ছিনতাই, চাঁদাবাজি-দস্যুতা বন্ধ করতে হবে
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
গত কিছুদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও সহিংস ঘটনা বেড়ে গেছে। গত দেড় দশক ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক শাসনের মধ্য দিয়ে এক ধরণের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান রয়েছে। এমতাবস্থায় দেশে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন হওয়ার কথা থাকলেও বিপরীত বিপরীত পরিস্থিতিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশিত এনালাইসিস বিডি’র এক অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১০ বছরে দেশে ৩৭ হাজার ৮৯৪টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলেই ধরে নেয়া যায়। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব হত্যাকান্ডের বেশিরভাগই সংঘটিত হয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হাতে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় বেশিরভাগ মামলায় অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি এবং দশবছরে খুনের মামলার ৭০ শতাংশই নিস্পত্তি হয়নি। এভাবেই দেশে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে কেউই নিরাপদ নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা অনেকটা কমে আসলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা এখনো চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
গত সপ্তাহে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে গত তিন বছরে রাজধানীতে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার তথ্য উঠে আসে। মূলত ডিএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। ডিএমপি’র তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে রাজধানীতে ডাকাতির মামলা হয় ২৩টি এবং দস্যুতার মামলা হয় ১৪৫টি। ২০২৩ সালে ডাকাতির মামলা ৩৪টি এবং দস্যুতার মামলা ১৯৯টিতে উন্নীত হয়। সারাদেশের পরিস্থিতি একইভাবে অবনতিশীল। গতকাল সহযোগী দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকায় সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান বেরিয়ে এসেছে তা খুবই উদ্বেগজনক। জননিরাপত্তা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বদলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, ধরপাকড় ও হয়রানিতে ব্যস্ত রাখার কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ মানুষের ধারণা। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি’র একজন সাবেক কমিশনারের মন্তব্যে বলা হয়, ‘ প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা গেলে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’ সরকারের সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদার ভূমিকা ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
দেশে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যানগুলো মিথ্যা নয়। পরিস্থিতির সামগ্রিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করে অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সরকারের সংশ্লিষ্টরা ধারাবাহিকভাবে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষণা জরিপের তথ্য-উপাত্ত অগ্রাহ্য করে পাল্টা আক্রমণ করে চলেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দুর্নীতির সুূচকে বাংলাদেশের এবার দুই ধাপ পিছিয়ে দশম অবস্থানে নেমেছে। দুর্নীতি কমিয়ে আনা এবং সুশাসন নিশ্চিতের নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামীলীগ সরকার টিআইবি রিপোর্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই যেন বেশি আগ্রহী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, টিআইবি’র অভ্যন্তরে দুর্নীতি আছে কিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। মূলত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দুর্নীতি, জননিরাপত্তা, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও খুনের সংখ্যাবৃদ্ধির ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগই সরকারের কাছে জনগণ প্রত্যাশা করে। কোনো সংস্থা বা রাজনৈতিক ব্লেইম গেম দিয়ে অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। গতকাল আরেকটি সহযোগী দৈনিকে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও অর্থনীতিবিদদের মতামতের আলোকে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্য ও সুশাসনের ঘাটতি অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধান বাধা। অবস্থার উন্নয়নে তারা সরকারের করণীয় বা যে সব সুপারিশ তুলে ধরেছেন, তা কোনো নতুন বিষয় নয়। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগিদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকেনা। চোখ বন্ধ করে সবকিছু অস্বীকার কিংবা অগ্রাহ্য করে অবস্থার পরিবর্তন অসম্ভব। এ বিষয়ে সরকারকে সঠিক পর্যালোচনা এবং ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টার্গেট ১৬৫,'খুনে' হায়দরাবাদ জিতল দশ ওভার আর দশ উইকেট হাতে রেখেই !
ডোনাল্ড লু’র সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২ বছর অপেক্ষা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের
ভারতের রক্তাক্ত নির্মমতায় নিশ্চুপ প্রধানমন্ত্রী: রিজভী
ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল
আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২
বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক
বিএসইসিতে নতুন তিন কমিশনার নিয়োগ
গোমর ফাঁসে কামড়াকামড়ি
সরকারের চলতি মেয়াদে ৬০ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট : প্রতিমন্ত্রী
সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট সাংবাদিকদের
ফুলপুর উপজেলায আ'লীগ নেতা হাবিবুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ভাইস চেয়ারম্যন সবুজ ও পান্না
নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই কেন্দ্রে ভোটারের আকাল : মেজর হাফিজ
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ
৪৮ বছরে বিদেশ গেছে এক কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার কর্মী
ঢাবি প্রফেসর বাহাউদ্দীনের চৌর্যবৃত্তি তদন্তে কমিটি গঠন
আটোয়ারীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.আনিছুর রহমান
মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন জুলাইয়ে
জাইকার উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বৈঠক