স্বৈরাচার খোঁড়ল থেকে মাথা বের করছে
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন ও বিদায় ঘটেছে। দেশ মুক্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতার সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। সরকারের মেয়াদ ৫ মাস হতে চললো। এর মধ্যে অনেক কিছুই সরকার করেছে। আবার অনেক কিছুই করতে পারেনি। একটানা সাড়ে ১৫ বছর যে দলটির ব্যানারে দুর্বৃত্তের শাসন পরিচালিত হয়েছে, সেই দল ও তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। কেবল সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূল দল ও তার সহযোগী অন্য সংগঠনগুলো একই অপরাধ করলেও তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। প্রশাসনসহ সর্বত্র পতিত স্বৈারাচারের দোসররাই দায়িত্ব পালন করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একদা বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে এক রাতে আওয়ামী লীগের ১০ লাখ লোককে হত্যা করা হবে।’ বলা বাহুল্য, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও ওবায়দুল কাদেরের আশঙ্কা সত্য হয়নি। সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসন, পুলিশসহ সকল ক্ষেত্রে চরম দলীয়করণ হলেও সেই দলীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তারা খুন-গুম, জুলুম-নির্যাতন, দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা এবং সর্বশেষ আন্দোলনে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্বিচার গণহত্যায় অন্তত দু’হাজার নিহত ও ২০ হাজার আহত হওয়ার ঘটনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও এখনো অধরা রয়ে গেছে। গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ইত্যাদির নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেয়, অনেকে বিদেশে পালিয়ে যায়। তারা কীভাবে দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপন এবং দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারলো, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। সরকারের কোনো মহলের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এটা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না। জানা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদের তিনমাস দেশেই ছিলেন; তারপর পালিয়ে গেছেন। কারো কারো গ্রেফতার করার কথা প্রকাশিত হলেও পরে তাদের বিদেশে খোঁজ পাওয়া গেছে। কীভাবে এসব সম্ভব হলো? সরিষার মধ্যে ভুত না থাকলে এটা হতে পারে না। সরিষার ভুতের আছর শুরু হয়েছে, যা আমরা এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আগামীতে হয়তো আরো স্পষ্ট হবে, যদি সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নেয়। কথায় বলে, বেড়ায় খেত খেলে খেত থাকে না। সরকারকে খেত রক্ষায় বেড়ার উৎপাটন করতে হবে।
ইনকিলাবের গতকালের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘অজ্ঞাতে সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ’। খবরের সত্যতা অস্বীকার করা যাবে না। শুধু সংগঠিত নয়, দলটি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে। ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার বেশ কিছু কল রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশনা যেমন আছে, তেমনি নানা হুমকি-ধমকিও আছে। তার চট করে দেশে ঢুকে পড়ার কথাও আছে। এসব যে কথার কথা, অনেকেই তা মানতে নারাজ। তাদের মতে, গণঅভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠিত সরকার এবং জনগণের বিরুদ্ধে হাসিনা-মোদির যে যৌথ ষড়যন্ত্র চলছে, এটা তারই অংশ। সরকারকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য গত ৫ মাসে জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, সংখ্যালঘু নির্যাতনের গালগল্প ও নাটক, গর্মেন্টে বিশৃঙ্খলা, পাহাড়ে অশান্তি ইত্যাদি অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু কোনো অপচেষ্টা-ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। ফলে এখন দলকে নাশকতামূলক কর্মকা-ে এবং দলদাস আমলা-কামলাদের মাধ্যমে বিদ্রোহ সংঘটনের ভয়াবহ অভিসন্ধি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আত্মগোপন থেকে বের হয়ে নিজ নিজ বাড়িঘর ফিরে আসতে শুরু করেছে। কোনো কোনো এলাকায় তারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতেও লিপ্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, এমনকি হত্যা করতেও তারা ভয় পাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্য রাখার সাহস দেখিয়েছেন। তিনি এমন একটি বয়ান দিয়েছেন, যা ইতোপূর্বেও কেউ কেউ দিয়েছেন। বলেছেন: ‘শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী এখনো প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বশরীরে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করে লিখিত পদত্যাগপত্র দেননি। তার মানে তিনি এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। মুহম্মদ ইউনূসের সরকার অবৈধ।’ কতটা অন্ধ, অবিবেচক, নাদান ও অমানবিক হলে এ ধরনের কথা বলা যায়, সেটা সহজেই অনুমেয়। সাড়ে ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, রাষ্ট্রীয় অর্থের নির্বিচার লুণ্ঠন ও গুম-হত্যার পর যাদের অনুশোচনায় মরে যাওয়ার কথা, জাতির কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার কথা, তারাই কিনা বলছে, তারা বৈধ। অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটা চরিত্র, একটা সংস্কৃতি, যা কোনো সময় বদলায় না।
যে কোনো মূল্যে ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় ফিরে আসতে চায়। ক্ষমতার জন্য যারা ভারতের কাছে দেশ বিকিয়ে দিতে পারে, তারা দেশ ধ্বংসও করে দিতে পারে। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তাদের ন্যূনতম মমতা নেই। দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এমন সব অপরাধ ও অপকর্ম করেছে, এত মানুষ মেরেছে যে, তার রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয়। অনেকে তার বিচার দাবি করেছে। দাবিটি অযৌক্তিক নয়। পুনরায় তার সংগঠিত হওয়া, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা দেশের জন্য মোটেই হিতকর হতে পারে না। সরকারকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সতর্ক হলেই চলবে না, তার যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। এ পর্যন্ত আনটাচ থাকায় আওয়ামী লীগের অস্ত্র, শক্তি, অর্থ এবং সাংগঠনিক কাঠামো অটুট আছে। ফলে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা সৃষ্টি করা তার পক্ষে সম্ভব। আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা হত্যাকারী হত্যার নির্দেশকারী ও হত্যার সহযোগিতাকারী, অর্থলুণ্ঠন ও পাচারকারী, যারা অন্যান্য অপরাধে জড়িত ও অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সময় ও বাস্তবতার সবচেয়ে বড় দাবি। এ দাবি বাস্তাবায়ন করলে লোম বাছাই হবে না, কম্বলই উজাড় হয়ে যাবে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, সরকারের মধ্যেই আওয়ামী লীগের অনুরাগী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করতেও তাদের কেউ কেউ রাজি। যারা হত্যাকা-, অর্থলুটসহ বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীই হোক, আর প্রশাসন ও পুলিশের লোকই হোক তাদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব মামলা হয়েছে তা যথাশিগগির সম্ভব তদন্ত সম্পন্ন ও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে। গ্রেফতার, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে অনেকেই প্রকৃত বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে পারবে। সরকারের সক্ষমতাও বুঝতে পারবে। স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তন-পুনবার্সন কেউই চায় না। না ছাত্র-তরুণ, না রাজনৈতিক দল, না সর্বস্তরের মানুষ। এ ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সরকারকে জন-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী চলতে হবে। তাতে সরকার নিরাপদ হবে। মানুষ স্বস্তি লাভ করবে। দেশ অগ্রগতির পথে যেতে পারবে। সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডার দাবি-দাওয়ার নামে যা করছে, তা বিদ্রোহের শামিল। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পতিত স্বৈরাচারের দলবদ্ধ আমলারা এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে কঠোর বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রেকর্ড ৫,৬৩৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা সোনালী ব্যাংকের
১৪৮ চিকিৎসককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি
৭ উইকেট ছেলেকে দিলেন তাসকিন
প্রধান উপদেষ্টার রাজবাড়ী সফর স্থগিত
ভিসা সত্যায়নের বেড়াজালে বিপুল সংখ্যক সউদীগামী কর্মী বায়রা নেতৃবৃন্দের সাথে বিএমইটির ডিজি
মোবাইলের ব্যাককভারে প্রিন্ট করা ছবি লাগানো প্রসঙ্গে
প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন জনপ্রিয় গায়ক আরমান মালিক
সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে পত্র দিয়ে তথ্য উপদেষ্টার অনন্য দৃষ্টান্ত
ফুলপুরে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, ৫ পরিবহনকে জরিমানা
গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় উৎসবের আমেজ
সাইবার আক্রমণ: আসিফ-সাদিক-হান্নানের ফেসবুক আইডি সচল
গোয়ালন্দে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ উপহার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২৩৪ অবৈধ অভিবাসী আটক
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ