ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

পানিবদ্ধতায় নগরবাসীর অসহনীয় দুর্ভোগ

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

গত শুক্রবার বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সড়ক ও এলাকা ডুবে গেছে। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘন্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তাতেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। মতিঝিল, শান্তিনগর, পল্টন, দৈনিক বাংলা মোড়, সেগুন বাগিচা, আজিমপুর, ধানমন্ডি, বিজয় সরণী, কাজীপাড়া, কল্যাণপুর, গ্রিণরোড, মৌচাক, আরামবাগ, নটরডেম কলেজ প্রভৃতি এলাকা ও সড়ক ডুবে যায়। এতে চলাচলের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গন্তব্যস্থলে পৌঁছার ক্ষেত্রে নগরবাসীকে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর কোনো কোনো এলাকায় দশ-বার ঘন্টা পর্যন্ত পানির নিচে থেকে যায়। যুগের পর যুগ ধরে নগরবাসী পানিবদ্ধতার দুর্ভোগের শিকার হলেও ওয়াসা-সিটি করপোরেশন তা নিরসন করতে পারেনি। গত এক যুগে এ খাতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও তার বিন্দুমাত্র সুফল মেলেনি। জনগণের এই অর্থ ব্যয় করেও কেন পানিবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না, তার জবাবদিহি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করতে দেখা যায় না। আগে পানিবদ্ধতা নিয়ে সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা পরস্পরের উপর দায় চাপাত। কেউ দায় নিতে চাইত না। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসা আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) দুই সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়। গত চার বছরে প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেও দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীর পানিবদ্ধতার সমাধান করতে পারেনি ।

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হবে, এটা জানা কথা। জানা থাকা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশনকে পানি নিষ্কাশনে আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। দুই মেয়রকে বড় বড় কথা বলতে শোনা যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ওয়ারিতে এক অনুষ্ঠান বলেছিলেন, বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি নিষ্কাশিত হবে। সর্বশেষ গত ১৯ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকার পানিবদ্ধতার সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। গত শুক্রবারের বৃষ্টিতে রাজধানীতে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তার এসব কথা পানিতে ডুবে গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও বড় বড় কথা বলতে শোনা যায়। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। নগরবিদরা বলেছেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে কিছু নিয়মিত ও ছোট কাজ রয়েছে। এর মধ্যে খাল ও নালা পরিস্কার করা একেবারে প্রাথমিক কাজ। সিটি করপোরেশন এ কাজটিও যথাযথভাবে করছে না। পানিবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। অথচ সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বিবেচনা করে পানিবদ্ধতার সমাধানে যে ধরনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, বিগত বছরগুলোতে তার কিছুই করা হয়নি। এমনকি সড়কের পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কে থাকা ছিদ্রযুক্ত যে ঢাকনা থাকে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো পরিষ্কার করা হয় না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পানিবদ্ধতা নিরসনে বছরওয়ারি শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও তার ন্যূনতম ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এটা জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। সমস্যা চিহ্নিত হয়ে আছে, সামাধান পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু পানিবদ্ধতাই নয়, যানজট নিরসনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। ঢাকা বহু আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণ দূরে থাক, দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। অথচ রাজধানীর উন্নয়নে অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব সংস্থার মাধ্যমে উন্নয়নের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করেও ঢাকার অবনমন ঠেকানো যাচ্ছে না। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি যে এর অন্যতম কারণ, তা নগরবিদরা সবসময়ই বলে আসছেন। তারা এখন এ শঙ্কা করছেন, রাজধানী এক সময় পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে।

পানিবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের যেমন দায়িত্ব, তেমনি নগরবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে। যত্রতত্র পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ অপচনশীল বর্জ্য ফেলার কারণে যেটুকু ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে জমে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা বন্ধ করা হয়নি। বরং অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এর ব্যবহার অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী পলিথিন ও পলিথিন থেকে উৎপাদিত দ্রব্য ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। উন্নত দেশ তো বটেই, উন্নয়নশীল অনেক দেশে পলিথিন ব্যবহার নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে এর অবারিত ব্যবহার হচ্ছে। আইন থাকলেও তার কোনো কার্যকারিতা নেই। পানিবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে পলিথিন বর্জ্য অন্যতম বাধা হয়ে রয়েছে। এছাড়া বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে জনসচেতনতার কোনো বালাই নেই। যে যেখানে পারছে, বর্জ্য ফেলছে। এক্ষেত্রে আমাদের সভ্যতা ও রুচি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অথচ ছোট্ট আয়তনের দেশ সিঙ্গাপুরে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে সরকার এমন আইন করেছে যে, ছোট্ট কাগজের টুকরা সড়কে ফেললে জরিমানসহ শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের দেশে এটি কল্পনা করা না গেলেও অন্তত জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজটি করা যায়। সিটি করপোরেশন এ দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমসহ প্রত্যেক নগরবাসীকে এমএমএস পাঠিয়ে ক্যাম্পেইন চালাতে পারে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ ওয়ার্ড পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ পানিবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে পানিবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী ব্যবস্থার কাজ দুই সিটি করপোরেশনকেই করতে হবে। কোনো ধরনের অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই। যেখানে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণের অর্থ ব্যয় হবে, তার সুফল থেকে তারা বঞ্চিত হবে, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দুই মেয়রকে কথার ফুলঝুরি না ছড়িয়ে কাজ করে দেখাতে হবে।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা