বিজয় লাভের জন্য বিজয়ী মানসিকতা পূর্বশর্ত
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম
ইসলাম সবসময় ইতিবাচক চিন্তা ও দৃঢ় মনোবল গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনুল কারিমে বহুবার আমাদের ধৈর্য, সাহসিকতা এবং দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) ছিলেন এর বাস্তব উদাহরণ। তিনি সাহাবীদের মধ্যে এমন এক বিজয়ী মানসিকতা তৈরি করেছিলেন, যা তাদের সবর, তাওয়াক্কুল (আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা) এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও আত্মবিশ্বাসী রাখত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কার কঠিন পরিস্থিতিতে, মদিনার হিজরতের সময়, কিংবা বিভিন্ন যুদ্ধে সাহাবীদের মধ্যে এমন এক চেতনাই জাগ্রত করেছিলেন, যা তাদের আল্লাহর ওপর ভরসা করে জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে উৎসাহিত করত। সাহাবীরা জানতেন, পরাজয় বলতে আসলে কিছু নেই। কারণ একজন মুমিন সর্বদা আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণ করেই প্রকৃত বিজয়ী।
কিন্তু বর্তমান মুসলিম সমাজে এই বিজয়ী মানসিকতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। মুসলিম উম্মাহর অনেকাংশে এখন ক্ষমাপ্রার্থী মানসিকতা ও হীনমন্যতা দেখা যাচ্ছে। এটি আমাদের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ভুলে থাকার একটি বড় ফলাফল। মুসলিম উম্মাহ এখন আর আল্লাহর ওপর সেই দৃঢ় বিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারছে না, যা এক সময় তাদের বিশ্বজয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিল। এই মানসিকতার কারণে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সাহসিকতা দেখাতে পারি না। উন্নতির পথে এই হীনমন্যতা আমাদের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা অন্যদের অনুকরণ করতে এতটাই ব্যস্ত যে, নিজেদের ঐতিহ্য ও শক্তি হারিয়ে ফেলছি। তাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের কুরআন ও সুন্নাহর পথে ফিরে যেতে হবে। সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের মধ্যে সেই বিজয়ী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে, যা আমাদের শুধু আধ্যাত্মিকভাবে নয়, বরং দুনিয়াবী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেও সফল করবে। বিজয়ী মনোভাব গড়তে হলে আমাদের বিশ্বাস, অধ্যবসায়, ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও হীনমন্যতায় ভুগতে পারে না। তার ভরসা আল্লাহর ওপর এবং তার লক্ষ্য সর্বদা উঁচু। ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না; যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরাই বিজয়ী’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৯)। এই আয়াত আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস।
তারবিয়াহ: একটি বিজয়ী মনোভাব গড়ে তোলার ভিত্তি
‘তারবিয়াহ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ বৃদ্ধি করা, উন্নয়ন ঘটানো, কিংবা প্রশিক্ষণ দেয়া। ইসলামে তারবিয়াহ মানে হলো মানুষকে নৈতিক, আত্মিক এবং জ্ঞানে উন্নত করা। রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবীদের মধ্যে তাকওয়া, ইলম অর্জন ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান মুসলিম সমাজে সেই মনোভাবের চর্চা অনেকাংশেই অনুপস্থিত। মুসলিমদের মাঝে বিজয়ী মনোভাবের অভাবে পরাজিত মনোভাবের উদ্ভব হয়েছে, যা আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি: আজকের দুনিয়ায় মুসলিমরা বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তাদের উপর চলছে বহুবিধ জুলুম-নিপীড়ন। এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে ভিকটিম মনোভাব বা পরাজিত মনোভাব তৈরি হয়। যখন মানুষ বারবার দমন-পীড়নের শিকার হয়, তখন তাদের মধ্যে সেই যুলুম থেকে নিজেকে রক্ষা করার মনোভাব জন্ম নেয়। এর ফলে তৈরি হয় এক ধরনের অজুহাত প্রদর্শনের প্রবণতা এবং নিজের দুর্বলতা প্রকাশের অভ্যাস, যা তাদের সম্মান এবং আত্মমর্যাদার অনুভূতিকে হ্রাস করে। এমনকি এই পরাজিত মানসিকতা একটি চক্রাকারে কাজ করে। যারা নিজেদের পরাজিত মনে করে, তারা আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেই দুর্বলতা আরও বেশি অজুহাত তৈরি করে। আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর সাহাবীদের এই ধরনের মনোভাব থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দিয়েছিলেন। রাসুল (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য এক অনুপম আদর্শ। তাঁর জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে কঠিন পরিস্থিতি ও বিপর্যয়ের মুখেও দৃঢ় মনোবল ধরে রাখতে হয় এবং পরাজিত মানসিকতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হয়।
মক্কার শুরুর দিনগুলোতে ইসলামের দাওয়াত প্রচারের সময় নবীজি ও তাঁর সাহাবীরা অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কুরাইশ নেতারা তাদের উপর নানা অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছিল। কিন্তু রাসুল (সা.) কখনো হতাশ হননি। তিনি সাহাবীদের সবসময় আল্লাহর প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন এবং বলতেন, ‘ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের জন্য সাহায্য নির্ধারণ করেছেন।’ তিনি তাদের বোঝাতেন যে, দুনিয়ার কষ্টগুলো সাময়িক, কিন্তু আখিরাতের পুরস্কার চিরস্থায়ী। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো তায়েফ সফর। তায়েফে যখন নবীজি দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে চরম অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছিলেন। এমনকি তায়েফবাসীরা তাঁকে পাথর ছুড়ে আহত করেছিল। কিন্তু তিনি হতাশ না হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই ওপর নির্ভরশীল। তুমি যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকো, তাহলে আমি এ কষ্টকে পরোয়া করি না।’
একইভাবে, বদরের যুদ্ধেও সাহাবীরা সংখ্যায় ও সামর্থ্যে শত্রুদের তুলনায় দুর্বল ছিলেন। কিন্তু রাসুল (সা.) তাদের এই বিশ্বাসে উজ্জীবিত করেছিলেন যে, তারা শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয়, বরং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। তিনি তাদের মনে এক অটুট বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন যে, আল্লাহর সাহায্য আসবেই। কুরআনে এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘তোমাদের যদি ধৈর্য হয় এবং তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে আল্লাহ তোমাদের সাহায্যের জন্য ফেরেশতাদের পাঠাবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১২৫)। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ও সাহাবীরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এই সন্ধি তাদের জন্য অসম্মানজনক। কিন্তু রাসুল (সা.) তাদের শিখিয়েছিলেন কীভাবে আল্লাহর পরিকল্পনার ওপর বিশ্বাস রাখতে হয় এবং তা গ্রহণ করতে হয়। পরবর্তীতে এই সন্ধি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক ঐতিহাসিক বিজয়ের পথ খুলে দেয়।
রাসুল (সা.) সাহাবীদের শিখিয়েছিলেন যে, তারা কেবল নিজেদের জীবন বা সম্পদের জন্য সংগ্রাম করছে না, বরং তারা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। তাদের এই সংগ্রাম এক চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যাবে, যা তাদের জীবনের কষ্টগুলোকে অর্থবহ করে তুলবে। তিনি তাদের বোঝাতেন, এই দুনিয়ার জীবনে কষ্ট ও পরীক্ষা আসবে, কিন্তু যদি তারা ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর সাহায্যের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তাহলে শেষপর্যন্ত বিজয় তাদেরই হবে।
আজকের মুসলিম উম্মাহর জন্য নবীজির এই শিক্ষা খুবই প্রাসঙ্গিক। আমাদের জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে, সেই চিরন্তন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করা, যা নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবীদের মাঝে সৃষ্টি করেছিলেন।
খাববাব ইবন আল-আরাত ও অন্যান্য সাহাবাদের সাথে ঘটনা: খাববাব ইবন আল-আরাত (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবী নবীজির কাছে এসে তাদের উপর চলমান অত্যাচারের ব্যাপারে দু›আ করার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নবীজি তাদের কাছে আশ্বাস প্রদান করেন যে, তাদের এই কষ্ট সাময়িক এবং তাদের মতো পূর্ববর্তী জাতির মুমিনরাও অনেক জুলুম সহ্য করেছেন। তিনি তাদেরকে কঠোরতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং নিজেদের মনোবল দৃঢ় রাখতে অনুপ্রাণিত করেন।
সুরাকা বিন মালিকের ঘটনা: মদীনায় হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই হিজরতের সময় রাসুল (সা.) এবং তাঁর সঙ্গী আবু বকর (রা.) নানা বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো সুরাকা বিন মালিকের মুখোমুখি হওয়ার মুহূর্ত। কুরাইশরা রাসুল (সা.) এর সন্ধানে একটি বিশাল পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। যারা তাঁকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় কুরাইশদের কাছে নিয়ে আসবে, তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এই ঘোষণা শুনে অনেকেইরাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে শুরু করে। তাদের মধ্যে একজন ছিল সুরাকা বিন মালিক, যিনি ছিলেন একজন দক্ষ অশ্বারোহী। সুরাকা রাসুল (সা.) এর অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ পেয়ে তাদের পেছনে ধাওয়া করেন। তিনি তাদের ধরতে চাইলে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। সুরাকার ঘোড়া বারবার মাটিতে হোঁচট খেতে থাকে এবং তিনি আর এগোতে পারছিলেন না। এই অবস্থায় নবী (সা.) তাঁর অসাধারণ আত্মবিশ্বাস এবং দয়ালু মনোভাব প্রদর্শন করেন। তিনি সুরাকাকে আক্রমণ বা প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে তাকে আশ্বাস দেন এবং তাঁর কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন। নবীজি এমনভাবে সুরাকার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যা সুরাকার হৃদয়কে নাড়া দেয়। তিনি সুরাকাকে আশ্বাস দেন যে, যদি তিনি ফিরে যান এবং তাদের পথ অনুসরণ বন্ধ করেন, তবে তিনি নিরাপদ থাকবেন।
অন্যদিকে, রাসুল (সা.) তাঁর দৃঢ় মনোবল এবং আল্লাহর ওপর ভরসার একটি চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেন। তিনি সুরাকাকে শুধু শান্তির বার্তা দেননি, বরং এমন একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা সেই সময় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল। নবীজি তাকে বলেন যে, একদিন সুরাকা পারস্যের রাজকোষ থেকে সোনার বালা লাভ করবে।
এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই মুহূর্তে অবিশ্বাস্য মনে হলেও নবীজির এই কথা সুরাকার মনোভাব পাল্টে দেয়। তিনি তাদের ক্ষতি না করে ফিরে যান এবং পরে মুসলিম হন। নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী বহু বছর পর সত্যি হয়। খলিফা উমর (রা.) এর শাসনামলে মুসলিম বাহিনী পারস্য সাম্রাজ্য বিজয় করে এবং রাজকোষ থেকে সোনার বালা উমরের কাছে আনা হয়। তখন উমর (রা.) সেই বালা সুরাকাকে পরিয়ে দিয়ে নবীজির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
এই ঘটনা আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। আত্মবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা: বিপদের সময়েও নবীজি (সা.) দৃঢ় ছিলেন এবং জানতেন যে আল্লাহর সাহায্য আসবেই। ক্ষমাশীলতা ও দয়ার প্রদর্শন: শত্রুকে সুযোগ থাকার পরও আঘাত না করে, তার প্রতি সদয় হওয়া ইসলামের অন্যতম নীতি।
বিশ্বাস ও ভবিষ্যদ্বাণী: নবীজি তাঁর সাহসী মনোভাব দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। তাঁর কথা শুধু ঐতিহাসিকভাবে সত্যই হয়নি বরং তা সুরাকার মতো মানুষের জীবন পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছে।
উহুদের যুদ্ধের পরে ঘটনা: উহুদের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শুধু বিজয় ও পরাজয়ের শিক্ষাই দেয়নি, বরং এক দৃঢ় মনোভাব এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার গুরুত্বকেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী শুরুতে শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং রাসুল (সা.) এর নির্দেশনা অমান্য করার ফলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। উহুদের যুদ্ধের মূল ঘটনাগুলোর একটি হলো আরচারের পাহাড়ে অবস্থানকারী তীরন্দাজদের ভূমিকা। নবীজি (সা.) তাদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা যুদ্ধে যা-ই ঘটুক না কেন, নিজেদের অবস্থান ছেড়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিমরা বিজয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে এই তীরন্দাজদের একটি বড় অংশ যুদ্ধের মাল-সম্পদ সংগ্রহের জন্য তাদের অবস্থান ত্যাগ করে। এই সুযোগে কুরাইশ বাহিনী পেছন থেকে মুসলিমদের আক্রমণ করে, যার ফলে যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে যায়।
মুসলিম বাহিনীর এই ভুল এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের ফলে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নবীজি (সা.) নিজেও আহত হন, এবং সাহাবীদের অনেকেই শহীদ হন। এমনকি এক সময়ে যুদ্ধের মাঠে নবীজির শাহাদাতের গুজব ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে হতাশা ছেয়ে যায়। তবে এমন চরম বিপদের মুহূর্তেও নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবীদের মনোবল ভেঙে যেতে দেননি। তিনি তাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মওলা এবং অভিভাবক। এই যুদ্ধের ক্ষতি ছিল সাময়িক এবং এটি তাদের জন্য এক শিক্ষা। তিনি তাদেরকে বোঝান যে, দুনিয়ার যেকোনো হার বা ক্ষতি চূড়ান্ত পরাজয় নয়। বরং চূড়ান্ত বিজয় তাদেরই হবে, যদি তারা আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে উহুদের যুদ্ধের ঘটনাগুলোর উল্লেখ করে বলেন: ‘তোমরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাক, তবে তারাও (কাফিররা) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এই দিনগুলোকে আমরা মানুষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করি, যাতে আল্লাহ মুমিনদের পরীক্ষা করতে পারেন এবং তোমাদের মধ্যে যারা সত্যিকারভাবে আল্লাহর পথে লড়াই করে, তাদের প্রকাশ করতে পারেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪০)।
এই যুদ্ধের ঘটনা আমাদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়: নবীজির আদেশের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব: উহুদের যুদ্ধের একটি বড় শিক্ষা হলো, নেতৃত্বের নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা এবং ব্যক্তিগত লোভ বা অভিলাষ থেকে দূরে থাকা।
পরাজয়কে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ: উহুদের যুদ্ধ প্রমাণ করে যে, সাময়িক পরাজয় একটি চূড়ান্ত পরাজয় নয়। বরং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই আসল বিজয়।
আল্লাহর ওপর নির্ভরতা: নবীজি (সা.) সাহাবীদের শিখিয়েছিলেন যে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনিই আমাদের মওলা এবং অভিভাবক।
উহুদের যুদ্ধ শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ নয়; এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। নবীজির দৃষ্টান্ত আমাদের শেখায়, কীভাবে চরম ক্ষতি ও ব্যর্থতার মধ্যেও আল্লাহর সাহায্যের প্রতি আস্থা রেখে নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী হওয়া যায়।
খন্দকের যুদ্ধের সময়ে নবীজির প্রতিশ্রুতি: খন্দকের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা মুসলিমদের দৃঢ় বিশ্বাস, সহনশীলতা এবং নবীজি (সা.) এর দূরদর্শী নেতৃত্বের অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে। এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ৫ হিজরিতে, যখন কুরাইশ ও তাদের মিত্রদের বিশাল বাহিনী মদীনার মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য সমবেত হয়। মদীনা ছিল ঘিরে থাকা একটি ছোট শহর এবং মুসলিমদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। এ পরিস্থিতিতে কৌশলগতভাবে শহরের চারদিকে একটি গভীর খন্দক খনন করা হয়, যা তাদের শত্রুদের সরাসরি আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিল।
যুদ্ধের সময় মুসলিমদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। খাদ্যের অভাব, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শত্রুদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা মুসলিমদের মনে ভয় ও শঙ্কা তৈরি করেছিল। কুরআনে এই অবস্থার বর্ণনা এসেছে: ‘যখন শত্রুরা তোমাদের ওপর থেকে এবং নিচ থেকে এসে পড়েছিল এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিশক্তি চঞ্চল হয়ে গিয়েছিল এবং তোমাদের অন্তর গলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল, তখন তোমরা আল্লাহর প্রতি নানা ধারণা করছিলে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত ১০)।
এই চরম সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও নবীজি (সা.) সাহাবীদের মনে এক অটুট বিশ্বাস এবং সাহস জাগ্রত করেন। তিনি তাদের মনে করিয়ে দেন যে, আল্লাহর সাহায্য তাদের সাথে আছে এবং তাদের দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চূড়ান্ত বিজয়ে পরিণত হবে।
খন্দক খননের সময় এক পর্যায়ে একটি শক্ত পাথরের সম্মুখীন হওয়া যায়, যা ভাঙা যাচ্ছিল না। নবীজি নিজে সেই পাথর ভাঙার উদ্যোগ নেন। তিনি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার সময় আল্লাহর সাহায্যে একটি আলো উৎপন্ন হয় এবং তিনি বলেন, ‘আমি পারস্যের কাসরা সাম্রাজ্যের প্রাসাদগুলো দেখতে পাচ্ছি।’ দ্বিতীয় আঘাতে বলেন, ‘আমি রোমান সাম্রাজ্যের সাদা প্রাসাদগুলো দেখতে পাচ্ছি।’ তৃতীয় আঘাতে তিনি বলেন, ‘আমি ইয়েমেনের শক্তিশালী দুর্গগুলো ধ্বংস হতে দেখছি।’
এই ভবিষ্যদ্বাণী সাহাবীদের মধ্যে এক বিশাল প্রভাব ফেলে। তারা জানতেন, শত্রুর সংখ্যা যতই বেশি হোক না কেন, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কখনো ব্যর্থ হয় না। নবীজির এই বক্তব্য তাদের অন্তরে এক দৃঢ় আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। তাদের দুর্বলতা এবং প্রতিকূলতার মাঝেও তারা বিজয়ের আশায় আরও বেশি উদ্যমী হয়ে ওঠেন। অবশেষে, আল্লাহর বিশেষ সাহায্যে খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয়ী হয়। শত্রুরা দীর্ঘ সময় ধরে মদীনায় অবস্থান করেও কোনো সাফল্য অর্জন করতে না পেরে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। এই বিজয় ছিল মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা তাদের মনোবলকে চাঙা করে এবং ভবিষ্যতের বড় বড় বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে।
বিজয়ী মানসিকতার গুরুত্ব ও পরাজিত মানসিকতার প্রভাব
বিজয়ী মনোভাব এমন একটি শক্তি, যা চরম প্রতিকূলতা এবং সংকটময় পরিস্থিতিতেও মানুষকে দৃঢ় রাখে এবং সফলতার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এই মানসিকতার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যা প্রিয় রাসুল (সা.) এর জীবন এবং নেতৃত্ব থেকে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি সবসময় সাহাবাদের এমন একটি মানসিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, যা তাদের কেবল আত্মবিশ্বাসী এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল করে তোলেনি, বরং দুনিয়ার প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তিশালী করেছে।
খন্দকের যুদ্ধেও আমরা দেখতে পাই, কীভাবে নবী (সা.) এক কঠিন পরিস্থিতিতেও সাহাবাদের বিজয়ী মনোভাব ধরে রাখতে সাহায্য করেছিলেন। খাদ্যাভাব, ঠান্ডা এবং শত্রুদের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাহাবাদের ভবিষ্যৎ বিজয়ের সুসংবাদ দেন। তিনি তাদের বলেন, একদিন তারা পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য বিজয় করবে। এই প্রতিশ্রুতি তাদেরকে নতুন করে উদ্দীপিত করে এবং তারা আরও বেশি দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজয়ী মনোভাবের চর্চা
আজকের মুসলিম সমাজে বিজয়ী মনোভাবের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেক মুসলিম নিজেদের দুর্বল মনে করে এবং দুনিয়ার বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে সাহস হারিয়ে ফেলে। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হলে আমাদের প্রিয় নবীর জীবনের দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা: প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল থাকা এবং এই বিশ্বাস রাখা যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবসময় আল্লাহর হাতেই থাকে।
আত্মবিশ্বাস এবং সাহসিকতা: একজন মুসলিমের উচিত নিজের ক্ষমতার ওপর আত্মবিশ্বাস রাখা এবং প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে সাহসী হওয়া।
সম্মিলিত প্রচেষ্টা: মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের ঐক্যের মাধ্যমে শক্তি অর্জনের শিক্ষা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
ইতিবাচক চিন্তা এবং দৃষ্টি: হতাশা এবং নেতিবাচক চিন্তাকে দূরে সরিয়ে উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়া দরকার।
বিজয়ী মানসিকতার উপকারিতা
একটি বিজয়ী মনোভাব শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে সফলতা আনতে সাহায্য করে না; এটি পুরো সমাজের জন্যও কল্যাণকর। একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি পরিবার, সমাজ এবং জাতির জন্য প্রেরণা হয়ে ওঠে। আল্লাহর পথে দৃঢ়তা এবং দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সাহসিকতা থাকা একজন মুসলিমকে দীন ও দুনিয়ার উভয় ক্ষেত্রে সফল করতে পারে।
তাই, বর্তমান মুসলিম সমাজে বিজয়ী মানসিকতার চর্চা বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রত্যেককে নবী (সা.) এর শিক্ষাগুলো গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে এবং তা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। এই মানসিকতা আমাদেরকে আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে সাহায্য করবে এবং উম্মাহর সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে।
ইসলামের লক্ষ্য: একটি বিজয়ী সমাজ
ইসলাম শুধু একক ব্যক্তির উন্নতির জন্য নয়; এটি একটি সমগ্র সমাজ গড়ে তোলার জন্য এসেছে। এই সমাজের বৈশিষ্ট্য হলো:
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: যেখানে প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পায় এবং তাদের অধিকার রক্ষা হয়।
শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চা: যেখানে মানুষকে শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়।
ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব: বিভক্তি ও অনৈক্যের পরিবর্তে একটি ঐক্যবদ্ধ এবং সহমর্মী উম্মাহ গড়ে তোলা।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি: যেখানে মানুষ প্রতিকূলতার মধ্যেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী থাকে এবং সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করে।
আমাদের করণীয় : আজকের মুসলিম সমাজকে নবী (সা. এর শিক্ষা অনুসরণ করে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন, আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার, নিজের উপর আস্থা রাখা এবং আল্লাহর সাহায্য নিয়ে বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা।
একতা ও সহযোগিতা: বিভক্তি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
নেতৃত্বের মানসিকতা: নিজেদের জীবন এবং সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা।
ইবাদত ও দোয়া: আল্লাহর পথে অবিচল থাকা এবং তাঁর সাহায্যের জন্য দোয়া করা। ইসলাম একটি ইতিবাচক জীবনবোধ ও কর্মমুখর দর্শনের ধর্ম। এটি মানুষের অন্তরে আশার আলো জ্বালায় এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য সংগ্রাম করার শিক্ষা দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেছেন: ‘আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। কেবল কাফিররাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত ৮৭)।
লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০
কালো টাকায় ভাসছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ৩৬% থিংক ট্যাংক
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক হতাহত, ফের উত্তপ্ত মণিপুর
মাছের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার সীমায় বন্দি হচ্ছেন ভারতীয় জেলেরা