ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৪ এএম

ঈদে জাল নোটের প্রচলন বেড়ে যাওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিশেষ করে কুরবানির পশুর হাটকে টার্গেট করে জালকারিরা জাল নোটের ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়। মাঝে মাঝে জাল নোট চক্র ধরা পড়লেও তা নির্মূল করা যায়নি। আইনের ফাঁক- ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। জাল নোটের কবলে পড়ে অনেক মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কুরবানির পশুর হাটে এই জাল নোটের বেশি শিকার হয়, গ্রাম থেকে আসা পশু ব্যবসায়ীরা। তাদের জাল নোট চেনা বা এ সম্পর্কে ধারণা থাকে না বললেই চলে। এ সুযোগটিই জাল নোট চক্র নিয়ে থাকে। এছাড়া সারা বছরই এ চক্র কোনো না কোনোভাবে বাজারে জাল নোট ছাড়ে। জাল নোট বেশি হয় ১০০০ ও ৫০০ টাকা নোটের। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত ৫ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১০০০ টাকার ৮৮ হাজারটি এবং ৫০০ টাকার ২০ হাজারটি জব্দ করেছে। গত চার মাসে ১০০০ টাকার জাল নোট ৯ হাজার ৭৮৯টি এবং ৫০০ টাকার ১৫৮৮টি জব্দ করেছে। দেখা যাচ্ছে, বাজারে জাল নোটের বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা ঠেকানো যাচ্ছে না। ঈদের এই সময়টায় আর্থিক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতির মতো অপরাধ বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। গতকাল ইনকিলাবে দুটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরে র‌্যাব পরিচয়ে ১৯ লাখ টাকা ডাকাত চক্র ছিনতাই করে র‌্যাবের হাতেই ধরা পড়েছে। বগুড়ায় ব্যাংকের ভল্ট থেকে ২৯ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়েছে। এতে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা পেয়ে বসেছে।

জাল নোট চেনা ও শনাক্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেয়। এ বছর তা পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ কুরবানির পশুর হাট যেখানে বেশি জাল নোট চক্র সক্রিয় থাকে, তা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো জরুরি ছিল। পশুর হাটের ইজারাদারদেরও জাল নোট শনাক্তের জন্য মেশিন বসানো বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা উচিৎ ছিল। এটা এক ধরনের উদাসীনতা ছাড়া কিছুই নয়। জাল নোট চক্রের খপ্পড়ে পড়ে যদি গ্রাম থেকে আসা পশু ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত কিংবা লোকসানের মুখে পড়ে, তাহলে তাদের দুর্ভোগের দায়ভার বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরই বর্তাবে। ঈদের সময় রাজধানী ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যায়। অনেকে বাসা-বাড়ি তালাবদ্ধ করে গ্রামে যায়। এ সুযোগে চোর-ডাকাত সক্রিয় হয়ে উঠে। আবার পথে-ঘাটে ছিনতাইকারি, মলম পার্টি থেকে শুরু করে নানা প্রতারক চক্র সক্রিয় থাকে। এসবের শিকার হয়ে অনেকে যেমন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে, তেমনি জীবনহানিরও শিকার হয়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেও ঘটনা ঘটে। তাতেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। ফলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনাতাইয়ের শিকার মানুষকে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়। বলা হয়ে থাকে, সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে, কারা কোন এলাকায় ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। মাঝে মাঝে তাদের ধরা হলেও জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর বেড়াল খেলা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ডাকাত চক্র এখন অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাসাবাড়িসহ ব্যাংক ডাকাতি শুরু করেছে। এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, র‌্যাব পরিচয়ে পর্যন্ত তারা ছিনতাই বা ডাকাতি করছে। মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের ধরে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে বাহবা নেয়ার প্রবণতা দেখালেও তাতে কোনো লাভ হয় না। ডাকাত চক্র নির্মূল হয় না। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা সক্রিয় থেকে যায়। গ্রফতারকৃতরাও কিছুদিন পর জেল থেকে বের হয়ে পুনরায় ডাকাতি শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন জানে না, কিভাবে এদের নির্মূল ও প্রতিহত করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই থেকে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানির শিকার হয়, তাদের অনেকে নিঃস্ব হয়ে যায়।

ঈদের এ সময়টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে ঈদ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অধিক তৎপর হওয়া বাঞ্চনীয়। পশুর হাটে যাতে জাল নোট চক্র সক্রিয় হতে না পারে, এজন্য তাদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি ও হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাকে সচেতন করার বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। কেবল লোকদেখানো বিশেষ অভিযান পরিচালনা করলে হবে না। সারা বছরই যাতে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজসহ অন্যান্য অপরাধী কোনো ধরনের কর্মকা- চালাতে না পারে, এ ব্যাপারে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা