ঈদে প্রিয়জনের কাছে ফেরা নিরাপদ হোক
০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম
রমজানে টানা এক মাস রোজা শেষে খুশি নিয়ে হাজির হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর এই ঈদের খুশিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের কাছে সবাই ছুটে আসে নিজ নীড়ে। ঈদযাত্রায় পথে পথে লাখো মানুষের যাতায়াত ঘটে। রোডক্র্যাশের (সড়ক দুর্ঘটনা) কারণে এই যাত্রা কোনো কোনো পরিবারের ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। এতো মানুষের একসঙ্গে ঘরে ফেরার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা। ঈদ উদযাপন মানেই ঘরে ফেরা, প্রিয়জনের কাছে ফেরা। তাই, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সব স্তরের মানুষের মাঝে, ঈদে বাড়ি ফেরার যাত্রা হোক নিরাপদ। প্রতি ঈদে নাড়ির টানে মানুষ নিজ বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে যায়। কারণ, বছর শেষে আনন্দের দিনটি সবাই একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে মানুষ ছুটছে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু আমাদের দেশের সড়কগুলো যেন হয়ে উঠছে এক একটি মৃত্যু ফাঁদ। প্রতিনিয়ত রোডক্র্যাশের খবর আমরা পাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩ এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ৮৭ জনের। সড়কে মানুষের জীবন বাঁচাতে নিতে চাই কার্যকর উদ্যোগ। এই রোডক্র্যাশ প্রতিরোধে দরকার ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’। বিগত বছরগুলোর মতো এই সময়ে রোডক্র্যাশ বাড়তে পারে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পত্রপত্রিকা ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ও যাচাই বাছাই করে এক প্রতিবেদনে জানায়, গত বছর ঈদযাত্রাকালীন ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী ১৪২টি রোডক্র্যাশে ১৩৬ জন নিহত ২৫৮ জন আহত হয়। এই যাত্রা যদি হয় বেদনা তাহলে পুরো ঈদের খুশিটাই যেন বিলীন। সেজন্য ঈদের ছুটি উপলক্ষে সড়কগুলো নিরাপদ করতে এখন থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। রোডক্র্যাশে বছরে এত সংখ্যক লোকের মৃত্যু খুবই উদ্বেগজনক। এতে জিডিপির তিন শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়।
বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫৯৬টি রোডক্র্যাশে ৫২৩ জন নিহত আর ৭২২ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০৩টি রোডক্র্যাশে ৫৫৫ জন নিহত, ১০৩১ জন আহত হয়েছে। বিশ্বে ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে দরকার সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন।
সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ এ সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ওই বিধিমালায় গাড়ির গতিসীমা, সিটবেল্ট, মানসম্মত হেলমেট, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশু আসন ইত্যাদি বিষয়ে পরিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়া হয়নি। বেপরোয়া গতি, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা করা, সাইকেল-রিকশা-মোটরগাড়ি একই সঙ্গে চলাচল করার ফলে রোডক্র্যাশ নেমে আসছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও চালকরা তার কোনো তোয়াক্কাই করছে না। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিবছর ঈদ পূর্ব যাতায়াতকালে রোডক্র্যাশে মানুষ মারা যাচ্ছে।
ঈদুল ফিতর ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘœ ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে এবং আনন্দযাত্রায় রোডক্র্যাশে শত শত মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ দ্রুত নেয়া দরকার তা হলো : অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণ করা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোডক্র্যাশ এড়িয়ে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে হলে মোটরসাইকেল চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সড়কে এখন সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে মোটরসাইকেলের কারণে। তাছাড়া ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্টদের নজরদারি জোরদার করতে হবে। তবে শুধুমাত্র চালকের বেপরোয়া গতিই রোডক্র্যাশের একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণের মধ্যে ক্রটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ড্রাইভার, ভুয়া লাইসেন্স, অতিরিক্ত পণ্যসামগ্রী বা যাত্রী পরিবহন, চালকের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, চলন্তবাস, ট্রাকে, মুঠোফোন ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে রোডক্র্যাশ ঘটে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, খারাপ রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও ওভারটেক করার হীনমানসিকতাও এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
মূলত নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আসল যুদ্ধ শুরু হয় পবিত্র ঈদ আসলেই। প্রতিবছরই ঈদে নগরবাসী মানুষের বাড়ি ফেরার সময় পড়তে হয় নানা রকম ভোগান্তিতে। অনেকের তো বাড়িই ফেরা হয় না। রোডক্র্যাশ, অতিরিক্ত যানজটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতেই থাকে। তবে নিরাপদ সড়কের জন্য নিয়মিত রাস্তাঘাট মেরামতসহ গতিবিধি মেনে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করতে পারলে অনেকাংশেই রোডক্র্যাশ রোধ করা যাবে। গতিবিধি না মেনে গাড়ি চালালে তার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে।
আপনজন হারানোর বেদনা শুধু স্বজনরাই অনুভব করছে বারবার। কে, কখন, কোথায়, কীভাবে রোডক্র্যাশের সম্মুখীন হবে তা কেউ জানে না। বাস্তবিক অর্থেই এটা এখন মহামারীর রূপ নিয়েছে। এর রাশ টেনে ধরতেই হবে, থামাতে হবে মৃত্যুর মিছিল। তবেই হয়তো উৎসবে নাড়ির টানে যাত্রা আর ফিরতিকালে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়বে না কেউ, বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার সময় লাশ হয়ে ফিরবে না! রোডক্র্যাশ সামাল দিতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা জনগণ ভীষণভাবে অনুভব করছে।
লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), রোড সেইফটি প্রকল্প, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাওলানা মামুনুল হককে রিসিপ করতে কাশিমপুর কারাগারের গেইটে হেফাজত নেতাদের ভিড়
এখন জনগণ বিশ্ব দরবারে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
শিগগিরই উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ শুরু হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘প্রবাসী আতঙ্ক’ই আঘাত হানছে ভারত-চীনের অর্থনীতিতে: বাইডেন
৩০ বছর বাদে সোজা হলেন বিশ্বের কোঁচকানো ব্যাক্তি
মার্কিন ও ব্রিটিশ ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইরানের
কালীগঞ্জে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাতা পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশে ক্যাস্পারস্কি’র নতুন ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট লাইন ‘ক্যাস্পারস্কি নেক্সট’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে মোবাইল ফোন ও মোটর সাইকেল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ
অতি ডান-অতি বামের কথা বলে শেখ হাসিনা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়: প্রিন্স
জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কাল
জনগন লুটেরা দূর্নীতিগ্রস্হদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না : আমিনুল হক
কসবায় ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুল শিক্ষক নিহত
হাজীদের গ্রহণে সউদী সরকার সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণিশিক্ষক কবি রকিবুল হাছান
আখাউড়ায় ১২০০ শিক্ষার্থী পেলো মোনালিসা ন্যাপকিন
১১২ উপজেলায় ১ হাজার ৫৮৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
নাসিরনগরে প্রশিক্ষণ, আখাউড়া ও কসবার আচরণবিধির আলোচনায় হুশিয়ারি
কুষ্টিয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
আত্মা ইল্লিয়্যিন বা সিজ্জিনে থাকা প্রসঙ্গে।