বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব কেন তীব্র হয়ে উঠেছে
০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ব্যাপক সংখ্যক দর্শক আনন্দ মিছিলসহ মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে। বিষয়টি ভারতের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ ও কলকাতার চিত্রতারকারা মেনে নিতে পারেননি। মেনে নিতে না পেরে তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন সব মন্তব্য করেছেন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার শামিল। এক টিভি অভিনেত্রী বলেছেন, ৪৭-এর দেশভাগ এমনি হয়েছে, তবে আমরা এক। ভারত ও বাংলাদেশ একই মায়ের আলাদা নামের সন্তান। তার এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ ও ভারত আলাদা কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদ শুভেন্দু অধিকারি এমন মন্তব্য করেছেন যে, যাতে আমাদের স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, যে বাংলাদেশকে আমরা সৃষ্টি করেছি, তারা আনন্দে পটকা ফাটিয়েছে। এটা অস্ট্রেলিয়া জেতার জন্য নয়, ভারত হারার জন্য। ওটা ইসলামিক কান্ট্রি। আর এখানে খাব, এখানে ঘুমাব, এদেরকে আগে চিহ্নিত করতে হবে। সোস্যাল মিডিয়াতে চিহ্নিত করে একবারে গোড়া থেকে তুলে ফেলা দরকার। তার এ বক্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারতের রাজনীতিবিদদের মন ও মননে এ ধারণা বদ্ধমূল, বাংলাদেশকে তারাই সৃষ্টি করেছে। এ কথা যে তারা নতুন করে বলছে তা নয়, বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে দেশটির নেতৃবৃন্দ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলেছেন। এমনকি বাংলাদেশকে ভারতের সাথে একীভূত করা ও দখল করে নেয়ার কথাও বলেছেন। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সাবেক নেতা তোগাড়িয়া গৌহাটির এক সভায় বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত বাংলাদেশের একাংশ দখল করে নিয়ে সেখানে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ থাকার বন্দোবস্ত করা। তিনি সভায় দাবি করেছিলেন, সেখানে প্রায় ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশ ফেরত নিতে অস্বীকার করলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত বাংলাদেশের ভূমি দখল করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এক কোটি বাংলাদেশিকে বিতাড়ন করা হবে। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রানাওয়াত বলেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধের অংশ হিসেবে পাকিস্তান উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে মদদ দিচ্ছে। আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতকে পাকিস্তান দখলে নিতে চায়। তাই বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের নিয়ে আসামের জেলাগুলো ভরে দিচ্ছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এসব বক্তব্য যে বাংলাদেশকে হেয় করা এবং প্রকারন্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। দুঃখের বিষয়, এসব বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। সরকার প্রতিবাদ না করলেও জনগণের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে ভারতবিরোধী মনোভাব ও ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই প্রকাশ ঘটেছে এবারের বিশ্বকাপে ভারতের হারের পর উল্লাস প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে।
দুই.
মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কি এমনি এমনি বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, না। এর প্রমাণ, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে ভারত তার যত ধরনের স্বার্থ রয়েছে তা আদায় করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে, ভবিষ্যতেও নেবে। আরও গভীরে গেলে এর রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক তাৎপর্যও বের হয়ে আসবে। ’৪৭-এ দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কিন্তু পরাধীন ছিল না। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান এক দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। ভাগ হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন ও বৈষম্যের কারণে। এটা ছিল একান্তই একটি দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের কোনো দাবি-দাওয়া মানছিল না। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তাকে সরকার গঠন করতে না দেয়া থেকেই মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত হয়। পশ্চিম পাকিস্তান যদি আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দিত, তাহলে ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কেন স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিল? এর কারণ হচ্ছে, পাকিস্তানের সাথে ভারতের শত্রুতা। পাকিস্তানের একটি অংশ তথা পূর্ব পাকিস্তান তার ভূখ- দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকবে এবং তার সাথে শত্রুতা করবে, তা ভারতের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের অবজ্ঞা ও বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামের যে সূত্রপাত হয়, সে সুযোগটি নেয় তার স্বার্থে। এতে তার পেটের ভেতর থেকে পাকিস্তানের একটি অংশকে যেমন উৎখাত করা যাবে, তেমনি বাংলাদেশ নামক দেশটিকে পরোক্ষ ও প্রতক্ষ্যভাবে তার খবরদারির মধ্যে রাখা যাবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং তারা ভারতবিরোধিতা করে স্লোগানও দিয়েছিলেন। সে সময় তাদের একটি স্লোগান বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। স্লোগানটি ছিল এমন, পি-ি থেকে স্বাধীন হইনি দিল্লীর অধীনতা করার জন্য। কিংবা পি-ি থেকে দিল্লী যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। সে সময় দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ ধরনের দেয়াল লিখন অনেকের চোখে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা তখন যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, কালক্রমে তা স্পষ্ট হতে শুরু করে। ভারত ক্রমেই বাংলাদেশের ওপর দাদাগিরি ফলাতে শুরু করে। যে স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, সে স্বাধীনতার ওপর আরেকটি দেশ পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করবে কিংবা সরাসরি বলবে ’৭১ সালেই তার সঙ্গে বাংলাদেশকে একীভূত করে নেয়া উচিত ছিল কিংবা আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি, এমন কথা শোনার জন্য নয়। একটি স্বাধীন দেশের প্রতি প্রতিবেশী একটি দেশের এমন মন্তব্য অত্যন্ত অবমাননাকর। পৃথিবীতে বহুদেশ আছে, যাদের অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। তারা কিন্তু পরস্পর পরস্পরের প্রতি খবরদারি কিংবা স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে না। দখল করে নেয়ার কথাও বলে না। এমনকি ভারতের অন্য যে প্রতিবেশী দেশ যেমন নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ রয়েছে, সে দেশগুলোকে কি বাংলাদেশের মতো একিভূত বা দখল করে নেয়া উচিত ছিল? বৈরি আচরণ করলেও দেড় দশক আগেও তো ভারত এমন কথা বলতে সাহস পায়নি। এখন এ কথা কেন বলছে? এর কারণ, ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের উপর ক্ষমতাসীনদলের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। দেশের জনগণ তা প্রত্যক্ষও করছে। সরকার নির্বিকারচিত্তে আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের ঔদ্ধ্যত্যপূর্ণ কথাবার্তা মেনে নিচ্ছে। উল্টো বলছে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, রক্তের বন্ধন, রাখিবন্ধন ইত্যাদি। কোনো দেশের সরকার যদি নিজ থেকে অন্য দেশের কাছে নতজানু হয়ে থাকে, সে দেশ তো সে সুযোগ নেবেই। সরকার কি একবারও চিন্তা করেছে, তার কিংবা ভারতের এই আচরণের প্রতি দেশের মানুষের সমর্থন আছে কিনা? যে দেশ আমাদের স্বাধীনতাকে প্রকারন্তরে অস্বীকার করে, দখল করে নিতে চায়, সে দেশের প্রতি দেশপ্রেমিক জনগণের ক্ষোভ ছাড়া ভালবাসা বা শ্রদ্ধাবোধ থাকতে পারে না। সরকার না হয় তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সব স্বার্থ ও আবদার রক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে বলা মন্তব্য মেনে নিচ্ছে। কিন্তু দেশের বিরোধীদলগুলো কি ভারতের এ আচরণের বিরুদ্ধে কোনো জোরালো বা তীব্র প্রতিবাদ করেছে বা করছে? করছে না। আমরা কেবল জোরালো বক্তব্য শুনেছিলাম ২০১৬ সালের জুনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুখ থেকে। সে সময় ভারতের অন্যায্য আচরণ ও সরকার ভারতের সাথে যেসব গুপ্ত চুক্তি করেছে এবং একতরফা ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়েছে, তখন তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আছে কিনা এখন তা ভেবে দেখতে হবে। তাঁর এ কথার মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছিল তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন এবং তা দেশপ্রেমিক জনগণ ঠিকই বুঝে নিয়েছে। এখন এ কথা বলার মতো কোনো ব্যক্তি নেই। সাধারণ মানুষও তা জানে। জানে বলেই তারা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের পরাজয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে আমাদের দেশের দুয়েকজন অভিনেতা পরোক্ষভাবে ভারতের পক্ষে কথা বলেছেন। এদের মধ্যে একজন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তিনি কোনো রাখঢাক না করেই ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছেন। আরেক অভিনেতা মোশাররফ করিম এখন ভারতে অবস্থান করছেন। সেখানে তাকে সাংবাদিকরা বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকের উল্লাস প্রকাশ করা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ঘুরিয়েপ্যাঁচিয়ে বলেছেন, আমি ভারতে আসার জন্যই প্রথম পাসপোর্ট তৈরি করি। তখন আমার কৈশোর উত্তীর্ণ একটা সময়। বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ঢুকেই মনে হয়েছে, সেই একই দেশ। একই গাছপালা, একই খাল, একই সেতু, লোকজনের কথাবার্তার ধরনও এক। তার ভাবখানা এমন যে, এ যেন তারই দেশ। বিশ্বের আর কোনো প্রতিবেশী দেশের একটির সাথে আরেকটির পরিবেশ ও ভাষার সাথে যেন মিল নেই। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা বলেছেন, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কর্ণধার। কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি ভারতের অনেক গুণগান গাওয়া শেষে যা বলেছেন, তা চমকে উঠার মতো। তিনি জয় বাংলার সাথে জয় হিন্দ বলার অতি আগ্রহও ব্যক্ত করেছেন।
তিন.
ভারত আমাদের যে কত বড় ক্ষতি করেছে এবং করে চলেছে, বিষয়টি বুঝতে খুব বেশি সময় লাগবে না। নিকট ভবিষ্যতেই মনে হতে পারে, এ আমরা কী করেছি! নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই করে ফেলেছি। তখন হয়তো সময় থাকবে না। সরকার আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের কথা বলতে বলতে ভারত আধিপত্য, আগ্রাসন ও খবরদারির যে সুযোগ করে দিয়েছে, তা এখন পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও অচিরেই দেশের মানুষ দেখবে। যারা সচেতন, তারা এখনই বুঝতে পারছে, আমরা আর আমাদের মধ্যে নেই। আমরা দেখছি, সরকার ভারতের চাহিদার সবকিছু অবলীলায় বিলিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতোপূর্বে বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি, তা সারাজীবন মনে রাখবে। এর অর্থ হচ্ছে, ভারত যা চেয়েছে এবং যেভাবে চেয়েছে, তার সবই দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে সরকার ভারতের কাছ থেকে পেয়েছে প্রশংসাসূচক কথাবার্তা। জগতে যে দেয়, তার চেয়ে উত্তম কেউ হতে পারে না। জগতের আরেকটি নিয়ম হচ্ছে, দুর্বল (এখানে দুর্বল বলতে সরকারকে বোঝানো হচ্ছে) কারো কাছে যদি সবলের কোনো স্বার্থ থাকে, তখন সবল নানাভাবে ছলচাতুরির মাধ্যমে তা আদায় করে নেয়। আদায় করার পর সবল তার স্বরূপে দুর্বলের সামনে দাঁড়ায়। তখন দুর্বলের কিছু করার থাকে না। কারণ, সবলের যে জিনিসটি তার কাছে ছিল, সবল তার কাছ থেকে ছলেবলে কলাকৌশলে আদায় করে নিয়েছে। সবলকে ঠেকানোর মতো দুর্বলের কাছে আর কিছু থাকে না। দুর্বলের এই ভুলের খেসারত সারাজীবন দিয়ে যেতে হয়। সবলের ধমকের নিচেই তাকে থাকতে হয়। আত্মমর্যাদা বলে কিছু থাকে না। সবল তাকে নিয়ে যেমন খুশি তেমন খেলায় মেতে উঠে। যা খুশি তা বলে। দুর্বলের স্বাধীনতা বলে কিছু আছে, এটা মনেই করতে চায় না। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও নেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা বলেন, তাতে বাংলাদেশকে তারা কীভাবে দেখেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাদের বক্তব্যে এমন মনোভাবই প্রকাশিত হয়, যেন তাদের কথা মতো আমাদের চলা উচিত। আবার এটাও মনে হতে পারে, সরকার কখনো কখনো একটু বেকায়দায় পড়লে তার কষ্ট যেন ভারত সরকারের গায়ে গিয়ে লাগে। দুঃখে হাহাকার করে উঠে। সরকারের পাশে দাঁড়ানোর একমাত্র দায়িত্ব যেন ভারতেরই। ভারতের আচরণ দেখে মনে হবে, তার উদ্বেগ কেবলমাত্র সরকারকে নিয়ে। বাংলাদেশের আলাদা সত্ত্বা ও এর সত্ত্বাধিকারী জনগণকে নিয়ে নয়। ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও দাদাগিরির কারণে ইতোমধ্যে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ ভারতকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিয়েছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের সরকার ভারতের আচরণকে ‘বন্ধুত্ব’ বলে মনে করছে। এই বন্ধুত্বের বলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অন্যান্য প্রভাবশালী দেশকে গণার মধ্যেই ধরছে না। অথচ, তাদের সঙ্গেই আমাদের বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি। বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রতি ভারত যে প্রভুত্বমূলক আচরণ করছে, তা সরকার কৃতজ্ঞচিত্তে মেনে নিলেও দেশের মানুষ মেনে নিতে পারছে না। তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ কেবল জমছে। এই ক্ষোভ-অসন্তোসের বিষ্ফোরণ যখন ঘটবে, তখন সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে যাবে।
চার.
একটা সময় ভারতবিরোধী রাজনীতিকে ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’ বা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর হিসেবে ধরা হতো। এখন তা যে আর সে পর্যায়ে নেই, তা রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তিদের কথাবর্তা থেকে স্পষ্ট। আমাদের প্রতি তাদের চরম বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ দেখে দেশের সিংহভাগ মানুষ এখন ভারতবিরোধী হয়ে উঠেছে। এজন্য ভারত সরকার নিজে দায়ী। এখন যদি বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতা নিয়ে জরিপ করা হয়, তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, এই হার অতীতের যে কোনো হারের তুলনায় অনেক বেশি হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে থাকতে ভালবাসে, কিন্তু অন্যের খবরদারি পছন্দ করে না। কারো কাছে নতজানু হয়ে থাকতে চায় না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী