ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ দিল্লী সফর

Daily Inqilab ইনকিলাব

২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম

তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৯ জুন দিল্লীতে উড়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর দশদিনের মাথায় ২ দিনের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ফের নয়াদিল্লী যাচ্ছেন তিনি। নানাবিধ কারণে এ সফরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর হিসেবে দেখছেন রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকরা। চলতি বছর ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই যথাশীঘ্র শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ ও এজেন্ডা প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। শপথ গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের দিল্লী সফরের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ সম্ভাব্য সফরের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এজেন্ডা নির্ধারিত হয়েছিল বলে ধরে নেয়া যায়। লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও আসন সংখ্যাধিক্যে জোটসঙ্গীদের নিয়ে মোদির ক্ষমতা ধরে রাখার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডাগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মওকা পাওয়া গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে ভারতের প্রত্যাশিত এজেন্ডাগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আগামিকাল শনিবার দিল্লীর হায়দারাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সে সব বৈঠকে অন্তত ১৪টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও এমওইউ সাক্ষরের কথা রয়েছে। প্রাধান্য পেতে পারে, প্রতিরক্ষা, কানেক্টিভিটি, তিস্তার পানিচুক্তি, বন্দর, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি। আঞ্চলিক বাস্তবতায় আগামী বছরগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও নীতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারমূলক এজেন্ডাও থাকতে পারে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের এজেন্ডা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চান তার একটি দিক নির্দেশনা এবং এক ধরণের রূপকল্পের কথা উঠে আসবে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে।’ শেখ হাসিনা এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্যামিস্ট্রি নতুন করে বলার কিছুই নেই। তবে পরিবর্তিত আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চীন এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং ভারতের একতরফা আধিপত্যবাদী নীতির সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এক জটিল বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উন্নয়ন প্রকল্পসমুহ এগিয়ে নেয়া এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় চীনের বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন অংশীদারিত্বের বিপরীতে ভারতের সব দাবি পুরণ করে এগিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। বিশেষত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের আগ্রহ, ফিজিবিলিটি কার্যক্রম ও বিনিয়োগ প্রস্তাব অনেক দূর এগিয়েছে। তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে ভারতের টালবাহানা এবং চীনের প্রস্তাবে তিস্তা অববাহিকার চার কোটি মানুষের মধ্যে যে নতুন আশাবাদ জেগে উঠেছে তা’ রুদ্ধ করার ভারতীয় টোপ গেলা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হতে পারে। একইভাবে মংলা বন্দর ব্যবহার ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। চীনও মংলা বন্দর পরিচালনায় আগ্রহী। পরস্পর বৈরী আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের প্রতিদ্বন্দিতা এড়িয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে সমুদ্র বন্দর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে রাখাই সমিচীন বলে মনে করছেন দেশীয় বিশ্লেষকরা।

ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি যা দিয়েছেন তা চিরদিন ভারতকে মনে রাখতে হবে। বিশেষত ভারতের সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করতে শেখ হাসিনা অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ হাসিলে সহায়তা করেছেন। সেই সাথে প্রায় বিনা শর্তে, বিনামূল্যে বাংলাদেশের বন্দর, সড়কপথ, রেল ও নৌপথ ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রানজিট, করিডোর ও ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ দিয়েছেন। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে নুন্যতম রাজস্ব সুবিধাও পায়নি বাংলাদেশ। অথচ এসব সুবিধা দেয়ার আগে এক শ্রেণীর দালাল বলেছিলেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের টাকায় বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মত ধনী হয়ে যাবে। গত এক যুগ ধরে দুৃই দেশের সরকার সম্পর্কের অনন্য উচ্চতার কথা বলছেন। অথচ বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তিস্তার পানি বন্টন কিংবা চুক্তি অনুসারে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারতের কোনো আগ্রহ নেই। বরাবরের মত এবারো তিস্তা চুক্তির মূলা ঝুলানো রয়েছে। এই মুহূর্তে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও এসব অঞ্চলে খরা এবং নদীর পানির সংকটের কারণে কৃষি আবাদ ব্যহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের পানি সংকটের জন্য ভারত দায় এড়াতে পারে না। বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিবর্ষণে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা বন্ধ হয়নি। এখন বাংলাদেশের ভূ-খ- ব্যবহার করে নতুন রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আবদার নিয়ে হাজির হয়েছে ভারত। ভারতের স্বার্থে রেলের অনেক কিছু করা হয়েছে, আর নয়। কানেক্টিভিটির নামে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের কারণে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার ও রফতানি বাণিজ্যের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের উপর ক্রমবর্ধমান ভারতীয় স্বার্থ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষুন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রীর এই ভারত সফরে আন্ত:নদীর পানি, বাণিজ্য বৈষম্য, পাটও পাটজাত পণ্যের উপর এন্টি ডাম্পিং ব্যারিয়ারসহ বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। এমন কোনো সমঝোতা বা চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না যাতে দেশের স্বার্থ একটুকু ব্যহত বা ক্ষুন্ন হয়। গত ১০ বছরের দুদন্ড প্রতাপে দেশ শাসনের পর এখন নরেন্দ্র মোদি সবচেয়ে দুর্বল ও ভঙ্গুর সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যে কোনো সময় মোদি সরকারের পতনের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ, সার্বভৌম সমতা এবং সৎপ্রতিবেশিসুলভ। এসব ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা