রেইনবো নেশন : থ্রটস অফ ডাইন্যামিক লিডার তারেক রহমান
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের লক্ষ্যে ১০টি কমিশন গঠন করেছে। ডিসেম্বরে এসব কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। তবে এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑ বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছে তারা। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার ১ ও ২ হলো: ‘১. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। ২. বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।’ (https://www.bnpbd.org/allnews/). এই পরিকল্পনাগুলো ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী- সমতল-পাহাড়ি নির্বিশেষে সুষম ও সমঅধিকারের আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে একটি ঐকমত্যের ভিশন বলে মনে করা হয়েছে। পরিবেশ, পরিস্থিতি, দেশের প্রয়োজন এবং মানুষের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৩১ দফাকে সংযোজন, বিয়োজন, পুনর্বিন্যাস বা পরিবর্তনও করা যেতে পারে। তবে তা হবে স্টেকহোল্ডার কন্সালটেশন তথা অংশীজনের পরামর্শ ও জনমতের ঐক্যের মাধ্যমে।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় রেইনবো নেশনের কথা বলা হয়েছে। রেইনবো নেশন হলো: The notion of the rainbow nation projects an image of different racial groups coming together and living in harmony. (Myth of the Rainbow Nation: Prospects for the Consolidation of Democracy in South Africa, African Security Review Vol 5 No 6, 1996).
সাতটি ভিন্নরঙের মিশ্রণ থাকে রেইনবো’তে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে প্রথম পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরে বর্ণবাদ-পরবর্তী ওই রাষ্ট্রকে নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত করার জন্য শান্তিতে নোবেল পাওয়া আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু রংধনু জাতি বা রেইনবো নেশন শব্দটি প্রচার করেন। এই শব্দটি বহু-সংস্কৃতিবাদের ঐক্য এবং বহু ভিন্ন বর্ণ-ধর্মের মানুষের একত্রিত হওয়াকে বা একত্রিত করার উদ্দেশ্যে প্রচলিত হয়েছিল। বর্ণবিদ্বেষ শাসনের অধীনে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা বহুধা বিভাজনে ও নিপীড়নে জর্জরিত ছিল। দেশটির সাদা-কালো সকল জাতিকে একটি ছাতার নিচে আনায় ‘রেইনবো জাতি’ নামকরণ ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়। রেইনবো নেশন কী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ অনুসারে বলা হয়েছে, ‘রেইনবো নেশন হলো: আজকে নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা ও সংস্কৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। এখানে অনেক ধর্মের ও বর্ণের মানুষ বাস করে। সবার ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রাধান্য বা সম্মান জানানোর জন্য ‘রেইনবো নেশন’। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে মূলে রেখে নতুনভাবে রেইনবো নেশনের কথা বলা হচ্ছে, যা নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই ধারণা মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছে। রেইনবো নেশন সারাবিশ্বকে বোঝায়।’
২.
২০১৩ সালে কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত The Political Thought of Tarique Rahman: Empowerment of the Grassroots People (Cambridge, 2013) বইটি বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনীতি ও চিন্তার উপর লেখা সতেরোটি নিবন্ধের একটি সংকলন। তৃণমূল জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে তারেক রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি দেশ-বিদেশের লেখকদের মুখ্য অভিষ্ট ছিল, যাদের তারেক রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বা যারা নিজস্ব কাজের মাধ্যমে তার কর্মকা-ের সাথে পরিচিত। গ্রন্থটির নিবন্ধগুলোতে তারেক রহমানের রাজনীতিতে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় এক যুগ পর ২০২৪ সালে তার চিন্তাধারার আধুনিকায়নের সুস্পষ্ট পরিচয় বিএনপি’র কার্যক্রমে প্রকাশ পেতে দেখা যাচ্ছে। তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে সর্বত্রই। গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে তার ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তারেক রহমানের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা জনগণ গ্রহণ করেছে, যা ইতিবাচক। এতে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে, যার সুফল পাবে দেশবাসী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সেই বার্তাই তুলে ধরছেন। আওয়ামী লীগের পতনের তিন মাসে, বিএনপি নেতারা দেশব্যাপী রাজনীতির গতিশীলতায় উদ্যোগ নিয়েছেন, যা তৃণমূল মানুষ উৎসাহের সাথে গ্রহণ করেছে। নেতাকর্মীরা আবারো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। বিএনপি জনগণের অসুবিধা এড়াতে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বা যানবাহন সমাবেশ থেকে বিরত থাকে; রাজনৈতিক কর্মসূচির পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা; শহরের দেয়াল থেকে ব্যানার এবং পোস্টার অপসারণ এবং একটি সামগ্রিক নাগরিকবান্ধব, জনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রচার করেছে। এমনকি তারেক রহমান তাকে ‘দেশনায়ক’ ও ‘রাষ্ট্রনায়ক’ অভিধা দিতে নিষেধ করেছেন।
দীর্ঘ সময় ধরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হাসিনা ও তথাকথিত সুশীল গণমাধ্যমে ও অন্যান্য প্লাটফর্মে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে মতামত তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারেক রহমান তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং নিপীড়ন নির্যাতনের এবং প্রতিনিয়ত দেশের সর্বস্তরে তার দলের এবং বাইরের নিপীড়িত মানুষের দল সুসংগঠিত করে পাশে থেকে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে শক্ত ন্যারেটিভসকে ভেঙে চুরমার করেছেন। এখন তিনি দেশের অনিবার্য ও অদ্বিতীয় জনপ্রিয় নেতা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। তার নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতিতে বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে জনগণকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না এলেও বসে নেই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এখন এলাকামুখী। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের ভবিষ্যৎ করণীয়, প্রতিশ্রুতিসহ রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার বিষয়গুলো।
National Emancipation বা জাতীয় মুক্তির ধারণা তারেক রহমান ৩১ দফার মধ্যে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ মানুষকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে, এটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে যেমন সত্য ছিল, তেমনি তারেক রহমানের ভাবনায় আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তির আকাক্সক্ষায় বিকশিত। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ফিলোসফিতে এবজরশন পাওয়ার আছে। এলবো রুমও আছে। যদি কোথাও ঘাটতি থাকে, অন্যটি থেকে এনে পুরো করে দিতে পারবেন।’ তারেক রহমান কেবল জিয়ার সন্তান হিসেবে নন, বিগত দুই যুগের বেশি সময় রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে কর্মী থেকে নেতায় পরিণত হয়েছেন। তারেক রহমানের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পেয়েছে ৩১ দফার দুই নম্বরে। এই জায়গায় অসাধারণ অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। ১৫ নভেম্বর(২০২৪) বিএনপি’র উদ্যোগে ‘৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তারেক রহমান বলেছেন: ‘আমরা ৩১ দফার যে আলোচনা এখানে করেছি, তা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে, আকাক্সক্ষার আলো দেখাবে পরিবর্তনকামী গণমানুষকে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, বিএনপি’র জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে, যা পরবর্তীতে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়।’
তারেক রহমানের অগ্রগামী ও দূরদর্শী চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায় সংসদ নির্বাচন বর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার মধ্যে এবং বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে হাসিনা সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতি-দুঃশাসনের চিত্র মিডিয়ায় এনে সত্য উন্মোচনে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটারবিহীন এবং জালভোট ও নিশিরাতের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নীলনকশা করেছিল। জনবিছিন্ন ওই সরকারের করুণ পরিণতি প্রত্যক্ষ করা গেছে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের আন্দোলনে ক্ষমতার পতনে। একা বিএনপি নয়, আরও ৬২টি গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দল ৭ জানুয়ারি (২০২৪) তথাকথিত নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমেরিকার দি ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনকে তারেক রহমান বলেছিলেন: '...voters have already rejected this election. The political decision of the BNP is fostered by the sentiments of Bangladeshi people, reflecting our shared desire for a meaningful election. In fact, I believe, there is enough evidence that the AL has become further isolated by ravaging fascism. From garment workers to Nobel laureates, journalists to civil society, students to professionals – every facet of society is being denied fundamental rights and freedoms. The BNP’s one-point demand seeking for Sheikh Hasina’s resignation resembles the desire of most Bangladeshis. Our party further represents public interest in policy formulation, including the 31-Point Structural Reforms of the State and the Indo-Pacific Strategy.Õ
এভাবে একজন দেশপ্রেমিক নেতা জনস্বার্থের কথা ভেবেছেন। রাষ্ট্রের সংস্কার নিয়ে ধারাবাহিক কথা বলে মানুষকে দেশগঠনে সম্পৃক্ত করেন। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেছেন যৌক্তিকভাবে। গত ১৬ বছরে এবং বিশেষ করে জুলাই এবং আগস্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেÑ প্রত্যেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ তারা পূর্ণ স্বীকৃতির যোগ্য ত্যাগ স্বীকার করেছে। সকল নাগরিকের অবদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, জনগণের বঞ্চিত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার এবং জনসাধারণের ম্যান্ডেট নিশ্চিত করে, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই তারেক রহমানের অগ্রাধিকার।
জিয়াউর রহমানের আদর্শের পুনর্জাগরণ ঘটেছে বিএনপি’র ৩১ দফা প্রস্তাবে। ২০১৬ সাল থেকেই বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামোতে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। দলটির ৩১ দফায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও পরপর দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির যে নীতিগত দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দলটির জিয়াউর রহমানের বিএনপিতে ফেরারই স্পষ্ট ইঙ্গিত। জিয়াউর রহমানের ‘সিভিক ন্যাশনালিজমে’র যে ধারা, তাতে বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকা- বিএনপির ঘরে ফেরারই লক্ষণ। একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য হলো, ক্ষমতা হস্তান্তর মানে শুধু রাষ্ট্রের শাসক কর্তৃত্ব এক দলের কাছ থেকে অন্য দলের হাতে চলে যাওয়া উচিত নয়। বরং, এটি একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করা উচিত, যা সমাজের ক্রমবর্ধমান ল্যান্ডস্কেপ এবং জনগণের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রকৃত আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
৩.
ল্যাটিন শব্দ Mutatis Mutandis অর্থ হচ্ছে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ গ্রহণ করা। ডিপ্লোম্যাসির এই শব্দটি ৩১ দফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ১৪/১১/২০২৪ তারিখে তারেক রহমান ‘৩১-দফা রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক আলোচনায় বলেছেন, ‘৩১ দফার লক্ষ্য হল বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করা, এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ কখনোই বিকাশ লাভ করতে পারবে না এবং একটি ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার আর কখনোই জেগে উঠতে সক্ষম হবে না। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে। একটি নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে, যেখানে জনগণের আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হবে, যে দেশ একটি নির্বাচিত এবং জবাবদিহিমূলক সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে, যা জাতি গঠন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে জনগণের মালিকানা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।’
জনগণের ক্ষমতায়ন, সম্পৃক্ততা এবং জবাবদিহিতার মূলে থাকা কাঠামোগত সংস্কারের জন্য ৩১-দফা রূপরেখার সাথে বিএনপির রাজনীতি একত্রিত হবে। দেশের শাসনের ভিত্তি হবে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। যখনই আইনের শাসন, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন থাকবে তখনই টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন স্বাভাবিকভাবেই হবে। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে:the concept of inclusive development emphasizes the social, ecological and political dimensions of development. (https://link.springer.com/article/).
‘টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ সম্পর্কে তারেক রহমান যেমন বিজ্ঞতার সঙ্গে নিজের অভিমত তুলে ধরেছেন তেমনি তার আধুনিক রাজনীতি ভবিষ্যৎপ্রসারী সেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তর চিন্তাও প্রণিধানযোগ্য। জাতীয় ঐতিহ্য এবং অতীত অর্জনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে ভবিষ্যৎমুখী, অতীতে সমাহিত নয়। আমরা প্রচলিত শাসনের দ্বারা আবদ্ধ হতে পারি না; আমাদের আধুনিকায়ন এবং উদ্ভাবনকে আলিঙ্গন করতে হবে। সামনের দিকে তাকিয়ে, আমাদের অবশ্যই সমাজের সমস্ত অংশের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাতে হবে, একটি সর্বব্যাপী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে এবং পথ ধরে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে রূপান্তর করতে হবে।
ডাইন্যামিক লিডার তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারভাবনা গতানুগতিক আর দশটা চিন্তাবিদের মতো নয়। তিনি লিডার হিসেবে যেমন ড্যাইনামিক তেমনি স্টেট রিফরমেশনের স্বপ্নদ্রষ্টা। যেমন, তিনি সংস্কার বলতে রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের কথা বলেন। মানুষের জীবনের উন্নয়ন শুধুমাত্র কয়েকটি সাংবিধানিক অনুচ্ছেদের সংশোধন দিয়ে হয় না। তার কাছে সংস্কার মানে জীবিকা, আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা এবং প্রতিটি পরিবারের জন্য সঞ্চয় নিশ্চিত করা। নারী ও পুরুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সংস্কার বেকারত্ব দূর করবে এবং সংস্কারকে অবশ্যই নারীর মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণের নিশ্চয়তা দেবে। এটা তরুণদের আধুনিক শিক্ষা এবং নৈতিক মূল্যবোধ প্রদান করবে। এটি মানুষের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সরবরাহ করতে বাধ্য হবে। সংস্কার দিয়ে অবশ্যই বাজারকে স্থিতিশীল করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সংস্কার কৃষক, শ্রমিক এবং বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মক্ষম শ্রেণির মানুষের জন্য ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করবে।
এই উন্নয়ন চেতনার সংস্কার দিয়ে তারেক রহমান যে রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চেয়েছেন, তা সকল ধর্ম-বর্ণ-জাতির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার প্ল্যাটফর্ম। যেখানে প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। মত প্রকাশ ও সমালোচনা সহ্য করার কথাও তিনি জাতিকে জানিয়েছেন। তারেক রহমানের তার ভাবনায় সকল নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মিডিয়া তার মতে, সত্য কথা বলার স্বাধীনতা পাবে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, রাজনৈতিক টকশো, কমেডি এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের মাধ্যমে খোলাখুলিভাবে সরকারের সমালোচনা করবে। এজন্য মানবাধিকার কর্মী, সামাজিক প্রভাবশালী এবং সাংবাদিক সহ সকল নাগরিকের মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো মিডিয়া। বিশিষ্টজনের মতামত হলো: In today’s politics and society at large, media is essential to the safeguarding transparency of democratic processes. This is often called its ‘watchdog’ role. (https://byjus.com) একটি রাষ্ট্রের মিডিয়া হলো ‘ওয়াচডগ’, তারেক রহমান তার ভাবনায় তা স্পষ্ট করেছেন এভাবে, ‘আমাদের লক্ষ্য হল একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করা, যেখানে কেউ ইউটিউব, ফেসবুক বা অন্যান্য অনলাইন স্পেসের মতো প্ল্যাটফর্মে মতামত প্রকাশের জন্য বা শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপর প্রকাশ্যে মন্তব্য করার জন্য হয়রানি করা হবে না, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও থাকবেন। মূলধারা বা সোশ্যাল মিডিয়াকে সত্য গোপন করতে বা ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হবে না। জাতীয় উন্নয়নে মিডিয়া নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখবে বলেও আশা করি।’
‘রেইনবো নেশনে’ জনগণের ভোটে নির্বাচিত শাসকের দায়িত্ব থাকবে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম, অত্যধিক বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার, পরোয়ানাহীন গণগ্রেফতার, এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ সেই শাসনের দ্বারা ব্যবহৃত দমনের সমস্ত হাতিয়ার নির্মূল হবে। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসরণ করে, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাজ করা রেইনবো নেশনে দায়িত্ব। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়েও সরব তারেক রহমান। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনের দীর্ঘ ১৬ বছরের বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দুদের উপর যে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি আসামের একটি পত্রিকায় আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে ‘হিন্দুরা থাকলে ভোট পাই, আর চলে গেলে জমি পাই’ শিরোনামে সে সময় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় যা দুদেশে তোলপাড় ফেলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে কথিত হিন্দু নির্যাতন নিয়ে বরাবরই মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। অথচ সে দেশে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রতিনিয়ত ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। যা নিয়ে মার্কিন সরকার বিভিন্ন সময় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। (দৈনিক ইনকিলাব, ১৫/১১/২০২৪)। (চলবে)
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিলেটের টানা জয়ে উচ্ছ্বসিত স্বাগতিক দর্শকরা
সংবিধানে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লিপিবদ্ধ থাকতে হবে - সারজিস আলম
মুরাদনগরে শীতার্ত মানুষের মাঝে পীরসাহেব চরমোনাই'র পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ
লিটনকে সেরা ছন্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাতে চাই: প্রধান নির্বাচক
মাস্তুল ফাউন্ডেশন বিতরণ করলো ১ লক্ষ কেজি চাল
লক্ষ্মীপুরে রঙ-কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য, ২ ফ্যাক্টরি সিলগালা
সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশ
উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস
২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা
কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০
জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক
যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ