ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

মূল্যস্ফীতির অসহনীয় চাপে সাধারণ মানুষ

Daily Inqilab মিজানুর রহমান

১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি রিজার্ভের ঘাটতি, ডলারের উচ্চমূল্য, আর্থিক খাতের চরম বিশৃঙ্খলা, অর্থপাচার, লাগামহীন দুর্নীতিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন একটা বৈরী সময়ে উপস্থাপিত হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। বাজেটে নানা সংকটের কথা বলা হলেও এর উত্তরণের কৌশলগত স্পষ্টতা নেই। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরাতে নেই কোনো পদক্ষেপ। অর্থ পাচাররোধ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ অপচয় কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নেই সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা। আইএমএফ-এর শর্তপূরণ, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি এমন পর্যায় পৌঁছেছে, তা ভোক্তার আয়কে ছাড়িয়ে গেছে বস্তুত নিত্যপণ্য নিয়ে একের পর এক কারসাজির ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দুর্ভোগের চরম সীমানায় পৌঁছেছে। খাদ্যমূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য বিষয় অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। গড় মজুরি বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, যা শুধু উদ্বেগজনকই নয় অর্থনীতির জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জও।

২০২৪- ২৫ অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামানো এবং জিডিপির লক্ষ্য মাত্রা ৬.৮ শতাংশে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যা করা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয় বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সমম্প্রতি রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘সানেম বাজেট পর্যালোচনা ২০২৪-২৫ শীর্ষক’ অনুষ্ঠানে সংস্থাটির পক্ষে ড. সেলিম রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নামানো যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশে নেয়াও সম্ভব হবে না। সংস্থাটির পর্যালোচনা অনুযায়ী একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি রাজস্ব সংগ্রহ বিনিয়োগসহ অন্য টার্গেটগুলো বাস্তবসম্মত হয়নি। এসব টার্গেট বাস্তব সম্মত না হলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বাড়তে পারে। সানেমের মতে, দেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকই নেতিবাচক। টানা ১৫ মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে দেশ। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কোঠায় অবস্থান করছে। নানা উদ্যোগের ফলে অর্থনীতি সঠিক পথে ফিরছে না। সময়মত সংস্কার না হওয়ায় অর্থনীতির ভিত্তিগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এ জন্য বৈশ্বিক ধাক্কার ধকল সইতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য দুই বছরের পরিকল্পনা থাকা দরকার। এক বছর করে যে বাজেট হচ্ছে তাতে বোল্ড পলিসি নেয়া যাচ্ছে না। পলিসি যাতে পরিবর্তন না হয় সে ব্যাপারেও পরিকল্পনা থাকা দরকার।

আশেপাশের অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারলে ও বাংলাদেশ পারছে না। কারণ, দীর্ঘদিন সুদহার এক জায়গায় ধরে রাখা হয়েছে, যা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। সুদ হার বাড়লে চাহিদা কমে আসে। সুদহার এত বেশি বাড়ানো হয়েছে, ইতোমধ্যে চাহিদা সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় ক্রটি থাকায় পণ্যের দাম বাড়ে। সামান্য অজুহাতে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কী কারণে দাম বাড়লো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে সহজ কর আদায়ের পথ পরোক্ষ করের বিস্তার করা হয়েছে। এটা মূল্যস্ফীতির জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সাধারণ মানুষের কিছুটা স্বস্তি দিতে কোনো উদ্যেগ নেই বাজেটে। উল্টোটা হলো, কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের যাতায়াতেও খরচ বাড়ছে।

ওদিকে বাজেটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বাজেটোত্তোর বক্তব্যে বলেন, ওএমএস, ফ্যামিলি কার্ডসহ যেসব কার্যক্রম চলছে তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা চাইলে বাজেটের আকার আরও বড় করতে পারতাম। তবে দ্রব্যমূল্যের ওপর যেন চাপ না পড়ে সেজন্য আকার কমিয়ে রাখা হয়েছে। আশা করছি, এ বছরের শেষদিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি বর্তমান মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে সুদহার বাড়িয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আসা কমেছে। একই সময়ে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে বর্তমানে ডলারের দর নির্ধারণে ক্রলিং পেগ চালু, অফসোর ব্যাংকিং নীতিমালা সহজ করায় দ্রুতই ডলার সংকট কেটে যাবে। আগামী অর্থবছরে আশা করা যাচ্ছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ পৌঁছবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও কিছুদিন সংকোচনমূলক নীতি কৌশল অব্যাহত থাকবে। তবে এতে প্রবৃদ্ধি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে লক্ষ রাখছি আমরা।

বলা বাহুল্য, বাজার অব্যবস্থাপনার কারণে মূল্যস্ফীতির ধকলে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে পারলে, সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্য বা সিন্ডিকেট নির্মূল করতে পারলে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেতে বাধ্য। এছাড়া সাধারণ জনগণের সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট
mizannurrahman207@gmail


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা