ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ব্যাংক খাতের দুরবস্থা দূর করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১৩ এএম

ব্যাংক খাতের অবস্থা শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। কোনো ব্যাংকই প্রত্যাশানুগ আমানত পাচ্ছে না। ঋণও চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছে না। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস টলে গেছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট স্বাভাবিক কারণেই বেড়েছে ও বাড়ছে। সরকার ব্যাংক খাত থেকে যথেচ্ছ টাকা তুলে নিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঋণ তো পরের কথা, আমানতকারীদের জরুরি প্রয়োজন পূরণেও অপারগতা প্রদর্শন করছে কখনো কখনো। ধার করতে হচ্ছে অন্যান্য ব্যাংক কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। গত আর্থিক বছরের শেষে দু’দিনে টাকার সংকটে বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩১ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক খাতের টাকার সংকট ও সরকারের টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে। এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ব্যাংক রক্ষার নামে টাকা ছাপানো অব্যাহত রাখলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। একইভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিলেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তার মতে, মূল্যস্ফীতি রোধে টাকা ছাপানো বন্ধ করতে হবে। তিনি যাই বলুন, অবস্থা এমন যে, টাকা ছাপানো বন্ধ করার পথ নেই। বলা বাহুল্য, এ অবস্থায় ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। ঋণও দিতে পারবে না। এর মধ্যেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আগের মাসের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা কিনা বিগত ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় ১২ শতাংশ কম। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার মানে বিনিয়োগ কমা। বিনিয়োগ কমা মানে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কমা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিকে সবল ও গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থাই দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এমন কোনো সূচক নেই, যা নেতিবাচক প্রবণতায় আক্রান্ত নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনি শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা রফতানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ডলার সংকট এতটাই প্রকট যে অতীতে এমন সংকট কখনোই দেখা যায়নি। অন্য দেশ থেকে ধার নিয়ে রিজার্ভ ও ডলার সংকট মোচনের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক দিন চলবে না। এক সময় হয়তো কেউ আর ধার দেবে না বা দিতে চাইবে না। রিজার্ভ ও ডলার সংকট যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হলে রফতানি আয়, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে অর্থ পাচার ডেড স্টপ করতে হবে। রফতানি আয় বাড়াতে যে প্রণোদনা দেয়া হতো, তা এখন কমানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, এটা কমানো ঠিক হয়নি। এতে আয় বৃদ্ধি নিরুৎসাহিত হতে পারে। বলা জরুরি, নানা কারণে রফতানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। রফতানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্ট পণ্যই প্রধান। মোট রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ গার্মেন্ট পণ্য। গার্মেন্ট পণ্যের রফতানি এখন ইউরোপীয় বাজারে কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের অবস্থাও ভালো নয়। ওদিকে জনশক্তি রফতানি আয় প্রবৃদ্ধিও কমছে। বিদেশি অনুদান ও সহায়তার পরিমাণও কমছে। বিদেশি মুদ্রা আগমের তিন উৎসকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে রিজার্ভ ও ডলারের স্থিতি কাম্য ও সন্তোষজনক পর্যায়ে আসবে। সেই সঙ্গে অর্থপাচার ঠেকাতে হবে। প্রতি বছর প্রায় লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। অর্থনীতির দৈন্যদশার পেছনে দুর্নীতির ভূমিকা অত্যন্ত জোরালো। এমন কোনো ক্ষেত্র ও পর্যায় নেই, যেখানে দুর্নীতি নেই। দুর্নীতি কী মাত্রায় চলছে তা বুঝার জন্য সম্প্রতি উদ্ঘাটিত কয়েকজন শীর্ষ পদাধিকারীর দুর্নীতির খতিয়ানই যথেষ্ট। দুর্নীতি রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে যদি অর্থনীতিকে সুস্থ ও হুমকিমুক্ত রাখতে হয়।

অর্থনীতির পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাংক খাতের ভূমিকা কতটা সেটা সকলেরই জানা। অথচ, এর প্রতি যথেষ্ট অবহেলা প্রদর্শন করা হয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, দলবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি কারণে অনেক ব্যাংক বোঝায় পরিণত হয়েছে। সেইসব ‘অচল’ ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে ঋণ প্রদানসহ নানা পথ অবলম্বন করা হচ্ছে। এসব ব্যাংক আসলে ফোকলা হয়ে গেছে, টিকে থাকার শক্তি তাদের নেই। সুতরাং অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা অনেক দিন ধরে বলা হলেও সরকার তেমন একটা গা করছে না। গত নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার করা হবে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থা অনেকদিন ধরেই এ সংস্কারের কথা বলে আসছিল। আইএমএফ’র ঋণের অন্যতম শর্তই হলো সংস্কার। কিন্তু নির্বাচনের পর ৬ মাসের অধিক সময় চলে গেলেও সংস্কারের তেমন কোনো উদ্যেগ দেখা যায়নি। জাতীয় স্বার্থেই আর্থিক খাতে বিশেষত ব্যাংক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনায় সংস্কার প্রয়োজন। আমরা আশা করতে চাই, সরকার অবিলম্বে যথাযথ উদ্যোগ নেবে। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে মানুষের অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। মানুষ পণ্যমূল্যের চাপে চিড়েচ্যাপটা, বেকার, কর্মহীন। বেঁচে থাকাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। পণ্যের সঙ্গে সেবাপণ্যের দামও দফায় দফায় বাড়ছে। মানুষ নিরূপায় হয়ে এ ‘অত্যাচার-নির্যাতন’ সহ্য করছে। তাদের জন্য কিছু করা জরুরি। তা সরকারকেই করতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের সহায়তা করা সম্ভব। গ্রামে-গঞ্জে খালখনন, বাঁধ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মের একটা জোর প্রবাহ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ গায়ে-গতরে খেঁটে উপার্জন করে জীবননির্বাহ করার সুযোগ পেতে পারে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা