ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ইতিবাচক প্রভাব

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম

ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ আন্দোলনের সূত্রপাত। এরপর কিছু সংগঠন ও ছোট ছোট রাজনৈতিক দল এ আন্দোলনে শামিল হয়। অতঃপর আরো কিছু দল, সুশীল ও বুদ্ধিজীবী মহল আন্দোলনে সমর্থন জানায়। অবশেষে বিএনপি ও তার মিত্র বিভিন্ন দল ও জোটের তরফেও আন্দোলনে সংহতি জানানো হয়েছে। এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন অত্যন্ত জোরদার একটি আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে এ আন্দোলনের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। আন্দোলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একাত্মতা ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকার স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখের বক্তব্য থেকে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো সমর্থন করায় আন্দোলন দুর্বার গতি অর্জন করেছে। ঈদের পোশাকের বাজারে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের বড় করমে প্রভাব পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ভারতীয় পোশাক বিক্রী একেবারেই কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেছে, এবার ভারতীয় পোশাক খুব একটা বিক্রী হচ্ছে না। ক্রেতাদের এক সময় ক্রেজ ছিল ভারতীয় পোশাকের প্রতি। ভারতীয় শাড়ি, মেয়েদের পোশাক ইত্যাদির জন্য এদেশের নারী ও বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা বলতে গেলে ‘পাগল’ ছিল। সেদিন অবশ্য আগেই বিদায় নিয়েছে। তারপরও ভারতীয় পোশাকের বিরাট বাজারের নাম বাংলাদেশ, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। এবার তাতে বেশ জোরে ধাক্কা লেগেছে। ক্রেতারা ভারতীয় পোশাকের স্থলে দেশি পোশাকই কিনছে। এটা যে কোনো বিবেচনায় শুভ লক্ষণ।
ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের পেছনে নানা কারণ রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের অব্যাহত হস্তক্ষেপ এর মধ্যে প্রধান। বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত নিরবচ্ছিন্নভাবে এ হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষমতাসীনদের প্রতি ভারতের নিরংকুশ সমর্থন এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকেই শুধু বঞ্চিত করেনি, একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের নিগড়ে আবদ্ধ করেছে। দ্বিতীয় কারণ, অর্থনৈতিক। ভারতের অর্থনৈতিক আগ্রাসন দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বাণিজ্যে অসমতা ছাড়াও ভারতীয়রা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধভাবে কাজ করে প্রতি বছর বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় বিনিয়োগ এবং যৌথ উদ্যোগ ইত্যাদিও ক্রমশ বাড়ছে। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপারে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বিভিন্ন সময় দেশের মানুষকে বিপাকে ফেলেছে। তৃতীয় কারণ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অসমতা। ভারত বাংলাদেশের কাছে যা প্রয়োজন, তা একনাগাড়ে টেনে নিয়ে নিলেও বাংলাদেশ তার বিনিময়ে কিছুই পায়নি। তিস্তার পানিটুকুও না। অথচ বন্দর, সড়ক, রেল ইত্যাদি সবকিছু ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে ভারত। সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশি হত্যাও একটি বড় কারণ। এরও কোনো প্রতিবিধান হয়নি। এছাড়া আরও নানা কারণ রয়েছে। ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য এদেশের ক্ষমতাসীন দল ও সরকার নিজেদের এমন একটা নতজানু অবস্থানে উপনীত করছে যার কোনো তুলনা হয় না। ভারত এর সুযোগ নিয়ে যাচ্ছেতাই করতে পারছে, বাংলাদেশ কিছুই করতে পারছে না। এই সামগ্রিক অবনত অবস্থা দেশের মানুষের মনে যে অশেষ অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন তারই একটা বহিঃপ্রকাশ। ‘হটাও ভারত’ আন্দোলনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট যে সাফল্য পেয়েছেন, সেটা একটা অনুপ্রেরণা বটে। ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন, ‘হটাও ভারতে’রই একটা প্রকার। নিতান্ত নিরূপায় হয়েই বাংলাদেশের মানুষ এ পথ বেছে নিয়েছে।

শুধু পোশাক নয়, এমন কোনো খাদ্য ও ব্যবহার্য পণ্য নেই, যা ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি না হয়। যা আমদানি হয়, চোরাইপথে আসে তার দ্বিগুণেরও বেশি। সব মিলে বিশাল অংকের ‘বাণিজ্য’ হয় ভারতের। অথচ, এই বাণিজ্যে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। ভারতীয় পণ্য, যা কিছু এখানে আমদানি হয়, তার প্রায় সবই দেশে উৎপাদিত হয়। ভারতীয় পণ্য বর্জন আমাদের বৈধ-অবৈধ আমদানি ব্যয় যেমন কমাবে, তেমনি দেশেই এসব পণ্য উৎপাদনে একটা জোয়ার সৃষ্টি করবে, পর্যবেক্ষকদের এটাই সুচিন্তিত অভিমত। অনেকেরই স্মরণ আছে, ভারত গরু রফতানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে অসুবিধায় পড়লেও পরবর্তীতে গরু বা গবাদী পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি, ডিম-দুধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। পেঁয়াজের কথাও এ প্রসঙ্গে বলা যায়। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় কিছু অসুবিধা হলেও পেঁয়াজের উৎপাদনও আগের তুলনায় বেড়েছে। এবারের রমজানে পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রী হচ্ছে বটে, তবে আগামীতে উৎপাদন আরো বাড়লে এ অবস্থা থাকবে না। ইস্যু না পেয়ে বিএনপি ভারত বিরোধিতায় নেমেছে বলে সরকারের তরফে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় ইস্যু। অনেক আগেই এই ইস্যুতে মাঠে নামা উচিত ছিল। বাজার অস্থিতিশীল করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য, সরকারি মহলের এমন দাবির প্রেক্ষিতে বলা যায়, সাময়িকভাবে বাজার কিছুটা অস্থির হলেও আগামীতে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বাড়লে বাজার সুস্থির ও টেকসই হবে। সাশ্রয় মূল্যে পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। দেশে ব্যাপক আকারে পণ্যাদি উৎপাদনের ব্যবস্থা হলে অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমদানি ব্যয় কমবে, দেশের টাকা দেশেই থাকবে। দেশের সর্বত্র কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের আয় ও ক্রয়-ক্ষমতা বাড়বে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হয়, ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১

দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার

৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ

২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ

বাইতুল মোকাররমে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আহত ৩ মুসল্লি

বাইতুল মোকাররমে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আহত ৩ মুসল্লি

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার

বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার

বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে পালিয়ে গেলেন আওয়ামী খতিব

বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে পালিয়ে গেলেন আওয়ামী খতিব

ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ

ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ

শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব

শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে