ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাসময়ে অফিসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম


এবার ঈদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত তিন দিনের ছুটি ছাড়াও আগের দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোট পাঁচ দিনের ছুটি পায়। ঈদের ছুটির পরের দু’দিন বাদেও ছিলো দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাৎ ওই দু’দিন ছুটি নিলে সর্বমোট ছুটি গিয়ে দাঁড়ায় নয় দিন। অনেকে নয় দিনের ছুটি ভোগ করেছে ঈদের ছুটির পরের দু’দিন ছুটি নিয়ে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এত দীর্ঘ ছুটির পরও গত রোববার- সোমবার পর্যন্ত অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি অর্ধেকের বেশি ছিল না। অন্তত অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে হাজিরা দেয়নি কিংবা ছুটি কাটিয়েছে। কীভাবে তারা এত ছুটি পেয়েছে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বটে। সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী ইচ্ছামতো ছুটি নেয়ার সুযোগ নেই। সারা বছরে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে ছুটির প্রকৃতি ও সংখ্যা। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব কম। অনিবার্য কারণ বা বাস্তবতা থাকলে অবশ্য আলাদা কথা। আমরা লক্ষ করেছি, আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এমন একটা অংশ রয়েছে, যারা অফিসে ঠিক সময়ে উপস্থিত হয় না, অফিসে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত থাকে নাÑ তার আগেই অফিস ত্যাগ করে। অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনেও তাদের মধ্যে অনীহা দেখা যায়। মাস গেলে বেতন নেয়াই যেন তাদের কাজ। অফিসের কাজের বাইরে অন্যান্য কাজে বা দলবাজিতে তাদের মত্ত থাকতে দেখা যায়। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে তাদের ‘সাত খুন’ মাফ হয়ে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাদের কৈফিয়ত তলব করতে পারেন না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারি চাকরির নির্বিচার দলীয়করণ এ জন্য প্রধানত দায়ী। দলবাজি যখন চাকরি প্রাপ্তির কারণ হয়, চাকরির রক্ষাকবজ হয় এবং পোস্টিং, পদায়ন ও প্রমোশনের নিয়মক হয় তখন সরকারি কোনো নিয়মকানুন, কর্তব্য-কর্মের তাকিদ, নীতি-নৈতিকতা কোনো কিছুই কাজ করে না। একটা অনভিপ্রেত, অরাজক অবস্থা বিরাজ করে, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আমরা যাচ্ছি।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলা হয় ‘সেবক’, জনগণের সেবা করাই তাদের একমাত্র কর্তব্য। জনসেবার জন্যই তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের বেতন-ভাতা ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার অর্থ জনগণের পকেট থেকেই যায়। সেই সেবক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি যথাসময়ে অফিসে না আসে, নির্ধারিত অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন না করে, অফিস থেকে যখন ইচ্ছা তখন চলে যায় কিংবা যথেচ্ছ ছুটি কাটায়, তবে তাদের জবাবদিহি করার এখতিয়ার অবশ্যই জনগণের আছে। যথোপযুক্ত সেবা না করার দায়ে তাদের চাকরি থাকা উচিত নয়। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সরকারি অফিসগুলোতে সেবার মান অত্যন্ত নি¤œ। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না, সেবা পাওয়া যায় না। দূরদূরান্ত থেকে অনেক কষ্ট ও যাতনা সয়ে কাজের জন্য রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে সেবা প্রত্যাশী মানুষ এসে দুর্ভোগের শিকার হয়। হয়তো দেখা যায়, যার কাছে কাজ, সেই কর্মকর্তা বা কর্মচারী অফিসে গরহাজির। অন্য কেউ সেই কাজটি করে দিতেও রাজি নয়। ঘুষ দিয়েও সব সময় কাজ দ্রæত হয় না। একদিনের কাজের জন্য গ্রামের কোনো সেবা প্রত্যাশীকে হয়তো সাতদিনও শহরে থাকতে হয়। হয়রানিমুক্ত সেবা পেতে হলে অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে যথাসময়ে আসা, অফিস টাইমের পুরোটা অফিসে থাকা এবং যতদ্রæত সম্ভব কাজ সম্পাদন করা নিশ্চিত করতে হবে। এই সঙ্গে ঘুষ লেনদেন সম্পূর্ণরূপে রহিত করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে। তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও কর্মদক্ষতার কমতি থাকায় অনেক সময় কাজে দেরি হয় বা সেবা বিলম্বিত হয়। শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে সরকারকেই।

সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিভাগ সরকারি কর্মচারীদের অফিসে ঠিক সময়ে উপস্থিতি ও হাজিরা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন দফতরের সিনিয়র কর্মচারীদেরও এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের সবার ঠিক সময়ে অফিসে ঢুকতে হবে। ব্যতিক্রম হলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সকাল ন’টার মধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে ঢুকতে হবে। তাদের জন্য ১৫ মিনিটের গ্রেস টাইমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বিনা শাস্তিতে তারা ন’টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অফিসে ঢুকতে পারবে। এর অন্যথা হলে ক্যাজুয়াল ছুটি অর্ধদিবস কেটে নেয়া হবে প্রতিদিনের লেটের জন্য। তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা নথিভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ নিজ নিজ পরিচয়পত্র অফিসে ঢোকার সময়ে রক্ষিত যন্ত্রে পাঞ্চ করতে হবে। যে সব কারণে এ পদক্ষেপ, সে সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারি বিভিন্ন অফিসে সময়ের হিসাব রাখা হয় না। কর্মীরা যে যখন খুশি অফিসে ঢোকে এবং সময়ের আগেই বেরিয়ে যায়। কেউ অফিস ঢুকে উপস্থিতি নথিভুক্ত করে বেরিয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বলা বাহুল্য, বর্ণিত অভিযোগগুলো আমাদের দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। সুতরাং, উপস্থিতি ও হাজিরা নিশ্চিত করতে নেয়া ভারতের পদক্ষেপগুলো আমাদের দেশেও নেয়া যেতে পারে। মোটকথা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি, হাজিরা ও তাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে ও ব্যবস্থায়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা