রোজা ভাঙার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়
২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৮ এএম
সারাদিন রোজা রেখে সবাই আমরা ইফতারের সময়ের অপেক্ষায় থাকি। ভাবি ইফতারের সময়ে পাগলের মতো খাবো। কত রকম মজার মজার খাবার থাকে ইফতারের আযয়োজনে ! এই পাগলের মতো বা বেশি মাত্রায় খাওয়ার ফলে, রোজার যে আসল উদ্দেশ্য সংযম, সেই সংযম কিন্তু এতে নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে নষ্ট হয় আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া। তাছাড়া একসাথে এতরকমের ও এত বেশি খাবার খাওয়ার ফলে, ওজনও বেড়ে যায়।
রমজানে আমাদের শরীরে অনেক রকম শারীরিক পরিবর্তন আসে। অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়, তা বন্ধ থাকে। তাই সেই হজম প্রক্রিয়া আবার শুরু করার সবচাইতে ভালো উপায় হচ্ছে- ধীরে সহজপাচ্য খাবার খেয়ে শুরু করা। তাছাড়া পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরণও সংকুচিত অবস্থায় থাকে, ফলে যদি কোনো ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, তৈলাক্ত, গরম, গুরুপাক খাবার হঠাৎ করে পেটে পড়ে, তবে পেটে জ্বালা পোড়া করতে পারে। তাই শুরুতেই দরকার নরম, ঠান্ডা, সহজপাচ্য খাবার। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে, হজম প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরী হয়, শরীরের খাবার শোষণ করতেও সময় লাগে, তাই ইফতারে যদি বেশি বেশি খাবার খান, তবে বদহজম ,বমিভাব, পেটে ব্যথা, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি হতে পারে। রোজা রাখা অবস্থায় আমাদের শরীরে খাদ্যের অভাবে শরীর কোনো শক্তি উৎপন্ন করে না। তাই শরীরের শক্তির জন্যে মাসেল থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
তাই ইফতারের খাওয়া বা রোজা ভাঙ্গার স্বাস্থ্যসম্মত উপায় কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে কিছু টিপস দিচ্ছি :
রোজা ভাঙ্গতে প্রথমে পানি/ফলের জুস খান। রোজা রাখার ফলে শরীরে, যে পানি শুন্যতা হয়, তার ফলে শরীরের রক্ত চাপ কমে যায়, ব্রেইনে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, তাই মাথা ঘোরা, কাজে মনোযোগের অভাব ইত্যাদি হয়। তাই প্রথমেই পানিশুন্যতা দূর করা দরকার। তারপর খেজুর, ফল, প্রোটিন খান।
খেজুর স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী। কারণ, এতে আছে শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, কেলসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, কপার, সালফার, মেঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন, ফাইবার, যা সারাদিন রোযারাখার পরে খুবই দরকারী। আর খেজুর খেতেও খুব সুস্বাদু।
ফল বা ফলের জুস সহজপাচ্য। ফলে আছে অনেক ভিটামিন ও মিনারেলস, সারাদিন রোজা রেখে আমাদের শরীর এগুলোর জন্যে অপেক্ষ্যায় থাকে। তাছাড়া ফলে গ্লুকোস থাকে, যা সারাদিন রোজা রাখার পরে আমাদের শরীরে দরকার হয়। ফলে পানিও থাকে, তাই ফল শরীরে পানিরও চাহিদা মেটায়। ফলের মধ্যে খেজুর, তরমুজ, পেঁপে, আপেল, আঙ্গুর, আম, পেয়ারা, নাশপাতি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
আরেকটি খাবার ইফতারের শুরুতে খেতে পারেন, আর তা হলো: স্প্রাউট। তাছাড়া কাঁচা ছোলাও খাওয়া যেতে পারে। এগুলো সবজির সাথে বা সালাদের সাথে খেতে পারেন। স্প্রাউট হচ্ছে উদ্ভিদ বীজ, যাতে আছে চিনি, ভিটামিন, মিনারেলস, এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে সহজেই হজম ও শোষণ হয়। এতে ক্লোরোফিলও আছে, যা শরীরের ভেতরটা পরিষ্কার রাখে।
কম চর্বি যুক্ত পনির বা টকদইও রাখতে পারেন ইফতারের প্লেটে। সেক্ষেত্রে টক দইয়ের লাচ্ছি, মাঠা, ইত্যাদি পান করা যেতে পারে । পানি, শরবত, ফল, সবজি ইত্যাদি খাবার পরে, অল্প শর্করা খাওয়া উচিত। শর্করা ক্ষেত্রে যাতে কম জিআই সম্পন্ন যা রক্তে গ্লুকোসের মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না, তা খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে জটিল শর্করা, যেমন: লাল আটা, লাল চাল, ইত্যাদি খাওয়া ভালো। কারণ, জটিল শর্করা, রক্তে দ্রুত ইনসুলিনের চাহিদা বাড়ায় না, হজম হতে সময় নেয়, এগুলোতে আঁশও থাকে প্রচুর। মিষ্টি আলুও জটিল শর্করা তাই এটিও রাখতে পারেন ইফতারে। মিষ্টি আলুতে এই উপকারিতাগুলো ছাড়াও আছে প্রচুর বিটা কেরোটিন, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম।
প্রোটিনও দরকার ইফতারে, কারণ রোজা রাখলে খাবার ও আমিষের অভাবে, মাসেল ভাঙতে থাকে, তাই সেই ক্ষতি পূরণের জন্যে সহজপাচ্য আমিষ রাখতে পারেন, যেমন: ডিম। ডিমের বিকল্প প্রোটিন হতে পারে, ডাল, বিনস, টফু, মাছ, মুরগির মাংশ ইত্যাদি।
আরেকটি ভালো খাবার বাদাম। এটিও ইফতারের খাবারে রাখতে পারেন, যেমন: সালাদে, সবজিতে, ফলের চাটে ইত্যাদিতে।
যে খাবারই খান, তা যেনো সহজ পাচ্য হয়, শরীরে শক্তি ও পুষ্টি যোগায়।আর কোনো ভাবেই এক পরিবেশনের বেশি পরিমানে না হয়।অর্থাৎ প্রতিটি খাবার খেতে হবে পরিমিত পরিমানে। আর সেই সাথে অনেক আঁশ সমৃদ্ধ খাবারও রাখতে হবে ইফতারে। তাহলে আর হজমের সমস্যা হবে না।
খাবার ধীরে ও ভালো ভাবে চিবিয়ে খান । ভালো ভাবে চিবিয়ে খেলে খাবার হজমে সহায়ক হয়, কারণ, চাবানোর ফলে ব্রেইন হজমে সহায়ক এনজাইম নি:স্বরণে সাহায্য করে। পেট পুরা ভর্তি করে না খেয়ে একটু ক্ষুধা রেখে বা পেট ভরা শুরু করলেই খাওয়া বন্ধ করে দিন। কারণ আমাদের ব্রেইনে বা শরীরে ২০ মিনিট পরে পেট ভরা বোধ হয়।
অতিরিক্ত লবনাক্ত, চিনিযুক্ত পানীয় বা খাবারও যেনো না থাকে ইফতারের প্লেটে।
অতিরিক্ত তেল, তেলে ভাজা, গুরুপাক খাবার ইত্যাদি ইফতারে খাওয়া ঠিক নয়। এগুলো হজমে সমস্যা হয়, অতিরিক্ত ক্যালরি বহুলও।
চা,কফি দিয়েও ইফতার ভাঙবেন না।
সারাদিন রোজা রেখে আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, তাই রোজা ভাঙ্গতে যদি ভাজা পোড়া বা গুরুপাক খাবার খান, তবে বদহজম, পেটের সমস্যা, মাথাঘোরা, বমিভাব ইত্যাদি হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের তো এই বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। খেতে হবে সহজপাচ্য ও পরিমিত খাবার। মনে রাখবেন অতিরিক্ত খাওয়া বা গুরুপাক খাবার খাওয়া মানে আপনি আপনার শরীরের ওপর অত্যাচার করছেন।
ফারাজানা অমি
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল
বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!
বাগেরহাটে জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস
খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর
হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী
তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল
‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’
শ্রীনগরে বিদুৎপৃষ্ট হয়ে রং মিস্ত্রির মৃত্যু
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবীতে সিলেট এমসি কলেজে মানববন্ধন
সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ
রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো কেজি বাঘাইড় মাছ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা
সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান
গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান
দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ