অর্থনৈতিক দুরবস্থা ঠেকাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
আগামী জাতীয় নির্বাচনের ঢামাঢোলের মধ্যে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চরম মন্দাবস্থার চিত্রটি অনেকটা আড়ালে চলে গেছে। এর মধ্যেই গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গার্মেন্ট খাত, ব্যাংক খাত, আমাদানি ও রফতানি খাতসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনীতির এ ক্ষয়িষ্ণুচিত্র আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের অশনিসংকেত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের ঝুঁকিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইনকিলাবের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শরীয়াভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকে চলতি হিসাবের ঘাটতির কারণে লেনদেনসেবা বন্ধের পথে রয়েছে। এসব ব্যাংকে তারল্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। একটি ইংরেজি দৈনিকসহ অন্য একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক মিলিয়ে ১৪টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অনিয়মের কারণে এসব ব্যাংকে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ধাপে ধাপে প্রভিশন সংরক্ষণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ছাড়ের পরও মূলধন ঘাটতি থেকে ব্যাংকগুলো বের হতে পারছে না। আরেকটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে মোট আমানতের প্রবাহ সামান্য বাড়লেও চলতি হিসাবে বা যেকোনো সময়ে উত্তোলনযোগ্য হিসাবে আমানতের স্থিতি নি¤œমুখী। অর্থনৈতিক সমস্যায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় জীবনযাত্রার মান কমেছে। এতে মানুষের টাকা খরচ যেমন কমেছে, তেমনি ব্যাংক থেকে সহজে টাকা তোলার হিসাবে জমার স্থিতি কমেছে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে চরম মন্দাবস্থা। দৈনিকে ইনকিলাবের আরেকটি প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি ঋণের পরিমান ৯৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ ঋণ ক্রমেই বাড়ছে এবং তা একসময় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, গার্মেন্ট খাতে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক মজুরি নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। গত ১৫ ডিসেম্বর দেশটির ৮ কংগ্রেস সদস্য চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিকে সমর্থন জানানোর জন্য আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। চিঠিতে তারা পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার ও পোশাক প্রস্তুতকারকদের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলেছেন।
অর্থনীতিতে যে ভয়াবহ মন্দাবস্থার আলামত দেখা দিয়েছে, তা ভঙ্গুর ও নাজুক অর্থনীতিকেই নির্দেশ করে। অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রতি সরকারের তেমন মনোযোগ আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। সরকারের সব মনোযোগ এখন নির্বাচনের দিকে। সরকারের মনোভাব এমন যে, নির্বাচন পার করে নিই, তারপর সবকিছু দেখা যাবে। এর মধ্যে যে অর্থনীতি ঝুরঝুরিয়ে পড়ে যাচ্ছে, তা উপলব্ধি করতে পারছে না। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অর্থনীতির এই অবনমন বহু আগেই শুরু হয়েছে। এখন তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ঠেক দেয়ার উদ্যোগ না নিলে অচিরেই হুড়মুড় করে পড়ে যাবে। তখন তা তুলে ধরা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব বাণিজ্যের ওপর নানা ধরনের নেতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারে, যা মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে। মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা পোশাক খাতে শ্রমিক মজুরি নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য ও চিঠি চালাচালি করছে, তা নেতিবাচক পদক্ষেপক্ষে আরও উসকে দেবে। দেখা গেছে, কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আগে দেশটির প্রতিনিধি ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এ ধরনের কথাবার্তা বলে থাকে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই কথা বলে আসছে, যা কোনোভাবেই ভালো বার্তা বহন করে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক খাতে দীর্ঘদিন ধরে অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট, রিজার্ভ কমে যাওয়া, রেমিট্যান্সে ভাটার মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি চলছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রফতানিকারকরা এলসি খুলতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকে খরচ বাঁচাতে রাজধানী থেকে পরিবারকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অসংখ্য মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছে না। তিনবেলার খাবার দুবেলায় নামিয়ে এনেছে। এতে বিশেষজ্ঞরা দেশে পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আয়ের সাথে ব্যায় সংকুলান করতে না পেরে অনেক মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে এবং নি¤œবিত্ত দরিদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দেশের দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং যখন এ কথা বলেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, অর্থনীতি কতটা ভয়াবহ ও সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। রিজার্ভের ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ ও অন্যান্য কিছু উদ্যোগের কারণে কিছুটা পতন ঠেকানো গেলেও তা কতদিন ধরে রাখা যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক ধস সামাল দেয়ার মতো যে ধরনের জোরালো ও সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া দরকার তা দৃশ্যমান নয়। এর ফলে অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে এক গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং তা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
অর্থনীতির প্রায় সব খাতের ঋণাত্বক, ঝুঁকিপূর্ণ ও টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকারের মধ্যে তেমন কোনো বিচলন দেখা যাচ্ছে না। এর কুফল যে স্বল্প সময়ে ভয়াবহ আকার ধারন করবে, তা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র বাংলাদেশে নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব বাণিজ্যিক ও অন্যান্য নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে যে আরব বসন্ত বইয়ে দেয়ার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন, তা যদি না-ও হয়, সাধারণ মানুষ জীবনযাপন নিয়ে যে দুর্দশার মধ্যে রয়েছে তাতেই তারা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। তখন অটোমেটিক্যালি আরব বসন্ত হয়ে যেতে পারে। নির্বাচনী তোড়জোড়ের মাধ্যমে কিংবা উটপাখির মতো বালুতে মুখ গুঁজে ঝড় উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে জনদৃষ্টি আপাতত ঘুরিয়ে রাখা হলেও নির্বাচনের পর যে তা ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়বে, তার সব আলামত ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্বাচনের পরের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সরকারকে এখনই খাতভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নিয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন