দুর্নীতিকে না বলতে হবে
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩২ এএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩২ এএম
দুর্নীতি মানব সভ্যতার প্রাচীনতম অপরাধগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করা হয়েছে। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। মানব সভ্যতা বিকাশে এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে দুর্নীতি প্রধান অন্তরায়। যে সকল দেশে সম্পদের অপ্রতুলতা রয়েছে সেখানে দুর্নীতির ব্যাপকতা রয়েছে। দুর্নীতি এমন এক অপরাধ, যা অন্যান্য অপরাধ দমনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অধিকাংশ অপরাধের অন্যতম উৎস হচ্ছে দুর্নীতি। কালের বিবর্তনে দুর্নীতির প্রকৃতি, রূপ, তীব্রতা ও প্রভাব ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। এ বিবর্তনের মূলে রয়েছে সম্পদের উপর ব্যক্তির মালিকানা অর্জন এবং মানুষের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে অসঙ্গতি। জাগতিক সুখ এবং পরবর্তী প্রজন্মের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের কাল্পনিক স্বপ্নে বিভোর কতিপয় মানুষের সীমাহীন লোভ দুর্নীতির অন্যতম কারণ। দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, দুর্নীতি কেবল গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে না বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না’। এতে দুর্নীতিযুক্ত ও ন্যায়ানুগ সমাজ গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। দুর্নীতি দমনে ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ নামক প্রতিষ্ঠানটি কর্মতৎপর ছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত সুফল না পাওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে ২০০৪ সালে মহান সংসদে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের ওপর ভিত্তি করে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যুরো অব এন্টি করাপশন বিলুপ্ত করে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। দুর্নীতি দমন কমিশন যে সকল অনিয়ম বা অপরাধের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং এবং জ্ঞাত আয়ের উৎস বর্হিভূত সম্পত্তির দখল অন্যতম।
কোনো সরকারি কর্মচারী তার উপর ন্যাস্ত সরকারি দায়িত্ব পালনে সবসময় সচেষ্ট থাকবে। অসৎ উদ্দেশ্যে দায়িত্ব পালন না করা বা সাময়িক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকাসহ অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে নিজে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া বা দেওয়ার ব্যবস্থা করা এসবই দুর্নীতি দমন আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এখানে সরাসরি আর্থিক বিষয় জড়িত থাকতেও পারে আবার নাও পারে। তথ্য গোপনের মাধ্যমেও অনৈতিক কর্মকা- সংগঠিত হয়ে থাকে। অসাধু বা অবৈধ উপায়ে সরকারি কর্মচারীকে প্রভাবিত করা এবং ব্যক্তিগত প্রভাব প্রয়োগের জন্য বকশিশ গ্রহণ দুর্নীতি দমন আইনে অপরাধ। সরকারি কর্মচারীর জন্য কোনো সরকারি কাজ সম্পাদনের বিনিময়ে বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত অন্যকোন পুরস্কার, বকশিশ বা যে কোনো সুবিধা গ্রহণ অবৈধ। সরকারি কর্মচারী কর্তৃক অনুরূপ সরকারি কর্মচারী কর্তৃক পরিচালিত মোকাদ্দমা বা ব্যবসায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট থেকে বিনামূল্যে মূল্যবান বস্তু গ্রহণ করাও অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তির ক্ষতি সাধনকল্পে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন অমান্যকরণ এবং ক্ষতি সাধনকল্পে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক কোনো অশুদ্ধ দলিল প্রণয়ন দুর্নীতি দমন আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ। সরকারি কর্মচারীর বেআইনিভাবে ব্যবসায়ে নিয়োজিত হওয়া, বেআইনিভাবে সম্পত্তি ক্রয় বা নিলামের দর হাঁকা এবং কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি হতে বা কোনো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে রক্ষার উদ্দেশ্যে আইনের নির্দেশ অমান্য করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি হতে বা কোনো সম্পত্তিকে বাজেয়াপ্ত হতে রক্ষার উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক ভুল রেকর্ড প্রস্তুত করা আইন সম্মত নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে এবং প্রতারণা কারার উদ্দেশ্যে কোনো পুস্তক, পত্র, লিপি, মূল্যবান জামানত হিসেবে কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করা বা তা থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ সংযোজন বা বিয়োজন করা বা করতে সহায়তা করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সাধারণভাবে অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বৈধকরণের প্রক্রিয়াকে মানিলন্ডারিং হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মানিলন্ডারিং দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়। দেশের বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে দেশের বাইরে অর্থ বা সম্পদ পাঠানো কিংবা রক্ষ করা মানিলন্ডারিংয়ের আওতাভুক্ত। আবার দেশের বাইরে এমন অর্থ বা সম্পত্তি, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ আছে, কিন্তু তা ইচ্ছাকৃতভাবে আনা হয়নি, তাও মানিলন্ডারিং। অনুরূপভাবে বিদেশ থেকে প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা কিংবা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ। দেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে মানিলন্ডারিং অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট এবং সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা আবশ্যক।
২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন উন্নত দেশ বিনির্মাণ করতে হলে দেশের দুর্নীতিকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও দুর্নীতি আছে, তবে তা নিয়ন্ত্রীত। তাই সর্বক্ষেত্রে সকলকে দুর্নীতিকে না বলতে হবে। (পিআইডি)
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী