অর্থনৈতিক-মানবিক বিপর্যয়ে দেশ
০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৯ এএম
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কোটা সংষ্কার আন্দোলন হঠাৎ সহিংস আন্দোলনে পরিণত হল কেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকতে পারে। তবে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মানবিক বিপর্যয় এবং প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের দলীয় ক্যাডার বাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পনের বছর ধরে উন্নয়নের বাজনা বাজানো সরকারের সব অর্জন মাত্র ১৫ দিনেই শেষ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে। কোটা আন্দোলনের মূল দাবি আদালতের মাধ্যমে ইতিমধ্যে পুরণ হলেও শত শত মানুষের মৃত্যু, রাজপথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরা, গণগ্রেফতার এবং লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দিয়ে দেশে এক চরম অস্থিতিশীল ও অনিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এমন অবস্থা আর কখনো দেখা যায়নি। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সারাদেশে সেনা মোতায়েন রয়েছে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখে সকাল সন্ধ্যা কারফিউ দিয়েও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ৯ দফা দাবি থেকে নিবৃত্ত করা যায়নি। এটি এখন আর শুধু শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশে গণতন্ত্রহীনতা, বিচারহীনতা, সর্বগ্রাসী লুটপাট, দুর্নীতি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে সৃষ্ট জনঅসন্তোষ এখন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিতে শুরু করেছে।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতার কারণে সহিংস আন্দোলন ও পুলিশি অ্যাকশনে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা যাচ্ছে না। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়. গত ১০দিনে ঢাকায় নিহত দেড় শতাধিক মানুষের মধ্যে ১০৩জন নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের সিংহভাগই বয়েসে তরুণ, শ্রমিক, হকার, দিনমজুর ও কর্মজীবী মানুষ। পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তানের বিয়োগ অথবা পঙ্গুত্ব বরণের বেদনায় একেকটি পরিবারের উপর মানবিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ-বিজিবি ও সেনাবাহিনী নামিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এক রিপোর্টে শেষ ১০দিনের আন্দোলনে দেশের অর্থনীতির প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। ব্যবসা ও অর্থনৈতিক সূচক নির্ধারক মার্কিন সংস্থা এস অ্যান্ড পি গ্লোবালের আন্তর্জাতিক ঋণমান রেটিংসয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি ঘটেছে। বিশ্বের তিনটি এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুডিস এবং ফিচ রেটিংস আগেই বাংলাদেশের ঋণমানের অবনতি নির্দেশ করেছিল। এর ফলে দেশের ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ও মূদ্রাস্ফীতি বেড়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলবে। গতকাল প্রকাশিত খবরে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়। গত ২ সপ্তাহে দেশের তৈরী পোশাক রফতানি খাত, বৈদেশিক রেমিটেন্স, ফ্রি-ল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বলাবাহুল্য এসবই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তি। দেশের হোটেল-রেস্তোঁরা, পর্যটন শিল্প, সরকারি-বেসরকারি সেবা খাতে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তৈরী পোশাক রফতানি খাতে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ তরুণের আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে প্রতিবেশী দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে। একবার বাজার হাতছাড়া হয়ে গেলে তা ফিরে পাওয়া দুষ্কর।
পুলিশ, বিজিবি, র্যাব প্রভৃতি বাহিনীর গুলি, টিয়ার সেল, ও রাবার বুলেটে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হতাহতের ঘটনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংষ্কার আন্দোলন এখন একটি গণ আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সরকার পতনের ডাক না দিলেও তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে পুলিশ-বিজিবি ও সেনাবাহিনী দিয়ে দাবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত বিপরীত ফল বয়ে এনেছে। গতানুগতিক ব্লেইম গেমের রাজনীতি এখন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের মত অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। দেশের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন চায়, সেখানে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেশে সংঘাতের মাত্রা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। পুলিশ ও সামরিক ব্যবস্থায় সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে, গুলি করে মানুষ হত্যা করে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত করে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ অসম্ভব। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্ব সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যে সব উদ্বেগ, সর্তকবাণী এবং মতামত প্রকাশ করছে, তা’ জনগণের স্বার্থ ও আন্দোলনের পক্ষে। দেশের ৯০ভাগ মানুষের দাবি ও আকাঙ্খা কখনোই পুলিশ দিয়ে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। শত শত মানুষের মৃত্যু ও হাজার হাজার মানুষের রক্ত ঝরার পর আন্দোলন যে মাত্রায় উপনীত হয়েছে, তার পাল্স বুঝতে না পারলে দেশের অর্থনীতি এবং সরকারের রাজনৈতিক ভবিষ্যত চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়ার অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা ও সংকট পুলিশি ব্যবস্থায় কোনো সমাধান নেই। কোটি কোটি মানুষের দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সমুহ আশঙ্কা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির বাস্তবতায় গণদাবী মেনে নিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অসিম কুমার পাল গ্রেফতার।
জাল স্টাম্প-কোর্ট ফি তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতো চক্রটি
উত্তরায় শিকলে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় ২ কিশোরকে নির্যাতন, আটক ২
শৈলকুপায় চাঞ্চল্যকর ‘ফাইভ মার্ডার’ মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন
চাঁবিপ্রবি’র ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হলেও দীপু মনির চাপে গোপন রাখা হয়
ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খুলতে চায় জাতিসংঘ : সমকামিতা প্রসারের আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে নারী প্রতারক আটক
গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের বেতন-টিউশন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত
জর্জির ১০০, দ. আফ্রিকার ২০০
আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে কাশ্মিরে গেরিলা যোদ্ধা নিহত ১
দুদকের চেয়ারম্যান মইনুউদ্দীনসহ দুই কমিশনারের পদত্যাগ
সৎ ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা, সৎ মা নিজেই হত্যার শিকার হয়
ফিলিপাইনের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘ডেথ স্কোয়াড’, দুতার্তের স্বীকারোক্তি
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস র্যাগিং ও মাদক মুক্ত ঘোষনা
রাজবাড়ীতে অস্ত্র মামলায় এক সন্ত্রাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
জর্জি-স্টাবসের শতরানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে দক্ষিণ আফ্রিকা
মহেশপুরে অসুস্থ্য গরুর মাংস বিক্রয়ের অপরাধে কসাই আটক, জেল-জরিমানা
ব্যবসা নয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে হাজীদের সেবা করা
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত