অসাধারণ রম্যরচক সৈয়দ মুজতবা আলী

Daily Inqilab আফতাব চৌধুরী

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম

ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, অনুবাদক, রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল হবিগঞ্জে। পিতা সৈয়দ সিকান্দার আলী একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। পিতার চাকরির কারণে মুজতবা আলী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পড়া শেষ করে তিনি ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। বিশ্ব ভারতীয় প্রথম দিকের ছাত্র সৈয়দ মুজতবা আলী সেখানে আরবী, ইংরেজী, ফার্সী, উর্দু, হিন্দী, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান, ইতালিসহ নানা ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৬ সালে এখান থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি. ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি মিশরের বিশ্ববিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত কাবুলের শিক্ষাদপ্তরে কাজ করেন। ১৯৩৫ সালে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। এখানে আট বছর অধ্যাপনা করে ১৯৩৫ সালে দিল্লীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে এবং একই সাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খন্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর পাটনা, কটক, কলকাতা ও দিল্লীতে স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার এর দায়িত্ব পালন করে ১৯৬৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতন পড়ার সময় থেকে বিশ্বভারতীয় ম্যাগাজিনে লিখতেন। পরবর্তীতে সত্যপীর, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী প্রভৃতি ছন্দনামে দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতি, মোহাম্মদীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখতেন। বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে ভ্রমণকাহিনীও লিখতেন। তিনি ভ্রমণকাহিনীর জন্য সর্বমহলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়াও লেখেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিভিন্ন ভাষা থেকে শ্লোক রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস, সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্যে দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তিনি তাঁর শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী সাহিত্যিকদের অন্যতম হিসাবে পরিচিত লাভ করেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০টি, তার মধ্যে ভ্রমণকাহিনী- দেশে বিদেশে ১৯৪৯, জলে ডাঙ্গায় ১৯৬০, উপন্যাস, উপন্যাস-অবিশ্বাস ১৯৫৪, শবনম ১৯৬০, শহরইয়ার ১৯৬৯, ছোটগল্প-চাচা কাহিনী ১৯৫২, টুনি মেম ১৯৬৪ রম্যরচনা- পঞ্চতন্ত্র ১৯৫২, ময়ুরকন্ঠী ১৯৫২ গল্পমালা-রাজা উজির, ধূপছায়া, বেচে থাক সর্দি-কাশি, পুরশ্চ, পাদটীকা, তীর্থহীনা, কর্ণেল, রাক্ষসী, বিধবা বিাহ, ক্যাফে-দে-জেনি, মা জননী, বেল তুলে দু-দু‘বার, স্বয়ংবরা, রসগোল্লা (ইংরেজি) উল্লেখযোগ্য। সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৪৯ সালে নরসিং দাস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ সালে আনন্দ পুরস্কার। সাহিত্যেক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে তাঁকে মরনোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রম্য রচনায় সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষাভঙ্গিকে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো বাংলা সাহিত্যিকের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে অনুকরণ বা অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ তাঁর এ ভাষাভঙ্গি বা ‘স্টাইল’ সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের ভিন্ন স্বাদের। তিনি বহুভাষাবিদ ছিলেন বলেই তাঁর রচনায় প্রবেশ করেছে বহুভাষার অজস্র শব্দ, ভাষাভঙ্গি, বানান, উচ্চারণ, বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন। বিভিন্ন ভাষার শব্দ, শব্দাংশ ইত্যাদি জুড়ে তিনি কত যে জোড়কমল শব্দ সৃষ্টি করেছেন তাঁর সীমা-পরিসীমা নেই। একই বাক্যে অবলীলাক্রমে তিনি, বাংলা, উর্দু, আরবি, ফার্সি, ফরাসি, ইংরেজি শব্দকে পাশাপাশি বসিয়ে প্রাণের কথা বলতে পারতেন। এমনকি, একই বাক্যে সাধু-চলিত ভাষা অর্থাৎ তৎসম, তদ্ভব, অর্ধতৎসম, দেশি, বিদেশি ইত্যাদি নানা শব্দকে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়ার অদ্ভূত দক্ষতা ছিল তাঁর । অথচ বাক্যগুলোতে গুরুচন্ডালী দোষ ঘটেছে বলে মনেই হয় না। সাধু গদ্যের তৎসম শব্দের পাশে তিনি অনায়াসেই সিলেট-ঢাকা-ময়ময়সিংহ- বরিশালের উপভাষার শব্দকেও জুড়ে দিয়ে তাঁর রচনাশৈলীকে সর্বশ্রেণীর পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারতেন। সর্বোপরি ছিল তাঁর বৈঠকিঢঙে, হাস্য কৌতুক ও অম্লমধুর রঙ্গ-ব্যঙ্গের মাধ্যমে কথা বলার পটুতা। কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাতে এমন এক নাটকীয় চমক সৃষ্টি করতেন যা অনায়াসেই পাঠকদেরকে বিস্ময়ে অভিভূত করে দিত।

মুজতবা আলীর বহু রচনাতেই তিনি অজস্রবার ‘গুল’ শব্দটির ব্যবহার করেছেন। শব্দটির অর্থ ধাক্কা দেওয়া বা অপরকে ঠকানোর জন্যে বানিয়ে কিছূ বলা। এভাবে কত সময়ে কত কথাই বানিয়ে বানিয়ে বলে তিনি শ্রোতাদের/পাঠকদেরকে মুগ্ধ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরস সৃষ্টি করে পাঠক শ্রোতাদের আনন্দ দানের জন্য তিনি নিজের নামকরণ করেছেন ‘গুলম্গীর’। বলা বাহুল্য সম্্রাট আলমগীরের নাম সাদৃশ্যে তিনি এ ‘গুলম্গীর’ শব্দটির উদ্ভাবন করেছেন। যে সমস্ত দুষ্টু ছেলেরা রক-এ বসে আড্ডা মারে তাদেরকে রকবাজ বলে সবাই জানে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনীব্যক্তি ‘রকফেলার’-এর নামানুসারে রকবাজ ছেলেদের নামও ‘রকফেলার’ রেখে তিনি অনাবিল হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন। ছোট্ট শিশু ও কিশোরদের বোঝাতে তিনি বহু স্থানে ব্যবহার করেছেন ‘আন্ডা-বাচ্চা’ শব্দটি। ‘স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে’ বোঝাতে তিনি যখন লেখেন ‘বিবি-বাচ্চা-বাচ্চি’ তখন স্বভাবতই আমরা করুণ রস রসিক বাঙালি পাঠকরাও আর কিন্তু না- হেসে থাকতে পারে না। এদিকে ‘মামলেড’, ‘মমলেড’ কিংবা ‘অমলেট’ শব্দ নিয়েও কি তিনি কম রসিকতা করেছেন? ‘অবিশ্বাস্য’ উপন্যাস থেকে কয়েকটি বাক্য এ প্রসঙ্গে তুলে ধরছি, ও-বেলি বললে, ‘ডিম দিয়ে মামলেড কী করে হয় হে? মামলেড তো হয় কমলালেবুর খোসা দিয়ে।’ তখন সোম ও ও-বেলিকে বলে ‘আজ্ঞে মামলেড নয় মমলেড!’ ও-বেলি বলে ‘ও! আমলেট।’ তখন সোম বলে, ‘আজ্ঞে না। অমলেট হয় বিলেতে বিলিতি ডিম দিয়ে। দেশি ডিমে হয় মমলেট।’

‘পঞ্চতন্ত্র’ মুজতবা আলীর বিখ্যাত রম্যরচনা গ্রন্থ। গ্রন্থটির প্রতিটি রচনাই আমাদের মুগ্ধ করে। বৈঠকি ঢঙে, রঙ্গ-ব্যঙ্গ-কৌতুক রসের সমাবেশে, রম্য কথার যাদু দিয়ে অতি সহজেই তিনি পাঠক শ্রোতাকে আকর্ষণ করতে পেরেছেন। ‘বইকেনা’ রচনাটি এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। এখানে তিনি বাঙালি পাঠকদের বই পড়ার প্রবল আগ্রহের কথা যেমন বলেছেন তেমনি বলেছেন বই কেনার প্রতি তাদের প্রবল অনাগ্রহের কথা। শুধূ তাই নয়, অম্লমধূর রঙ্গ-ব্যঙ্গ ও নাটকীয় চমকের মাধ্যমে তিনি বাঙালি পাঠকের বই না-কেনার কারণটি যখন জানিয়েছেন তখন তাতে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

এ রচনায় লেখক বলতে চেয়েছেন যে, মাছির মাথার চারদিকে অসংখ্য চোখ আছে বলে মাছি একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়। তাই গুণী ও জ্ঞানী আনতোল ফ্রাঁস নাকি এ বলে দুঃখ করতেন, ‘হায়, আমার মাথার চতুর্দিকে যদি মাছির মত চোখ বসানো থাকত তাহলে আচক্রবাল বিস্তৃত এ সুন্দরী ধরণী সম্পূর্ণ সৌন্দর্য এক সঙ্গেই দেখতে পেতুম।’ কিন্তু ফ্রাঁস এটাও বলেছিলেন যে, মাথার চতুর্দিকে চোখ বাড়াতে না পারলেও কিন্তু মানুষ বই পড়ার মধ্য দিয়ে তার মনের চোখ বাড়াতে পারে। সুতরাং বই পড়ার জন্য বই কেনার প্রবৃত্তি। মনের চোখ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখাতে গিয়ে নাকি বারট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’

দাম বেড়ে যাওয়ায় বই কেনা যাচ্ছে না- এ অভিমত মেনে নিতে পারেননি মুজতবা আলী। তাই তিনি কিছুটা খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘জ্ঞান তৃষ্ণা তার প্রবল, কিন্তু বই কেনার বেলা সে অবলা। আবার কোনো কোনো বেশরম বলে, বাঙালির পয়সার অভাব।’ বটে। কোথায় দাঁড়িয়ে বলছে লোকটা এ কথা? ফুটবল মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে না সিনেমার টিকিট কাটার ‘কিউ’ থেকে।’ পরিশেষে তিনি অম্লমধুর ব্যঙ্গের খোঁচা মারলেন আরব্য উপন্যাসের এ বিখ্যাত গল্পটির মাধ্যমে ‘এক রাজা তাঁর হেকিমের একখানা বই বাগাতে না পেরে তাঁকে খুন করেন। বই হস্তগত হল। রাজা বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে বইখানা পড়ছেন। কিন্তু পাতায় পাতায় এমনি জুড়ে গিয়েছে যে, রাজা বার বার আঙুল দিয়ে মুখ থেকে থুথু নিয়ে জোড়া ছাড়িয়ে পাতা উল্টাচ্ছেন। এদিকে হেকিম আপন মৃত্যুর জন্যে তৈরি ছিলেন বলে প্রতিশোধের ব্যবস্থাও করে গিয়েছিলেন। তিনি প্রতিটি পাতায় পাতায় কোণের দিকে মাখিয়ে রেখেছিলেন মারাত্মক বিষ। রাজার আঙুল সে বিষ মেখে নিয়ে যাচ্ছে মুখে। রাজাকে প্রতিহিংসার খবরটিও হেকিম রেখে গিয়েছিলেন কিতাবের শেষ পাতায়। সেটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষবাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন। বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয়, সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।’

মুজতবা আলী যে বেশ ভোজনরসিক ছিলেন তার প্রমাণ ‘আহারাদি’ নামক রচনাটি পাঠ করলেই জানা যায়। ‘হাঙ্গেরিয়ান গুলাশ’ যে আমাদের সাদামাটা মাংসের ঝোলেরই নামান্তর তা আমরা মুজতবার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। ‘ইতালিয়ান রিসোত্তো’ মানে পোলাও, তবে ঠিক এদেশীয় পোলাও নয়। কোপ্তা পোলাওয়ের কোপ্দতাগুলোকে যদি ছোট্ট ছোট্ট টুকরো করে পোল্ওায়ে মিশিয়ে দেওয়া হয় তবে তাই হবে রিসোত্তো। রিসোত্তোর স্বাদের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন সে ভাষার স্বাদ বোধহয় রিসোত্তোর মতোই হয়েছে। যেমন- ‘আপনার বন্ধু যদি রসিক তথা গুণী হন এবং সে গুলাশে সঙ্গে খেতে দেন ইতালিয়ান রিসোত্তো তাহলে আপনাকে হাতি দিয়ে বেঁধেও সে রেস্তোরা থেকে বের করে আনা যাবে না। ইউরোপের বাকি ক’টা দিন আপনি সে রেস্তোরার টেবিলে বিড়ালছানার মতো আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকতে চাইবেন।’

মাছের রাজা ইলিশের প্রতি মুজতবার দারুণ দুর্বলতা ছিল। তাই তিনি ‘আড্ডা’ নামক রচনাটির একস্থানে লিখেছেন- ‘গঙ্গা, পদ্মা উরিয়ে যে মাছ বাঙালিকে আকুল উতলা করে তোলে, তার নাম ইলিশ..।’ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই পুরুষ কর্তৃক নারীরা নির্যাতিত হন, তা আমরা জানি। তাই অধিকাংশ নারীরাই পুরুষকে ভয় পায় বলে অনেকেরই ধারণা। কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনাও যে নেহাৎ কম নয়, তা মুজতবা আলী তাঁর ‘দাম্পত্যজীবন’ নামক রচনায় দেখিয়েছেন। এমন কিছু স্ত্রীলোক আছে যারা তাদের স্বামীর উপর কর্তৃত্ব চালায়। তাদের ভয়ে তাদের স্বামীরা থাকে সদা ভীতসন্ত্রস্ত। এ ধরনের বদরাগী, স্বামী নির্যাতনকারিদের বোঝাতে মুজতবা আলী যে দুটি গুণগত বিশেষণ ব্যবহার করেছেন সেগুলো হচ্ছে ‘দজ্জাল এবং খান্ডার’। ‘দাম্পত্য জীবন’ রচনাটিতে খান্ডার স্ত্রীলোকের যন্ত্রণায় অবলা স্বামীদের দুরবস্থার যে বর্ণনা মুজতবা আলী দিয়েছেন তা পড়তে পড়তে আমাদের মনে হর্ষ ও বিষাদ উভয় ভাবই জেগে ওঠে।

এভাবে বিচিত্র বিষয় ও ভাবানুসারে উপযুক্ত ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে মুজতবা আলী তাঁর রচনাগুলোকে বেশ রসালো ও উপভোগ্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যে কোন বিষয়েই রম্যরচনা রচিত হতে পারে। কিন্তু তাকে কালোত্তীর্ণ সাহিত্য রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রয়োজন সূক্ষ্ম রসদৃষ্টি, বুদ্ধির প্রাচুর্য, এবং পরিবেশনার একটি হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গি। বলা বাহুল্য, উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো মুজতবা আলীর সম্পূর্ণ আয়ত্তে ছিল। সর্বোপুরি তাঁর ছিল রস- প্রগাঢ় জীবনদৃষ্টি আর সে জীবনদৃষ্টিই ছিল তাঁর পরম রমনীয় রম্যরচনা সৃষ্টির মূল চাবিকাঠি।

সৈয়দ মুজতবা আলী আমাদের মধ্যে নেই। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নয়ারের বিরল ভুল,হোসেলুর শেষের ম্যাজিক,রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে রিয়াল

নয়ারের বিরল ভুল,হোসেলুর শেষের ম্যাজিক,রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে রিয়াল

টার্গেট ১৬৫,'খুনে' হায়দরাবাদ জিতল দশ ওভার আর দশ উইকেট হাতে রেখেই !

টার্গেট ১৬৫,'খুনে' হায়দরাবাদ জিতল দশ ওভার আর দশ উইকেট হাতে রেখেই !

ডোনাল্ড লু’র সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডোনাল্ড লু’র সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২ বছর অপেক্ষা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের

২ বছর অপেক্ষা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের

ভারতের রক্তাক্ত নির্মমতায় নিশ্চুপ প্রধানমন্ত্রী: রিজভী

ভারতের রক্তাক্ত নির্মমতায় নিশ্চুপ প্রধানমন্ত্রী: রিজভী

ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল

ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল

আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২

আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২

বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক

বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক

বিএসইসিতে নতুন তিন কমিশনার নিয়োগ

বিএসইসিতে নতুন তিন কমিশনার নিয়োগ

গোমর ফাঁসে কামড়াকামড়ি

গোমর ফাঁসে কামড়াকামড়ি

সরকারের চলতি মেয়াদে ৬০ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট : প্রতিমন্ত্রী

সরকারের চলতি মেয়াদে ৬০ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট : প্রতিমন্ত্রী

সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী

সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট সাংবাদিকদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট সাংবাদিকদের

ফুলপুর উপজেলায আ'লীগ নেতা হাবিবুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ভাইস চেয়ারম্যন সবুজ ও পান্না

ফুলপুর উপজেলায আ'লীগ নেতা হাবিবুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ভাইস চেয়ারম্যন সবুজ ও পান্না

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই কেন্দ্রে ভোটারের আকাল : মেজর হাফিজ

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই কেন্দ্রে ভোটারের আকাল : মেজর হাফিজ

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ

৪৮ বছরে বিদেশ গেছে এক কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার কর্মী

৪৮ বছরে বিদেশ গেছে এক কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার কর্মী

ঢাবি প্রফেসর বাহাউদ্দীনের চৌর্যবৃত্তি তদন্তে কমিটি গঠন

ঢাবি প্রফেসর বাহাউদ্দীনের চৌর্যবৃত্তি তদন্তে কমিটি গঠন

আটোয়ারীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.আনিছুর রহমান

আটোয়ারীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.আনিছুর রহমান

মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন জুলাইয়ে

মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন জুলাইয়ে