ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনকে যেভাবে আরও জোরালো করা যায়
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৯ এএম
গত কয়েক সপ্তাহে উপসম্পাদকীয়তে বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’, ‘ভারতীয় পণ্যবর্জন’ ক্যাম্পেইন এবং বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আধিপত্যবাদ, আগ্রাসী ও অন্যায্য আচরণ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখার কারণে ফোনে আমাকে অনেকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানিয়েছেন। যারা জানিয়েছেন, তাদের ভারভারিক্কি যথেষ্ট। তাদের বলার মধ্যে ভারতের প্রতি মনে জমে থাকা ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে। যেন তাদের মনের কথাগুলোই উপসম্পাদকীয়তে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থকও রয়েছেন। গত সপ্তাহে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আওয়ামী লীগ ঘরানার এক জাঁদরেল সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ইনকিলাব কি নীতি পরিবর্তন করেছে? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, কেন? তিনি বললেন, ভারতের বিপক্ষে বেশ ভাল প্রতিবেদন ও উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করছে। এটা বেশ ভাল লাগছে। এ সময়ে এটা ধরে রাখা খুব জরুরি। এজন্য বাহাউদ্দীন ভাইকে (ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন) ধন্যবাদ দিতে হয়। আমি বললাম, ইনকিলাব জন্মলগ্ন থেকেই দেশ ও জাতি এবং ইসলামের স্বার্থে আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয় না। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত আমাদের সাথে যে আগ্রাসী, আধিপত্যবাদী ও অন্যায্য আচরণ এবং নিজ দেশে মুসলমানদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ইনকিলাব সবসময়ই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। আর কোনো পত্রপত্রিকাকে কি এ ধরনের ভূমিকা পালন করতে দেখেছেন? শুধু ভারত কেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে বিশ্বের যেখানেই পরাশক্তিগুলো অন্যায়ভাবে আক্রমণ করে দেশ ধ্বংস এবং মুসলমানদের হত্যা করেছে ও করছে, তার বিরুদ্ধেও ইনকিলাব সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এজন্য ধন্যবাদ ও সাধুবাদ দেয়া উচিৎ ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনকে। তিনি আমার সাথে একমত পোষণ করে বললেন, ইনকিলাবের এ ভূমিকা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। বললাম, ইনকিলাব ও তার সম্পাদক সবসময়ই এ ভূমিকা পালন করছে এবং করে যাবে।
দুই.
ভারতের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া আউট ও পণ্যবর্জনের যে ক্যাম্পেইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে, তা দেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। তাদের মধ্যে একধরনের প্রতিরোধমূলক মনোভাব জেগেছে। এর ঢেউ এখন ভারতের প্রতি দুর্বল আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যেও লেগেছে। তারা যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে। ভারতের দাদাগিরি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে। ভারতকে সমর্থন দেয়াদের মধ্যে যখন ভারতবিরোধী মনোভাব জেগে উঠে, তখন বুঝতে হবে, ভারত যুগের পর যুগ ধরে বাংলাদেশের সাথে যে আচরণ করে আসছে, তা তারা এখন মেনে নিতে পারছে না। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলা ভারতবিরোধী ক্যাম্পেইনের ধাক্কা লেগেছে দেশটির ইউটিউবার ও ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে। এমনকি, ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও তার আঁচ লেগেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরকেও বাংলাদেশের মানুষের ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি ডিপ্লোমেটিক্যালি একে ‘গেইম’ বলে এড়িয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের যেসব ইনফ্লুয়েন্সার ইন্ডিয়া আউট ও পণ্যবর্জনের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে, তাতে ভারতের অ্যাক্টিভিস্টদের আঁতে বেশ ঘা লেগেছে। তারা এখন প্রচারণা চালিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে আখ্যায়িত করছে। ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে, বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ভারতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, কেনাকাটা করতে যায়, ক্রিকেটে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে, আইপিএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেলে অনেক টাকা নিয়ে যাচ্ছে, ভারতের খাবার খেয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেঁচে আছে ইত্যাদি নানা কথা বলছে। তারা যেটা বলে না, তা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, শপিং ‘মাগনা’ করে না। সেখানে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। তাদের শপিং মল, দোকান-পাট, হাসপাতালগুলোর ব্যবসার বড় একটি উৎস বাংলাদেশের মানুষ। সেখানের মার্কেট ও হাসপাতালগুলো অনেকটা তীর্থের কাকের মতো বাংলাদেশের ক্লায়েন্টদের জন্য অপেক্ষা করে। বড় বড় হাসপাতাল বাংলাদেশে তাদের কন্টাক্ট সেন্টার খুলে বসে আছে। চিকিৎসার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা প্রচার করছে। তাদের পণ্যের প্রসারে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। বাংলাদেশ যে তাদের রেমিট্যান্স আহরণ ও পণ্য রফতানিতে চতুর্থ বৃহৎ দেশ এবং তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে যাতায়াত ও পণ্যপরিবহনের জন্য করিডোর, স্থলপথ, নৌপথ ও সমুদ্রবন্দর কোনো স্বার্থ ছাড়া দিয়ে দিয়েছে, এ কথাগুলো তারা বলে না। বাংলাদেশ যদি মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন না হতো, তাহলে কি তারা এ সুযোগ-সুবিধা পেত? তারা কি স্বস্তিতে থাকতে পারত? তারা প্রশ্ন তুলেছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিলে কি অবস্থা হবে? তারা এটা জানে না, ভারত বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। গরু রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে বাংলাদেশের মানুষ অচল হয়ে যায়নি। বরং বাংলাদেশের কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। খামারিরা গরু লালন-পালন করে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। এখন আর কোরবানির জন্য বাংলাদেশকে গরু আমদানি করতে হয় না। দেশি গরু দিয়ে কোরবানি দিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বরং ভারতেরই ক্ষতি হয়েছে। এখন তারা নানা ছুঁতোয় গরু ও ফ্রোজেন গোশত রফতানি করছে। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে তাদের পণ্য রফতানি বন্ধ, ভ্রমণ, চিকিৎসা, শপিং ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা কি জানে, এসবের মাধ্যমে ভারত কি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে? তাদের জানা উচিৎ যে, প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য ভারতে গড়ে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি যায়। এতে ভারতের আয় হয় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পর্যটনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে যায়, যা দেশটির পর্যটনের শতকরা ২০ ভাগ। সেখানে গিয়ে একজন বাংলাদেশি পর্যটক গড়ে চার-পাঁচ দিন অবস্থান করে। এ সময়ের মধ্যে সে গড়ে দশ হাজার রুপি খরচ করে। এ থেকে ভারত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ভারতীয়রা বছরে দশ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যায়। বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় বৃহৎ রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ। প্রতিবছর লাখ লাখ বাংলাদেশি কলকাতাসহ অন্যান্য শহরে শপিং করতে যায়। শুধু কলকাতায়ই প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি শপিং করে। প্রতি ঈদে গড়ে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি শপিংয়ে যায়। এসব বাংলাদেশি গড়ে এক হাজার ডলার বা এক লাখ ১৫ হাজার টাকার শপিং করে। এফবিসিসিআই-এর মতে, অনেক বাংলাদেশি পাঁচ হাজার ডলারের বেশি শপিং করে। দুই ঈদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় হাইকমিশন তাদের ব্যবসার স্বার্থে ভিসার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। কলকাতার ব্যবসায়ীরা সারাবছর বাংলাদেশি ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষায় থাকে। তাদের মূল ক্রেতা বাংলাদেশি। এখন যদি বাংলাদেশের পর্যটক, রোগী এবং পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা ভারতে না যায়, কিংবা যেসব ভারতীয় বলছে, বাংলাদেশিদের ভারতে না যেতে, তখন ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা কি তারা ভেবে দেখেছে?
তিন.
ভারত বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে যে অন্যায্য ও অন্যায় আচরণ করছে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটাক্ষ কিংবা অস্বীকার করার মনোভাব পোষণ করছে, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিবাদমুখর হয় উঠা। যেভাবে মালদ্বীপের মতো ছোট ও স্বল্প জনসংখ্যার দেশ ভারতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ভারতের খবরদারির তোয়াক্কা করছে না। এসব দেশ যদি পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? সরকার নতজানু হতে পারে। তবে বাংলাদেশের মানুষ কখনোই নতজানু হয়নি। এদেশে অনেক শাসক জনগণকে নোয়াতে চাইলেও পারেনি। শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছেই তাদের পরাস্ত হতে হয়েছে। জনগণেরই বিজয় হয়েছে। বর্তমান সরকার ভারতের তোয়াজ করলেও তাতে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি জনগণের সমর্থন নেই। কোনো না কোনো সময় জনগণের ভারতবিরোধী মনোভাবের কাছে সরকারকে মাথা নোয়াতে হবে। এখন জনগণের মধ্যে ভারতীয় পণ্যবর্জন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে যে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকাশিত হচ্ছে, তা ‘টিপস অফ আইসবার্গ’ বা হিমশৈলীর চূড়ামত্র। এই চূড়া ক্রমেই উঁচু থেকে উঁচু হবে। সেই চুড়ায় দেশের জনগণই থাকবে। এখন পণ্যবর্জন ক্যাম্পেইন চলছে, এ ধারাবাহিকতায় চিকিৎসা, শপিং, ভ্রমণ বর্জন বেগবান হবে। কারণ, ভারতের বিকল্প হিসেবে উপমহাদেশসহ অন্যান্য দেশে রয়েছে। চিকিৎসায় আমাদের দেশ অনেকদূর এগিয়েছে। ক্যান্সার, কিডনী, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগের ভাল চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। অনেকে জানেন না, আমাদের দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মতো জটিল রোগের অপারেশন হচ্ছে। সিএমএইচ-এ ভারতের তুলনায় এ চিকিৎসা অনেক কম খরচে হচ্ছে। ভারতে এ চিকিৎসা করতে যেখানে গড়ে ১৫-১৬ লাখ টাকা খরচ হয়, সেখানে সিএমএইচ-এ খরচ হয় গড়ে ৬-৭ লাখ টাকা। অনেক রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে। গত সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমইউ) কম খরচে ক্যান্সারের রোগীদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা শুরু করেছে। স্থাপন করা হয়েছে, ‘রক্ত, অস্তিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও স্টেম সেল থেরাপি কেন্দ্র’। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এতে একজন রোগীর ৬ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। ভারতে এর খরচ পড়বে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অনন্য সাধারণ চিকিৎসায় এক ভুটানি নারী ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন। কার্মযেমা নামে এই নারী নাকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অনেক দেশ ঘুরেও তিনি সঠিক চিকিৎসা পাননি। তিনি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন। ভারতের চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, তার এ চিকিৎসা সম্ভব নয়। তিনি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আসেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে। চিকিৎসকরা বোর্ড গঠন করে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে গত ৯ জানুয়ারি তার সফল অপারেশন করেন। কার্মডেমা এখন অনেকটা সুস্থ। দেশের চিকিৎসকরা এ চিকিৎসাকে অন্যন্য সাফল্য হিসাবে দেখছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, নাকে ক্যান্সার আক্রান্ত ভুটানের মেয়ে কার্মডেমার সফল চিকিৎসায় বাংলাদেশি চিকিৎসকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, বিদেশিদের উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা দেয়ার সেই সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। বিদেশ থেকেও শিঘ্রই দলে দলে মানুষ বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে। তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের দেশের মানুষ নিয়মিতই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। অনেক টাকা খরচ করে কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমরা আজ ভুটান থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কার্মাডেমার চিকিৎসা করালাম। সফলভাবে চিকিৎসা নিয়ে সে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছে। তার এই চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে ভারত ও অন্যান্য অনেক দেশ থেকে বলে দিয়েছিল। আমরা বাংলাদেশে তার চিকিৎসা সফলভাবে স¤পন্ন করতে সক্ষম হলাম। রোগী সুস্থ অবস্থায় এখন ভুটান চলে যেতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে কার্মডেমা বলেন, যখন আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছি। ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিং চেং কুইং সিল বলেন, এই জটিল অপারেশন সফলভাবে স¤পন্ন করে বাংলাদেশ সেটিই করে দেখিয়েছে, যা বিশ্বের অন্য দেশ পারেনি। বিশ্বের অন্য দেশগুলো যখন বলেছিল এই অপারেশন সম্ভব নয়, তখন বাংলাদেশ বলেছিল সেটি সম্ভব। বাংলাদেশ সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু এসব জটিল রোগই নয়, কিডনী ও হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা আমাদের দেশে রয়েছে। প্রয়োজন শুধু রোগী, চিকিৎসক ও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মানসিকতার পরিবর্তন। বলার অপেক্ষা রাখে না, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়ে থাকে, রোগীর মানসিক শক্তি এবং চিকিৎসকের ‘ভাল হয়ে যাবে’ এমন আশ্বাসে রোগী অর্ধেক ভাল হয়ে যায়। রোগী ও তার স্বজনরা মনে করে দেশে চিকিৎসার চেয়ে বিদেশে নিয়ে গেলেই ভাল চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া নিশ্চিত। এজন্য তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেও কুণ্ঠিত হয় না। যদি তাই হতো, তাহলে বাংলাদেশের কোটি কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠী কিংবা যাদের বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই তারা সুস্থ হতো না। ভারতের হাসপাতালগুলো সুপরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালিয়ে এবং তাদের চিকিৎসক এদেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশের রোগীদের সে দেশে চিকিৎসা করতে উদ্বুদ্ধ করছে। কারণ, তারা অনেক হাসপাতাল গড়ে তুলেছে, বাংলাদেশের রোগীদের টার্গেট করে। অথচ বাংলাদেশে উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীদের বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভারত গিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন নেই। যদি নিতান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এমনকি পাকিস্তান যেতে পারেন। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ভারতের চেয়ে কিছু বেশি খরচ হলেও সেখানে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যায়। পাকিস্তানে অনেক নামকরা হাসপাতাল রয়েছে। ইমরান খান লাহোরে তার মায়ের নামে যে ‘শওকত খানম মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতাল’ গড়ে তুলেছেন, সেখানে কম খরচে উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসা করা হয়। এ হাসপাতালে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আরও অন্যান্য উন্নত চিকিৎসার হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলোতে ভারতের তুলনায় অনেক কম খরচে উন্নত চিকিৎসা করা হয়। পর্যটনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশেই অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান রয়েছে। বিদেশে পর্যটনে যেতে চাইলে থাইল্যান্ড, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ রয়েছে, যেখানে ভারতে ভ্রমণের খরচের সমান খরচ করে ভ্রমণ করা যায়। ভারতের অন্যায্য ও আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ভারত বাদ দিয়ে পর্যটকরা এসব দেশে যেতে পারেন। ফলে ভ্রমণ, চিকিৎসা, শপিংয়ের জন্য যদি বিদেশ যেতেই হয় এসব দেশে বাংলাদেশের মানুষ যেতে পারেন। তবে সবার আগে দেশের পণ্য কেনা, চিকিৎসা ও ভ্রমণকেই দেশপ্রেমের অংশ হিসেবে সবার আগে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ।
চার.
পাঠক, একবার ভেবে দেখুন, ভারত থেকে আমরা কি পেয়েছি? আর আমরা কি দিয়েছি এবং দিচ্ছি? ভারত আমাদের সাথে কেমন আচরণ করছে? আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সে কি চোখে দেখছে? এসব প্রশ্নের উত্তর অনুভব করলে, ভারতের প্রতি কি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিৎ? বন্ধুত্ব কি একতরফা হয়? বন্ধুত্ব মানে কি দাদাগিরি করা? কারো করতলে থাকা? মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান কেন ভারতের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে? কারণ, তারা ভারতের অন্যায্য আচরণ ও দাদাগিরির মেনে নিতে পারেনি। এতে কি ভারত তাদের কিছু করতে পেরেছে? পারেনি। বরং ভারত তাদের সাথে এখন তার স্বার্থে ‘অনুরোধপূর্ণ’ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কেবল বাংলাদেশের সাথেই সে দাদাগিরি করে যাচ্ছে। এখন আমাদের দায়িত্ব এর প্রতিবাদ করা। উল্লেখিত দেশগুলোর চেয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা জনগণ যদি সিদ্ধান্ত নেই ভারতের পণ্য, ভ্রমণ, চিকিৎসা বর্জন করব, তাহলে সরকারেরও কিছু করার থাকবে না, ভারতেরও কিছু করার থাকবে না। ভারতকে শিক্ষা দেয়ার এর চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। ইতোমধ্যে পণ্যবর্জন ক্যাম্পেইনে তার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। এভাবে ভ্রমণ ও চিকিৎসা বর্জন করলে তার অবস্থা আরও খারাপ হবে। তখন বাধ্য হবে, দাদাগিরি ও অন্যায্য আচরণ বাদ দিয়ে আমাদের দেশ ও জনগণকে সমিহ করতে। সম্পর্ক একতরফা না হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নয়ারের বিরল ভুল,হোসেলুর শেষের ম্যাজিক,রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে রিয়াল
টার্গেট ১৬৫,'খুনে' হায়দরাবাদ জিতল দশ ওভার আর দশ উইকেট হাতে রেখেই !
ডোনাল্ড লু’র সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২ বছর অপেক্ষা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের
ভারতের রক্তাক্ত নির্মমতায় নিশ্চুপ প্রধানমন্ত্রী: রিজভী
ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল
আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২
বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক
বিএসইসিতে নতুন তিন কমিশনার নিয়োগ
গোমর ফাঁসে কামড়াকামড়ি
সরকারের চলতি মেয়াদে ৬০ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট : প্রতিমন্ত্রী
সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট সাংবাদিকদের
ফুলপুর উপজেলায আ'লীগ নেতা হাবিবুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ভাইস চেয়ারম্যন সবুজ ও পান্না
নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই কেন্দ্রে ভোটারের আকাল : মেজর হাফিজ
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ
৪৮ বছরে বিদেশ গেছে এক কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার কর্মী
ঢাবি প্রফেসর বাহাউদ্দীনের চৌর্যবৃত্তি তদন্তে কমিটি গঠন
আটোয়ারীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.আনিছুর রহমান
মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন জুলাইয়ে