ট্রেন সার্ভিসকে আধুনিকায়ন করতে হবে

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম

সম্প্রতি দাপ্তরিক কাজে কুড়িগ্রাম গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময়ে বাসে গেলেও ফেরার পথে ট্রেনে ফিরব বলে মনস্থির করলাম। সফর করছিলাম অফিসের ৫ সহকর্মী। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনের টিকিট করলাম। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেনটি বিকাল ৩টায় দেওয়ানগঞ্জ থেকে ছেড়ে রাত ৯টায় ঢাকা পৌঁছাবে। এর আগে দেশের ট্রেন ভ্রমণ আমার কাছে কখনো সুখকর মনে হয়নি। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে এই ট্রেন ভ্রমণ নিয়ে। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পর ট্রেন ভ্রমণ করতে যাচ্ছি। অবস্থার অবশ্যই উন্নতি হবে সেই আশায় আশান্বিত হয়ে এবং সহকর্মীদের আশ্বাসে রাজি হয়ে গেলাম। অনলাইনে টিকিট সার্চ করতেই দেখি এসি বার্থে কয়েকটি আসন খালি আছে। দেশের প্রেক্ষাপটে ট্রেনের টিকিট খালি পাওয়া মানে নিজেকে ভাগ্যমান মনে হয়। তাও আবার এসি। তাই বিলম্ব না করে টিকিট কনফার্ম করে ফেললাম। যে সময়ে ট্রেন ছাড়ার কথা, এই সময়ের আশপাশে উক্ত স্থান থেকে ঢাকায় ছেড়ে আসে এমন কোনো বাস সার্ভিস নেই। বাসগুলো সন্ধ্যার পরে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। আরও ভাবলাম, ট্রেনটি যেহেতু রাত ৯টায় ঢাকা পৌঁছাবে সেহেতু আর যাই হোক অন্তত ট্রাফিক জ্যামে আটকে অহেতুক সময় নষ্ট হবে না। বাসে আসলে সচারাচার যেটা হয়ে থাকে। তাই আগে পরে কিছু না ভেবে ট্রেনে উঠে পড়লাম।

ট্রেন তার নির্ধারিত সময়েই ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ল। এটা দেখে মনটা উৎফুল্ল হলো। সহকর্মীদের ধন্যবাদ দিলাম। বললাম, আপনাদের কথা তাহলে ঠিকই মনে হয়। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, ট্রেন সার্ভিস এখন পূর্বের তুলনায় বহুগুণে উন্নত হয়েছে। ট্রেনে উঠতেই তাদের কথার সত্যতা পেয়ে নিজের কাছে ভালো লাগল। এসি বার্থের ৩টি আসন এক রুমে পড়েছে। নির্ধারিত রুমে প্রবেশ করেই দেখলাম সম আকারের দুটি বেড। নিচের বেডে ২ জন এবং উপরের বেডে ১ জনÑ এভাবে টিকিটে আসন বিন্যাস ছিল। আমরা নিচের বেডে দুজন বসে এবং উপরের বেডে একজন শুয়ে যাওয়ার জন্য ঠিক করলাম। প্রকৃতপক্ষে নিচের বেডটিতেও ১ জন শুয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু যেভাবে আসন বিন্যাস করা আছে সেভাবেই যেতে হবে। তাই বেডকে বসার আসন হিসেবে মেনে নিলাম। যেহেতু বেডগুলো শুয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত তাই বসে তেমন একটা সাচ্ছন্দ পেলাম না। তারপরেও যেতে হবে। সামনে টেবিল আছে, উপরে ব্যাগ রাখার জন্য আলাদা বাঙ্কার আছে। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা, রুমটি সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ ভেতর থেকে লক আটকে দিলে কেউ এসে বিরক্ত করতে পারবে না। সময় তো মাত্র ৬ ঘণ্টা। দেখতে দেখতে চলে যাব। এসব ভেবেই সামান্য অসুবিধা মনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারল না।

আমার কাছে ট্রেন ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে বাইরে চেয়ে থাকা। তেমনই অনুভূতি নিয়ে বাইরে দৃষ্টি গোচর করলাম। নীল আকাশের পড়ন্ত বিকেলে সূর্য কিছুটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। প্রকৃতিতে গরম তখনো খুব একটা পড়েনি। তাই বিকেলের সোনালি রোদে প্রকৃতি তখন জ্বলজ্বল করলেও প্রাণিকুলের মধ্যে যথেষ্ট স্বস্তির আমেজ। স্বস্তির আমেজ আমাদের মধ্যেও। কেননা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমের মধ্যে বসে প্রকৃতি দেখতে দেখতে পথ চলা কার না ভালো লাগে! মাঠের পর মাঠ সবুজ ধান ক্ষেতে ভরপুর। দিগন্ত জোড়া ধান ক্ষেতে প্রকৃতির হাওয়া ঢেউয়ের মতো দোলা দিয়ে যাচ্ছে। মাত্র কিছুদিন পরেই সবুজ ধানগাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। মাঠ ভরা ফসলের স্বপ্ন দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠবে আনন্দের ছোঁয়া। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। মনে হলো দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের এক বুক স্বপ্ন। ক্ষণিকের জন্য হলেও কিছুটা শৈশবে ফিরে গেলাম। শৈশবে দেখতাম, আমাদের বাড়িতে ধান ওঠার সময়ে কত ব্যস্ততা। কত স্বপ্ন থাকত ক্ষেতের ওই সোনালি ধানকে কেন্দ্র করে। ঠিক যেমনটা এখানকার কৃষকদের মনে দোলা দিচ্ছে। ধান ক্ষেতের মধ্যে আবার কখনো লোকালয়, কখনো বাজার, কখনো মাঠ ভর্তি অন্যান্য ফসল। সবমিলিয়ে প্রতিটি দৃশ্য মন ছুয়ে যাওয়ার মতো। কোথাও কোথাও দেখলাম পারাপারের অপেক্ষায় রাস্তা ভর্তি গাড়ি ও মানুষ। ট্রেন চলে গেলেই তারা রাস্তা পার হবে।

ছন্দে ছন্দে ট্রেনের ঝাঁকুনি, থেকে থেকে ট্রেনের লাইন পরিবর্তনের খট খট শব্দ, মাঝেমধ্যে ট্রেনের হুইসেল সাথে বাইরের প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য সবমিলিয়ে বেশ ভালোই অনুভূত হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা গাজীপুরের কাছে পৌঁছালাম। ততক্ষণে প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নেমেছে। এর মধ্যে হালকা তন্দ্রাভাবও পার হয়েছে। অপরূপ প্রকৃতির দৃশ্য, সহকর্মীদের সাথে গল্প, কিছুটা নীরবতা, ঘুম ঘুম ভাবের মধ্যে দিয়ে সময়টা কখন পার হয়ে গেছে বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু সমস্যাটা বাঁধল এর পরেই। গাজীপুর পার হয়ে টঙ্গী আসতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগল। ট্রেন কোনরকম কারণ ছাড়াই মনে হলো দুই মিনিট চললে ১০ মিনিট অপেক্ষা করছে। স্টেশন ছাড়া ট্রেন অপেক্ষা করা মানেই বুঝতে বাকি রইল না যে সামনে কোনো সমস্যা আছে। হয়ত ক্রসিং না হলে লাইনের ব্যস্ততাÑ কোনো একটা তো হবেই। এভাবে গড়িমসি করতে করতে রাত ১০টা বেজে ১৫ মিনিট তখন বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছালাম। গন্তব্য কমলাপুর। ভাবলাম, এর পরেই তো কমলাপুর। হয়ত ১৫-২০ মিনিটেই পৌঁছে যাব। কিন্তু কমলাপুর পৌঁছাতে বেজে গেলে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। খেয়াল করলাম, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চলেছে কচ্ছপের গতির ন্যায় এবং পথিমধ্যে ৩ বার অহেতুক সময় নষ্ট করে ট্রেন অপেক্ষা করেছে।

ঐ যে পূর্বে বলেছি, ট্রেন ভ্রমণ আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে। বিরক্তি লাগার কারণগুলোর মধ্যে ক্রসিং নামক এক উদ্ভট ঝামেলার কারণে এই অহেতুক বিলম্ব করা। ৫ বছর আগেও এই পরিস্থিতির জন্য ট্রেন ভ্রমণকে নিজের পছন্দের তালিকায় জায়গা দিতে পারিনি। ৫ বছর পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি দেখে কিছুটা হতবাক হলাম। যেকোন দেশের প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো সেদেশের ট্রেন সার্ভিস। অথচ, সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের দেশের ট্রেন সার্ভিস থেকে যাত্রীদের দৃষ্টি অন্যত্র সরে যাচ্ছে। ট্রেনে বরাদ্দের কমতি নেই। বছর বছর বরাদ্দ বাড়ছে, নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে ট্রেন সার্ভিসকে যাত্রীবান্ধব করার জন্য। কিন্তু দৃশ্যত তেমন কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি। গত ১৫ বছরে ট্রেন সার্ভিসের উন্নয়নে লক্ষ কোটি টাকারও অধিক ব্যয় করেছে সরকার। কিন্তু গতি বাড়ছে না ট্রেনের। লোকসান না কমে বরং লাফিয়ে বাড়ছে। কিছু প্রকল্পে বরাদ্দের অর্থ প্রায় পুরোটাই জলে গেছে। আবার এমন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, যার সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা। এছাড়া অধিকাংশ প্রকল্পের ব্যয় দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সরকার একের পর এক অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ ক্রয় করছে। এছাড়া নতুন ট্রেনলাইন নির্মাণ, নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ, ট্রেনের রুট বর্ধিত করা, নতুন কোচ ও ওয়াগন সংগ্রহ, মেরামতের জন্য প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ট্রেন সার্ভিসের মান বাড়েনি। বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। টিকিট ব্যবস্থাপনা অনলাইন হলেও কালোবাজারি তেমন কমেনি। রেলের প্রকৌশল দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশের রেলপথ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। দেশের বিদ্যমান ট্রেনলাইন দিয়ে গড়ে ৬৪ কিলোমিটারের বেশি গতি উঠে না। অথচ সরকার ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ইঞ্জিন ও কোচ সংগ্রহ করেছে। যার ফলে বেশি দামে ক্রয় করা ইঞ্জিন-কোচের সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। ট্রেনের খাবারের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। ট্রেনের খাবারের দামের সঙ্গে মানের বিস্তর ফারাক রয়েছে। বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে এসব খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব খাবার ট্রেনে সরবরাহ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ক্যাটারিং কোম্পানি। অন্যান্য স্ন্যাক্সের কথা বাদ দিলাম। চা এবং কফির দাম জিজ্ঞাস করতেই খাবার সাপ্লাই দিতে আসা ক্যাটারিং সার্ভিসের লোক বলে ওঠে, লাল চা ২০ টাকা এবং কফি ৪০ টাকা। যাত্রাপথে এক কাপ চা কিংবা কফি মনকে সতেজ করে। যাত্রাপথের ক্লান্তিকর ভাব কেটে গিয়ে বেশ উৎফুল্ল করে তোলে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রেনে চা কিংবা কফির সংযোজন মন্দ নয়। কিন্তু এত দাম শুনে সেই আশা অনেকের ম্লান হয়ে যায়। এক কাপ গরম পানির মধ্যে একটি টি-ব্যাগ দিয়ে সেটার দাম ২০ টাকা কেন হবে সেই প্রশ্ন তো থেকেই যায়। রেলওয়ের স্টাফ কর্তৃক বিক্রিত খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিশ্চয়ই কম হওয়ার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি অতটা যাত্রীবান্ধব নয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ট্রেনের ভিতর ব্রিক্রি করার খাবারের দাম বাইরের খাবারের দামের চেয়ে সাশ্রয়ী এবং গুণে-মানেও ভালো। এই ব্যবস্থাকে উন্নত করার দরকার আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সব ভোগান্তি যাত্রীদের উপর না চাপিয়ে যাত্রীরা যাতে সুবিধা পায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।

এখানে চীনে ট্রেন ভ্রমণের সামান্য অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। চীনের ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই ভোলার নয়। পরিবারসহ একবার চীনের ফাস্ট ট্রেন তথা বুলেট ট্রেনে চড়ে ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে গুয়াংজু প্রদেশে গিয়েছিলাম। ৮০০ কি.মি. দূরত্বের এই পথ যেতে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল। তবে চলার পথে বুলেট ট্রেনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২৪২-২৫০ কি.মি. এর মধ্যে। বাকি সময় স্টেশনগুলোতে ব্যয় হয়েছিল। ২৫০ কি.মি. গতির ট্রেনের ভিতর কোনরকম ঝাঁকুনি অনুভূত হইনি। ট্রেন ফুল স্পিডে চললেও ভিতরের যাত্রীরা কিছুই বুঝতে পারে না। ট্রেনের প্রতিটি আসন, ফ্লোর, ওয়াশরুম একেবারে নিট এন্ড ক্লিন। প্রতি ১৫-২০ মিনিট পরপর একজন পরিস্কারক এসে ট্রেনের ফ্লোর মুছে দিয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের চার পাশটা স্বচ্ছ কাচে ঘেরা। এই কাচের ভিতর থেকে বাইরের সকল দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। যাত্রাপথে দেখলাম, ট্রেন কখনো দীর্ঘ পাহাড়ের ভিতর দিয়ে নির্মাণ করা ট্যানেলের মধ্যে সাই সাই করে ঢুকে পড়ছে। মুহূর্তেই চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। কখনো কখনো মাইলের পর মাইল ট্যানেল ধরে চলে যাচ্ছে। আবার দীর্ঘ নদী পার হচ্ছে কিন্তু গতিতে কখনো ছাড় নেই। পাশ ঘেঁষে অন্য ট্রেন ফুল স্পিডে যখন চলে যাচ্ছে তখন গতি দেখে নিজেদের কাছে ভয় লাগছে। তবে নির্ধারিত স্টেশন ছেড়ে আসার পরে এসব ট্রেনের দরজা বন্ধ থাকে। জানালা খোলা যায় না। তাই ভিতরে বসে গতি অতটা বোঝা যায় না। ট্রেনের ভিতরের প্রতিটি বগিতে লাগানো পর্দায় ট্রেনের বর্তমান গতি দৃশ্যমান হচ্ছে। দৃশ্যমান হচ্ছে পরবর্তী স্টেশনের নাম। ট্রেন লাইন অতি উন্নত হওয়ায় কোনো ঝাঁকুনি তো দূরের কথা কোনরকম দুলনি অনুভূত হয় না। আমি চীনাদের ট্রেন সার্ভিসের সাথে আমাদের দেশের ট্রেন সার্ভিস মেলাতে চাই না। কেননা, আমাদের দেশের অর্থনীতি আর চীনের অর্থনীতির বিস্তর ফারাক রয়েছে। তবে দেশের ট্রেন সার্ভিসের মান বিদ্যমান মানের চেয়ে আরও উন্নত হওয়া উচিত ছিল। উচিত ছিল ট্রেন লাইনগুলোকে ডাবল লাইনে উন্নীত করে আরও মজবুত করা। যাতে করে ট্রেন উচ্চ গতিতে ছুটতে পারে। উচিত ছিল ট্রেনের কোচগুলোকে উন্নত করা। ডিজেলের ইঞ্জিন বাদ দিয়ে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন সংযোজন করা। যেগুলোর সবগুলোতে আমরা অনেক পিছিয়ে।

নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিরাপদ ভ্রমণে ট্রেনের জুড়ি নেই। একসাথে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রেন তার গন্তব্যে নির্ধারিত সময়ে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে পারে। ট্রেন ভ্রমণ তুলনামূলক আরামদায়ক এবং কিছুটা সাশ্রয়ীও বটে। কিন্তু এই খাতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যাত্রীরা তার কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। তারপরও প্রতি বছর ট্রেনযাত্রীর চাহিদা বাড়ছে। এটা রেলওয়ের জন্য ইতিবাচক। ট্রেনকে যাত্রীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। নীতিনির্ধারকদের বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। সুচিন্তিতি মতামত এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে ট্রেন সার্ভিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনকে যাত্রীবান্ধব করতে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। ক্রসিংয়ের কারণে বাড়তি যে সময় ব্যয় হয় সেটা থেকে মুক্তি পেতে ডাবল রুটের ট্রেন লাইনের বিকল্প নেই। ক্রসিং ঝামেলা এড়াতে সব রুটে ডাবল লাইন সংযোজন করতে হবে। পুরাতন লাইনকে আধুনিকায়ন করতে হবে। দ্রুত চলাচল করতে হলে পূর্বের সকল পুরাতন লাইনকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ট্রেনের কাক্সিক্ষত গতি নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনে বিক্রি করা খাবারের মান উন্নত করে দাম কমাতে হবে। একমাত্র সঠিক এবং সুপরিকল্পিত প্রকল্প বর্তমান ট্রেন সার্ভিসের বেহাল দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ট্রেনের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে মাঝেমধ্যে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে স্বয়ংক্রিয় রেল কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। ট্রেনের টিকিট ব্যবস্থাপনা যাত্রীবান্ধব হতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ,গুজরাটের বিদায়

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ,গুজরাটের বিদায়

জর্ডানে যৌথ সামরিক মহড়া

জর্ডানে যৌথ সামরিক মহড়া

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে চীন-রুশ প্রেসিডেন্টের বিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে চীন-রুশ প্রেসিডেন্টের বিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ

টোলের নামে চাঁদাবাজিতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সাঈদ খোকন

টোলের নামে চাঁদাবাজিতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সাঈদ খোকন

মাইজিপি অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট

মাইজিপি অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট

আ.স.ম আবদুর রবকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল

আ.স.ম আবদুর রবকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল

২৫ দিনেও ধরতে পারেনি সেই ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার

২৫ দিনেও ধরতে পারেনি সেই ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার

ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসায় প্রবেশপথ হবে বাংলাদেশ-তুরস্ক

ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসায় প্রবেশপথ হবে বাংলাদেশ-তুরস্ক

লৌহজংয়ে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কর্তন উদ্বোধন

লৌহজংয়ে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কর্তন উদ্বোধন

মোরেলগঞ্জে যুবকের গলায় রশি পেচানো লাশ উদ্ধার

মোরেলগঞ্জে যুবকের গলায় রশি পেচানো লাশ উদ্ধার

ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে মুসলিম জাতিসংঘ গঠন করতে হবে

ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে মুসলিম জাতিসংঘ গঠন করতে হবে

অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ

অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক

সকল শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নই এ সরকারের লক্ষ্য

সকল শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নই এ সরকারের লক্ষ্য

ইবিতে শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষক সমিতির

ইবিতে শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষক সমিতির

ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

শোক সংবাদ

শোক সংবাদ

পটিয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

পটিয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

ইসরায়েলি ও ভারতীয় পণ্য আমদানি বন্ধের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

ইসরায়েলি ও ভারতীয় পণ্য আমদানি বন্ধের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

জেগে উঠল আগ্নেয়-দানব মাউন্ট ইবু! আকাশে পাঁচ কিলোমিটার ছড়াল ছাই

জেগে উঠল আগ্নেয়-দানব মাউন্ট ইবু! আকাশে পাঁচ কিলোমিটার ছড়াল ছাই