ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মোচনের দিকে নজর দিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে ভয়াবহ টানপড়েন সৃষ্টি করেছিল। সে সময় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অসংখ্য কর্মজীবী বেকার হয়ে পড়ে। সংসার খরচ কুলিয়ে উঠতে না পারায় অনেক পরিবার রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। সেখানে গিয়েও টানাপড়েন থেকে রক্ষা পায়নি। পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের বৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ার ধাক্কা দেশেও লাগে। হু হু করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। সরকারও এজন্য ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে। তবে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য কমে গেলেও দেশে তার প্রভাব পড়েনি। একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কবলে বাজার চলে যায়। তারা প্রতিটি নিত্যপণ্যের মূল্য দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সিন্ডিকেটকে দায়ী করে। এ কথাও বলে, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রশ্রয় পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে চলেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সিন্ডিকেটের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সিন্ডিকেট সরকারকেও তোয়াক্কা করছে না। যেখানে সরকার ব্যর্থ হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়ার আর জায়গা থাকে না। একদিকে সরকার ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিচ্ছে, অন্যদিকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমতাবস্থায়, ক্রেতা- ভোক্তারা সম্পূর্ণ অসহায় ও নিরূপায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যখন এ কথা বলেন, তখন তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের জন্য এ এক দুঃসংবাদ। বর্তমানে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে যে অসহনীয় পরিস্থিতি চলছে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হলে কি হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। কোটি কোটি মানুষের একবেলা-আধাবেলা খেয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়বে। দেশের অর্থনীতি যে ভালো অবস্থায় নেই, তা গত এক বছরের অধিক সময় ধরেই বোঝা যাচ্ছে। উন্নতি হবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সরকার কৃচ্ছ্রসাধন প্রক্রিয়া অবলম্বন করেও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের নি¤œগামিতা ঠেকাতে পারছে না। আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকট, ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট, রফতানি কমে যাওয়া, রিজার্ভের নি¤œমুখিতা অর্থনীতিতে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আইএমএফসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েও সরকার তা সামাল দিতে পারছে না। অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতেও অর্থপাচার, দুর্নীতি, লুটপাট থেমে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, রফতানির ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে আসেনি। এর অর্থ হচ্ছে, রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নানা প্রক্রিয়ায় অর্থপাচার হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সাধারণ মানুষ যে সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে রয়েছে, তা দুর্ভিক্ষের আলামত নির্দেশ করে। সরকার যদি তা ঠেকাতে না পারে, দুর্ভিক্ষ অবশম্ভাবী হয়ে পড়বে। যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে, সেখানেও রেহাই পাবে না। সার্বিক অর্থনীতিই যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তা থেকে সাধারণ মানুষের বাঁচার পথ নেই। বহুদিন ধরেই তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। অনেকে খাবার কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তিনবেলার জায়গায় দুইবেলার খাবার কিনতেও তাদের সাধ্যে কুলাচ্ছে না। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে পারছে না। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীনতার মধ্যে পড়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এখন নি¤œ ও মধ্যবিত্তের মধ্যে পার্থক্য কমে গেছে। নি¤œবিত্ত দরিদ্র, মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। কর্মসংস্থানের খাত কমে যাওয়ায় বেকার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বহু প্রতিষ্ঠান নতুন নিয়োগের পরিবর্তে বিদ্যমান লোকবল কমাচ্ছে। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে কর্মরতদের বেতন দিতে পারছে না। বিনিয়োগ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে শিল্প ও কর্মসংস্থানে সৃষ্টি হয়েছে বন্ধ্যাত্ব।

বাজারে গেলে সাধারণ মানুষের মাথায় হাত দেয়া ছাড়া গতি থাকে না। প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে না পেরে মলিন মুখে তাদের ফিরতে হচ্ছে। বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, খাওয়ার খরচ, নিজে চলার খরচ কিভাবে যোগাবে, এ ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিন দিন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তা ঠেকানোর কোনো পরিকল্পনা ও উদ্যোগ সরকারের আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। সরকার টিসিবির মাধ্যমে কমদামে পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা কেনার মতো সামর্থ্যও অনেক মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। টিসিবির ট্রাকের সামনে এখন নি¤œবিত্তের চেয়ে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেশি। মধ্যবিত্তরা নি¤œবিত্তের জায়গায় চলে এসেছে। নি¤œবিত্তরা হা-হুঁতাশের মধ্যে পড়ে গেছে। এসব দেখার যেন ফুরসত নেই সরকারের। সরকার এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তার সব মনোযোগ নির্বাচনের দিকে। যে নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দেবে বলে প্রত্যাশা করছে, তারা যে ঠিকমতো খেতে পারছে না, ক্ষুধা নিয়ে জীবনযাপন করছে, সেদিকে খেয়াল নেই। সরকার মনে করছে, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর দেখা যাবে। অথচ সে সময় যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হয়েছে, তা সামাল দেবে কি করে, তার কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। সরকারের হাতে এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, রাতারাতি অর্থনৈতিক দুর্দশা পরিবর্তন করে দিতে পারবে। যেখানে সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ ঠেকাবে কি করে? অথচ সরকার শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগে বিরোধীদলের আন্দোলন দমাতে কোনো ত্রুটি না করলেও যে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, তা দমাতে পারছে না। প্রতাপশালী সরকার যেন সিন্ডিকেটের সামনে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। সরকারের এই দ্বিমুখী নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আশা করব, সরকার সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার দিকে অনতিবিলম্বে নজর দেবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী