ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

রক্ষক যখন ভক্ষক

Daily Inqilab ইনকিলাব

১০ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইংরেজি দৈনিক নিউএজ-এ প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) অন্তত ১৫ হাজার ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, এনআইডি কার্ডের যাবতীয় বিবরণ, কল রেকর্ডিং ও সিম ডাটা অন্যের কাছে বিক্রির অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টিট্যারোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ও র‌্যাব-৬ কে তার ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্লাটফরমে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। অতঃপর গোয়েন্দা এজেন্সি দু’টিকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে এনটিএমসি’র ডাইরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল জয়নুল আহসান বলেছেন, আমরা মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির অভিযোগে এটিইউ ও র‌্যাব-৬ কে আমাদের ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্লাটফরমে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছি। ওই দুই এজেন্সি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এজেন্সি দুটিকেই বের করতে হবে ওই ডাটা কাদের কাছে বিক্রী করা হয়েছে। খবরে জানা গেছে, ২৪ এপ্রিল এনটিএমসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরিত এক পত্রে অভিযুক্ত এটিইউ সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন ও র‌্যাব-৬-এর অ্যাসিসট্যান্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ (এএসপি) তারেক আনাম বান্নার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানায়। এনটিএমসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যে চিঠি দেয়, তাতে ব্যক্তির সংখ্যা উল্লেখ না থাকলেও এনটিএমসির ডাইরেক্টর জেনারেল নিশ্চিত করেন, এ সংখ্যা ১৫ হাজার হবে। যাহোক, এটিইউ, প্রধান অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এআইজি এস এম রুহুল আমিনের দাবি, এসপি ফারহানা ইয়াসমিনের তথ্য বিক্রীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি জানিয়েছেন, সাইবার ক্রাইম উইংয়ের কনস্টেবল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও অপারেশন উইংয়ের কনস্টেবল খায়রুল ইসলাম এর সঙ্গে জড়িত এবং তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওদিকে র‌্যাবের মিডিয়া ও লিগ্যাল উইংয়ের ডাইরেক্টর কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযুক্ত এএসপি’র বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যÑ নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি ইত্যাদি ফাঁস হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। ব্যক্তিগত তথ্যাবলী এভাবে ফাঁস হওয়া কিংবা বিক্রী হয়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের। ব্যক্তির তো বটেই, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যও এটা ঝুঁকিপূর্ণ।

নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য যেখানেই সংরক্ষিত থাক, তা নিরাপদ থাকবে, ফাঁস, পাচার বা চুরি হবে না, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিশ্বাস করে যেসব জায়গায় তা রাখা হয়েছে, সে সব জায়গা থেকে তা ফাঁস বা চুরি হয়ে যাচ্ছে। ওই জায়গাগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। যারা সেসব জায়গায় কাজ করেন, তারা সবাই বিশ্বাসযোগ্য নন। তাদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ, টাকাখোর আছেন। রক্ষক যখন ভক্ষক তখন কিছু করার থাকে কি? র‌্যাব ও পুলিশের এন্টিট্যারোরিজম ইউনিট, আইনশৃংখলা, নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত। অথচ তাদের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য সংস্থা থেকে এনে বিক্রী করে দিয়েছেন। এর চেয়ে বড় অপকর্ম ও বিশ্বাসঘাতকতা আর কী হতে পারে! পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ ধরনের সুপকল্পিত ও গুরুতর অপরাধ কনস্টেবলের কাজ নয়। এর সঙ্গে ‘বড়রা’ও কেউ না কেউ যুক্ত আছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এটা কোনো ছোটখাটো ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোথায়, কাদের কাছে কী উদ্দেশে এতগুলো মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রী করা হলো, অবশ্যই তা বের করতে হবে। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে পার্লামেন্ট বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি। নাগরিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংগৃহীত ও সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। দেখা গেছে, তথ্যগুলো সেসব প্রতিষ্ঠানে বা জায়গায় রাখা হয়েছে, তার বেশির ভাগে নিরাপত্তা নেই, নজরদারি নেই, ভংগুর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তথ্য বিক্রী, নষ্ট, পাচার বা চুরি যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। ২০২৩ সালে যখন তথ্য ফাঁসের খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, তখন পর্যবেক্ষকদের তরফে তথ্য নিরাপত্তার জোর দাবি জানানো হয় সেটা যে যথাযথভাবে হয়নি, হাজার হাজার মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রীর ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করে।

অতি উদ্বেগ ও বিস্ময়ের ব্যাপার, এবার আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত দুটি এজেন্সির বিরুদ্ধে তথ্য বিক্রীর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। অর্থ যে কতটা অনর্থের মূল, এটা থেকে সহজেই উপলদ্ধি করা যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বলে শেষ করা যাবে না। গুম-খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ বা অপকর্ম নেই, যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে নেই। এবার নাগরিকদের তথ্য বিক্রীর অভিযোগও যুক্ত হলো। সম্প্রতিকালে পুলিশের সাবেক আইজিসহ অনেক বড়কর্তার নাম চাউর হয়েছে, যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তাদের অপকর্ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো শেষ নেই। চাকরিকালে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া ছাড়া সম্ভব নয়। প্রশাসন, পুলিশ, বিচারবিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই চেরাগ হাতে পাওয়া মানুষের অভাব নেই। সব ক্ষেত্রে চরম দলীয়করণ এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। যারা দলের প্রভাবে বা অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন, তাদের সবচেয়ে বড় কাজ হয়ে দাঁড়ায় যেভাবেই হোক টাকা কামানো। তাদের নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। পুলিশসহ সব ক্ষেত্রেই নৈতিকতার ব্যাপক স্খলন দেখা দিয়েছে। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত পরিতাপজনক। অনিয়ম-দুর্নীতি ও যথেচ্ছাচার সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে। এর দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। দায় যখন সরকারের তখন প্রতিকার সরকারকেই করতে হবে। পুলিশের দুই এজেন্সির বিরুদ্ধে তথ্য বিক্রীর আলোচ্য অভিযোগের বিষয়ে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে ও পর্যায়ে স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ