুসন্ধান ও কূপ খনন হলেও তেল অনুসন্ধান একেবারেই বাদ পড়ে আছে। অন্যদিকে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানেরও কোনো উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেয়াই হয়নি। সাগর ভাগাভাগির পর ভারত ও মিয়ানমার তাদের অংশে তেল-গ্যাস পেলেও আমরা জরিপই শুরু করতে পারিনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা প্রায় দেড় দশক ক্ষমতায় আছেন এবং তাদের আমলেই সাগরের ভাগাভাগি হয়েছে। অথচ, এসময়ে স্থলে-সাগরে কোথাও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর বদলে তেল-গ্যাস আমদানিতে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে বা হচ্ছে। কেন এই দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি, তার কোনো পরিষ্কার জবাব নেই।
জ্বালানির ক্ষেত্রে আমাদের দেশ প্রায় সর্বাংশে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। তেল তো পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এখন গ্যাসও আমদানি করা হচ্ছে। এলএনজি আকারে এই আমদানি ক্রমাগত বাড়ছে। তেল-গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল নয়। যুদ্ধসহ নানা কারণে মাঝে মাঝেই এ বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানিবাণিজ্য ব্যহত হয়েছে। দাম বেড়েছে দফায় দফায়। আর এই উচ্চ দামেই আমাদের তেল-গ্যাস কিনতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে। রিজার্ভ কমে গেছে অবিশ্বাস্যরকম। এমতাবস্থায়, জ্বালানি আমদানির ডলার জুটছে না। বিভিন্ন দেশের কোম্পানির কাছে দায় দেনা বাড়ছে। তারা ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বকেয়া না পরিশোধ করলে তারা জ্বালানি দিতে পারবে না। এদিকে তেল-গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। শিল্প-কারখানার মালিকরা গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্যক পর্যায়ে গ্যাস সংকট তীব্র হচ্ছে। সদ্য প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব ও উচ্চমূল্যের কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বলা বাহুল্য, উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পণ্যাদির দামও বাড়বে, যা কার্যত ভোক্তাদেরই বহন করতে হবে। এমনিতে লাগাতার মূল্যস্ফীতির কারণে অধিকাংশ মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এরপরও পণ্যমূল্য বাড়লে তাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়বে। দেশে জ্বালানিনিরাপত্তা থাকলে এসব দুর্ঘটে পড়তে হতো না। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পদ মাটির নিচে ও সাগরের তলে পড়ে থাকলে কোনো লাভ নেই। তাকে উন্নয়ন, উৎপাদন ও জনকল্যাণে কাজে লাগতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী