ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ভারত-মিয়ানমার থেকে গরু চোরাই বন্ধ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৪ জুন ২০২৪, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:২৮ এএম

গো-রক্ষার নামে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে গত দশকের শুরুতে বাংলাদেশে গরু রফতানি নিষিদ্ধ করে দেয় ভারত। তাদের এহেন ঘোষণায় শুরুতে বাংলাদেশে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেলেও দেশের কৃষক ও খামারিদের দৃঢ়তা ও অক্লান্ত শ্রমে মাত্র দু’ বছরের মধ্যেই প্রাণী সম্পদে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। কোরবানির ঈদে এক কোটির বেশি পশুর চাহিদা পূরণে এক সময় বিপুলভাবে ভারত ও মিয়ানমারের গরুর উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের উপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য শাপে বর হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে বিপুল পরিমাণ গরু পালন করে ঈদের ঈদের চাহিদা পূরণ করেও লাখ লাখ গরু উদ্বৃত্ত থাকতে দেখা গেছে। এসব গরু সারা বছর গরুর গোশতের চাহিদা পূরণে সফলভাবে ভূমিকা পালন করে চলেছে। যদিও দেশে গো খাদ্যের সংকট রয়েছে এবং আমদানিকৃত গোখাদ্যের কারণে গরু-ছাগল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর গোশতের দাম এখনো দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে। তবে পশু পালনে নিজস্ব নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে গোখাদ্যের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে নতুন আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে উৎপাদন খরচ কমিয়ে এক সময় গরুর গোশতের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

কৃষি ও শিল্পে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও সম্ভাবনার বিরুদ্ধে ভিনদেশি এজেন্টদের ষড়যন্ত্র কোনো নতুন বিষয় নয়। ধান-চালের ভরা মওসুমে ভারত থেকে চাল আমদানির সুযোগ দিয়ে ধান-চালের দামে ধস নামিয়ে কৃষকদের উৎপাদন খরচ ও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে নিঃস্ব করে দেয়ার বাস্তবতা আমরা দেখেছি। আবার খাদ্য ঘাটতির সময় বিশেষ ফরমান জারি করে বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধ করে চালের মূল্যস্ফীতি ও চরম সংটের মুখে ঠেলে দেয়ার অভিজ্ঞতাও আমাদের হয়েছে। এ থেকে আবারো এ কথাই প্রমাণিত হয়, খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরনির্ভরশীল থাকা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। গত চার দশকে বাংলাদেশের কৃষক, কৃষি বিজ্ঞানী ও খামারিরা অসাধ্য সাধন করেছেন। ধান-চাল, মৎস্য, পোল্ট্রি, সব্জি, গোশত ও দুগ্ধ উৎপাদনে সমানতালে অগ্রগতি অর্জনের মধ্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে সফল হয়েছে। তবে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ে একটি সিন্ডিকেটেড কারসাজি ও মুনাফাবাজির তৎপরতা সদা সক্রিয় রয়েছে। কৃষক-খামারিদের খতিগ্রস্ত করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে পরনির্ভরশীল রাখাই তাদের গোপন অভিসন্ধি। সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে ভারতীয় গরু রফতানি বন্ধের কারণে বাংলাদেশ গোসম্পদে সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এখন চোরাই পথে ভারত-মিয়ানমার থেকে গরু এনে খামারিদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়ার অপতৎরতা চলছে। দেশে ছোট-বড় প্রায় ২০ লাখ গবাদিপশুর খামারে এবার কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে এ সংখ্যা কোরবানির ঈদের চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ বেশি। অর্থাৎ কোরবানির পশুর হাটে চাহিদার ঘাটতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। উৎপাদন খরচ ও লাভসহ সঠিক দাম পেলে খামারিরা উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের হাটগুলোতে এরই মধ্যে পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে অবাধে গরু আমদানির কারণে এবার পশুর মূল্যে ধস নেমে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খামারিরা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কোরবানি ঈদের আগে হঠাৎ করে দেশের ৩৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-মহিষ দেশে প্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে পশুর হাটে মূল্য সংকটে পড়ে খামারিরা বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশি আগন্তুক গবাদিপশুর মাধ্যমে দেশি গবাদিপশুর মধ্যে নানা রকম রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। গতকাল সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ দেশের ৩৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে গরু চোরাচালানির সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাসহ গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। বিএসএফ’র ক্রমবর্ধমান অপতৎপরতার বিপরীতে সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি’র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন দমনে কঠোর ভূমিকা পালন করলেও সীমান্তে মাদক, অস্ত্র, সোনা, অবৈধ পণ্য চোরাচালান বন্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ব্যর্থতাই ধরা পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে গরু চোরাচালান বন্ধের নামে সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে। এখন বাংলাদেশের কৃষক ও খামারিরা যখন ভারত-মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ চোরাচালান বন্ধ করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে, তখন সীমান্তে হাজার হাজার গরু-মহিষ চোরাচালান হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী এমপিরাও এবার সীমান্ত পথে গরু চোরাচালান কঠোরভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সীমান্তে বিজিবির ব্যর্থতার কারণে দেশের খামারিদের স্বপ্নভঙ্গ ও ডেয়ারি খাতের সম্ভাবনা হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে চলেছে। কোরবানির পশুর হাটগুলো সবে মাত্র জমে উঠেছে। আগামী তিনদিনে লাখ লাখ পশু বেচাকেনা হবে। এ সময় সীমান্ত দিয়ে বিদেশি গরু, মহিষ, উট অনুপ্রবেশ বন্ধে বিজিবি, পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে তা বন্ধ করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা