খুনি-দুর্বৃত্তদের রাজনীতির সুযোগ রহিত করতে হবে
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য বৈষম্য, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ণের পথ রুদ্ধ করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মান করা। এ লক্ষ্যে অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে স্থান পাওয়া ছাত্র প্রতিনিধিরা শুরুতেই বলেছেন, বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে ফ্যাসিবাদীদের রাজনীতিতে পুর্নবাসনের কোনো সুযোগ নেই। পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের গুম-খুন, অর্থপাচার, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিচার যতটা ত্বরান্বিত হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়েছিল, ততটা দ্রুত গতিতে না হলেও সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে গঠিত ৪টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া হয়েছে বাকি দু’টির প্রস্তাব তৈরীর কাজও শেষ হওয়ার পথে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, খুনি-দুর্বৃত্ত, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ’্যত্থানে যারা জনতার উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ,রক্ত ঝরিয়েছে তারা নির্বাচনের অযোগ্য। তাঁর এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশন সংষ্কার কমিশনের রিপোর্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। এমনকি বিগত সময়ে যারা রাতের বেলা ব্যালটে সিল মারাসহ বিতর্কিত ও ফেইক নির্বাচনে অনুঘটকের ভ’মিকা পালন করেছেন, বিশেষত নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে অন্য কোনোভাবে ফ্যাসিবাদ কিংবা স্বৈরশাসনের উত্থান ঠেকাতে এ ধরনের ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
বিগত দেড় দশকে তিনটি জাতীয় সংসদকে কার্যত রাবারস্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বলে অভিহিত করা যায়। সেখানে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের কোনো স্থান ছিল না। বেশিরভাগ ছিল ব্যবসায়ী, যাদের অধিকাংশ ব্যাংক জালিয়াত, দখলবাজ, ভ’মিদস্যু, চাঁদাবাজ, দুর্বৃত্ত, অর্থপাচারকারি, শেয়ারবাজার কারসাজি ও বাজার সিন্ডিকেট করে জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া অলিগার্ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফ্যাসিবাদি দলীয় বাহিনীতে পরিনত করে বিরোধি মত দমনে গুম-খুন ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার সহযোগীর ভ’মিকা পালন করেছিল সংসদ সদস্য ও সরকারি দলের পদস্থ নেতারা। রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সংসদ সদস্যদের বেশিরভাগ গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলে, কিংবা মমতাজের মত সস্তা শিল্পীদের বিনাভোটে জাতীয় সংসদের সদস্য বানিয়ে সংসদকে নেতা বন্দনার আসর বানিয়ে রাজনীতি ও আইনের শাসনকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। সংসদকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। সঙ্গত কারণেই, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মূল্যবোধ,সুষ্ঠু ধারার সঠিক রাজনীতি, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে কালো টাকার মালিক, গুম-খুন, দখলবাজি-দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক পদপদবি লাভের সুযোগ রহিত করতে হবে। রাজনীতিতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ কমবেশি সব দেশেই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে গত দেড় দশকে ক্ষমতা ও রাজনীতির নামে যা ঘটেছে, তা নৃশংস ও নজিরবিহিন। তারা এ ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী করে নিয়েছিল। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে তাদের পতন ঘটিয়েছে। ছাত্র-জনতা পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের গুম-খুন, লুটপাট, দুর্নীতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।
গত দেড় দশকে রাজনীতির নামে অপরাধমূলক যত কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে তার সব বিচার অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে গুম-খুন,আয়নাঘরের নির্যাতক ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারী ও সহযোগিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের নির্বাচন করার সুযোগ রহিত করা বাঞ্ছনীয়। রাজনীতির সমীকরণ যতই ঘোলাটে হোক, দেশিÑবিদেশি কুশীলবরা যতই শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হোক, ছাত্র-জনতার হত্যাকারী, গুম-খুনের হোতা, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারি অলিগার্করা নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবে, এমন বাস্তবতা আগামীতে কেউ মেনে নেবে না। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে যে মত দিয়েছেন, তা ইতিবাচক। নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের স্বার্থদ্বন্দ্বে কোনো পক্ষ যেন ভারত বা পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে আঁতাত করে তাদের নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে রাজনীতির প্রভাবক হওয়ার সুযোগ না দিতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কারের প্রস্তাব অনুসারে, যে সব ব্যক্তি গুম-খুন, মানবাধিকার হরণ, অর্থ পাচার ও আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত, তাদের নাম-পরিচয় জনস্মুখে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচন কমিশন, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এ বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাইবুনালের বিচার, ইন্টারপোলের রেড এলার্ট, প্রত্যার্পণ চুক্তিসহ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে হবে। অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই দেশে সত্যিকারের আইনের শাসন ও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসা রোধ করা সম্ভব। জাতীয় সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনকে কলুষিত করা হয়েছিল। সর্বত্র একই ধারার নির্বাচন এবং ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত ব্যক্তিরা দখল-দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছিল। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তারাও পালিয়ে কিংবা আত্মগোপণে চলে গেছে। তাদের বিচারের আওতায় না এনে রাজনীতিতে পুর্নবাসনের কোনো সুযোগ নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম