ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

গাজায় ইহুদি রাষ্ট্রের পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

১২ জুন ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ১২:০৭ এএম

গাজায় বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক, প্রাণঘাতী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শিশু-নারী ও বেসামরিক মানুষ হত্যার রেকর্ড গড়েছে ইসরাইল। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৮অক্টোবর থেকে ২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৭ মাসে ইসরাইল গাজায় ৭০ হাজার টনের বেশি বোমা ফেলেছে। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিবদমান পক্ষগুলোর প্রধান টার্গেট লন্ডন, ড্রেসডেন ও হামবুর্গে ফেলা বোমার চেয়ে বেশি। মাত্র ৮ মাসে সংকীর্ণ গাজাস্ট্রিপে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ নিহত এবং ৮০ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আইডিএফ মূলত ফিলিস্তিনি আরবদের হত্যা ও নির্মূলের মাধ্যমে গাজার উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইতিমধ্যে গাজার ৯৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং শতকরা প্রায় ৬০ শতাংশ স্থাপনা ধ্বংস করেও হামাসের সামর্থ্য ও শক্তিমত্তাকে টলাতে না পেরে ইসরাইলি নেতারা অপ্রকৃতিস্থ, পাগলের মত আচরণ করছে। ইসরাইলী মন্ত্রীসভায় কেউ কেউ গাজায় পারমানবিক বোমা ফেলার পরামর্শও ‘িয়েছেন। প্রায় সব ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে নিরাপ‘ আশ্রয়, খাদ্য, পানীয় ও জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েও ফিলিস্তিনের মুক্তির রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতি তাদের অটুট আস্থা, সমর্থন ও দৃঢ় মনোবল ধরে রাখার বিরল ঘটনায় সারাবিশ্ব বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে আছে। সাড়ে সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামকে সন্ত্রাসী আন্দোলন ও এন্টি সেমিটিজমের তকমা লাগিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করলেও এবার পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অপারেশন আল আকসা ফ্লাড-এর পরে জায়নবাদীরা একটি চুড়ান্ত সামরিক অ্যাকশনের পাশাপাশি ফিলিস্তিন বিরোধী প্রোপাগান্ডাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে সচেষ্ট ছিল। তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আল আকসা অপারেশন শুরুর এক ঘন্টার মধ্যেই ইসরাইলী বাহিনীকে পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। যুদ্ধের শুরুর ২০০তম দিনে হামাসের মুখোপাত্র আবু ওবাইদা এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ৭ অক্টোবর প্রথম ৬০ মিনিটেই দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর পরাজয় এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। যুদ্ধের ৮ মাস পেরিয়ে এসে ইসরাইল সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে চূড়ান্ত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ভেটো ও ছত্রছায়ার গ্যারাকল অতিক্রম করে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এর আগে গতমাসে আন্তর্জাতিক আদালত নেতানিয়াহুসহ তার মন্ত্রীসভার কতিপয় স‘স্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং রাফা অভিযান বন্ধ এবং যুদ্ধ বিরতির আদেশ জারি করেছে। আন্তর্জাতিক আদালত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আহ্বান, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ উপেক্ষা করে রাফা এবং ঘনবসতিপূর্ণ রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে বোমা হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র গাজাবাসির উপর গণহত্যার মাত্রা বাড়িয়েছে।

ইসরাইলের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান থেকে শুরু করে সাবেক জেনারেল এবং সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই হামাস বা হিজবুল্লাহর মত প্রতিরোধ বাহিনীকে পরাস্ত করার সক্ষমতা আইডিএফ’র নেই বলে স্বীকার করেছেন। বাস্তুহীন, খাদ্যহীন, নিরাপত্তাহীন গাজাবাসির কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ১৯৪৮ সালের মে মাসের নাকবার চেয়েও ভয়ঙ্কর গণহত্যার মুখেও কোনো গোপন করিডর ‘িয়ে তারা তাদের জন্মভ’মি ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। পালিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে তারা জন্মভূমিতে মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছে। অথচ গত আট মাসে লাখ লাখ ইসরাইলী ইহুদি দেশত্যাগ করে ইউরোপ-আমেরিকায় চলে গেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইহুদি নাগরিকদের কৃত্রিম রাষ্ট্রটিকে সাড়ে ৭ দশক ধরে শুধু অস্ত্র, নিরাপত্তা প্রযুক্তি আর আগ্রাসি ভূমিকা পালনের ষড়যন্ত্র করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের মুখে এখন তাদের সব যড়যন্ত্র ও কূটচাল নস্যাৎ হয়ে চূড়ান্ত পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইসরাইলীদের সামরিক সক্ষমতা এবং মনোবল ভেঙে পড়েছে। যদিও জায়নবাদের সাথে ধর্মীয় ইহুদিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীরা ইহুদিদের বিভ্রান্ত করে তাদের কথিত প্রমিজ ল্যান্ড ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্রের মূলা ঝুলিয়ে দুইটি মহাযুদ্ধে ইহুদি ব্যাংকার-মহাজনদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছিল। সেই প্রথম ক্রুসেডের আগে থেকেই খৃষ্টানদের সাথে ইহুদিদের বিরোধ ছিল চরমে। আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় মুসলমান শাসকরা ইহুদিদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত হাজার বছর বিশ্বের কোথাও তারা কোনো স্থিতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারেনি। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় উসমানীয় খেলাফতের পতন নিশ্চিত করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিস্তৃত বিশাল সা¤্রাজ্যকে ভাগাভাগি করার মাঝখানে জায়নবাদে উদ্বুদ্ধ ইহুদি সম্প্রদায়কে বাগে রাখতে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি আবাসভূমি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লর্ড বালফোরের ডিক্লারেশন ছিল মুসলমানদের দাবিয়ে রাখতে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক সা¤্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রভূমি। সাড়ে ৭ দশক পেরিয়ে এসে এক সমুদ্র রক্তের প্রতিরোধে সেই ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য এক নতুন অপার সম্ভাবনাময় বাস্তবতার মুখে উপনীত হয়েছে। রাজনৈতিক জনসমর্থন হারানো নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ। ক্ষমতা হারিয়ে কারাভোগের ঝুঁকি এড়াতেই নেতানিয়াহু বিশ্বসম্প্রদায়ের সব আহ্বান উপেক্ষা করে গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করা ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। জায়নবাদী ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনি আরব মুসলমানদের হত্যা করাকে তাদের পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করে। আসমানি কিতাব তাওরাতকে নিজেদের সুবিধামত বিকৃত করে তালমূদকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সেই তালমুদে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র ৮ দশকের বেশি টেকসই হবে না। ইসরাইলী ইহুদিরা তাদের ধর্মগ্রন্থের এই ভবিষ্যদ্বানিকে বিশ্বাস করে আগামি ২০২৮ সালের মধ্যে ইসরাইলের ধ্বংসের আলামত খুঁজে পাচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র তার জন্মের ৮০ বছর পূর্ণ করবে। সে পর্যন্ত ইসরাইল আদৌ টিকবে কিনা তাই এখন তালমুদে বিশ্বাসী ইহুদিদের আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি, ইসলামিক জিহাদের প্রতিরোধ যোদ্বাদের অসম বীরত্ব, অসাধারণ রণকৌশল ও ত্যাগ অন্যদিকে ইহুদি সেনাদের ব্যর্থতা, পরাজয় ও ভেঙেপড়া মনোবল তালমুদের ভবিষ্যদ্বানীকে সত্যে পরিনত করতে শুরু করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া পশ্চিমা শিক্ষার্থীদের ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলনের ঢেউ পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের উপর জায়নবাদের ভিত্তি ও প্রভাবকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সমর্থন পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক-নির্মম সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আটমাসের বেশি সময় ধরে শুধু টিকে থাকা নয়, দুর্দ- প্রতাপে লড়াই করে জায়নবাদি বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে দিতে না পারলে জায়নবাদী ইসরাইলীদের মধ্যে ধ্বংসের এই আতঙ্ক তৈরী হতো না। প্রকৃত প্রস্তাবে ইসরাইল কখনোই একটি বৈধ রাজনৈতিক এনটিটি ছিল না। এ কারণেই অর্থডক্স জুদাইজমে বিশ্বাসী ইহুদিরা প্রথম থেকেই এমন অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নিতে পারেনি। তারা বিভিন্ন সময়ে ইসরাইল রাষ্ট্রের বৈধতার প্রশ্নে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট জগতের প্রভাবাধীন জায়নবাদীরা এতদিন ধরে ইসরাইলের ঔদ্ধত্যকে বাঁচিয়ে রাখলেও এবার সেই ঔদ্ধত্যই তাদের একঘরে হয়ে পড়া থেকে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক সহায়তা ইসরাইলের জন্য কোনো কল্যান বয়ে আনতে পারেনি। তারা কখনোই ইসরাইলকে একটি বৈধ রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেনি। এখন পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই বলছেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরাইলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এই সত্য কি ইঙ্গ-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদিরা বুঝতে অক্ষম ছিল, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা ইসরাইলকে সাপ মারার লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে তাদের পুঁজিবাদী স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে? এবার কিন্তু বাক্সবন্দি ফিলিস্তিন ভয়ানক অগ্নিময় স্ফিংস হয়ে তার পুনরুত্থান ঘটিয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন। আর অহঙ্কারী-অত্যাচারীদের পতন ও চরম শাস্তির বার্তা দিয়েছেন। সুরা বনি ইসরাইলের বিভিন্ন আয়াতে, সুরা বাকারার ১১৪ নাম্বার আয়াতে বিপথগামী ইহুদিদের পতনের যে সব আলামত দেয়া হয়েছে তার সবগুলোই এখন ক্রমশ পরিষ্ফুট হতে শুরু করেছে। গত ২৮ মে তারিখে ইউরোপের তিনটি দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে একযোগে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের সব দেশকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একদিকে, ইসরাইল রাষ্ট্রের শাসকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানার নোটিশ, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে মার খেয়ে তাদের উদ্ধত সামরিক বাহিনীর পলায়নপর অবস্থায় তারা জাতিসংঘের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল। গায়ের জোরে রাষ্ট্র গঠনের ছিয়াত্তর বছর পেরিয়ে এসেও ইসরাইল একটি বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে তার স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে দশকের পর দশক ধরে ষড়যন্ত্র, দখলদারিত্ব, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালিয়েও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার অধিকারকে দাবিয়ে রাখতে পারছে না ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীরা।

রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের পেছনে সত্যের আলো, ত্যাগের মহিমা এবং অধিকারের প্রশ্ন জড়িত না থাকলে সে লড়াইয়ে চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়না। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা, সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র এবং বিত্ত-বৈভবে সুরক্ষিত হওয়ার পরও রাষ্ট্রহীন, অবরুদ্ধ ধন-সম্পদহীন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে ইসরাইলের পরাজয় সেই সাক্ষ্য বহন করছে। তেল আবিবের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধবাজ ইসরাইলী নেতাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহরে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ইহুদিরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সমর্থনে ইসরাইলকে বয়কটের ডাক দিচ্ছে। লাখ লাখ ইহুদিরা যখন তাদের স্বপ্নের প্রমিজড ল্যান্ড ছেড়ে পিতৃপুরুষের দেশে ফিরে যাচ্ছে, তখন চরম প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মৃত্যুর আশঙ্কাকে হেলায় ভ্রুকুটি করে ফিলিস্তিনের ঐক্য ও সাহসী ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সচেতন অনেক মানুষ ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ যুদ্ধের সাহসী ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে একযোগে ৩০ নারীর ইসলাম কবুলের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইসরাইলে জন্মগ্রহনকারী বৃটিশ ইহুদি লেখক, কলামিস্ট গিলাদ আজমনের লেখা একটি নিবন্ধের শিরোনাম ‘ইনসাইটফুলনেস অ্যান্ড প্যালেস্টাইন’। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনে বিভিন্ন গ্রুপের বহুমাত্রিক তৎপরতা, ও বিভ্রান্তির নানা রকম কৌশল নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন গিলাদ আজমন। জায়নবাদী ইহুদিদের নির্বুদ্ধিতা এবং ফিলিস্তিনের সংগ্রামের সাথে একটি গভীর অন্তরদৃষ্টি না থাকলে এমন প্রতিকূল বাস্তবতায় বিজয়ের স্বীকৃতি আসত না। সম্প্রতি ইসরাইলের শীর্ষ দৈনিক হারেজের এক সম্পাদকীয়র শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘দ্য ব্রুটালাইজেশন অব ইজরায়েল ইজ ওয়েল আন্ডারওয়ে, ইফ উই ডু নট অ্যাক্ট, ইটস কলাপ্স ইজ অনলি অ্যা ম্যাটার অব টাইম’, ‘ইসরাইলকে একটি স্বাভাবিক নৃশংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার প্রয়াস চলছে। আমরা যদি এর প্রতিবাদ না করি, ইসরাইলের পতন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ জেরুজালেমের রাস্তায় জেরুজালেম দিবস পালনের নামে কাহানিস্টদের হিংসাত্মক আস্ফালন, ভয়ে আরব ফিলিস্তিনিদের ঘরবন্দী থাকার ক্রমবর্ধমান জায়নবাদী বর্বরতাকে হারেজ ইসরাইল ধ্বংসের অশনি সংকেত হিসেবে দেখছে। জুইশ ডিফেন্স লিগ ও ইসরাইলী কচ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড মেইর কাহানে একজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। এমনকি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও তাকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। তিনি ইসরাইলকে আরব ও মুসলমান মুক্ত করে একটি ইহুদি ধর্মরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংকল্প করে আশির দশকে কচ পার্টির কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে একটি ইহুদি জায়নবাদী সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আততায়ীর হাতে নিহত হন। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে মিশরীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিককে বিচারের সম্মুখীন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। সই ঘটনাকে স্মরণ করে কট্টরপন্থী ইসরাইলীরা জেরুজালেম দিবস পালন করতে গিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী উন্মাদনা ছড়িয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে থাকে। ইসরাইলকে গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার অঙ্গীকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি নৃশংস ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিনত করার মধ্য দিয়ে এর পতনের গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল। অস্ত্রের জোরে জায়নবাদ ও গ্রেটার ইসরাইল গঠনের পরিকল্পনা ছিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অর্ধ শতাব্দী আগেই। শান্তি ও নিরাপত্তার প্রয়াসকে অগ্রাহ্য করে গাজায় নৃশংস গণহত্যা ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের পতনের আত্মঘাতী তৎপরতার চূড়ান্ত রূপ। লিবারেল ইহুদিরা সবার আগে তার স্বরূপ প্রত্যক্ষ করে মতামত দিয়েছে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা