ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রমজানে পেপটিক আলসার রোগীর সতর্কতা

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩০ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম

চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। অন্য সময়ের চেয়ে রোজায় খাওয়া একটু বেশী হয়ে থাকে। আমাদের ধারণা যে খালি পেটে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে। তাই পেপটিক আলসার রোগীরা রমজান এলে উদ্বিগ্ন হন। আসলে শুধু রোজার কারণে অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বাড়ে না। খাবার নির্বাচন ও গ্রহন প্রক্রিয়ায় ভুলের কারনে এটি বেশী হয়। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়; বরং শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তবে খেয়াল রাখুন, ইফতারে ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার যেন বেশি না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যথেষ্ট পানি ও আঁশজাতীয় খাবার রাখবেন। প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়ার চেয়ে ইফতারের খাবারে আনতে পারেন ভিন্নতা। বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিকের রোগী তাদের জন্য খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ইফতারে গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবেন না। নিয়ম মেনে না খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যাবে। জেনে নিন গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের রোগীরা রমজান মাসে কীভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন।

> যা করা যাবে নাঃ-তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া, বেশি মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। চা-কফি একদমই পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারও এড়াতে হবে ইফতারে। ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না কোনো ভাবেই। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে পুরোপুরি। সেহরিতে বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা ফাস্টফুড জাতীয় কোনো ভারি খাবার খাওয়া যাবে না।

> যা করতে হবে :- ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও তরল পান করতে হবে। কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত এ সময়ের মধ্যে। ইফতারে সেদ্ধ, ঝোল, সালাদ, স্যুপ, ভাত এ ধরনের খাবার খেতে হবে। একবারে বেশি ইফতার না খেয়ে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তারাবীর পর অল্প হলেও খেতে হবে। খাবার মেন্যুতে সুষম রাখতে হবে। রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। ঘুমানোর দেড় ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। খেয়েই শুয়ে পড়লে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। সেহরির মেন্যুতে কম মশলার ঝোলযুক্ত খাবার রাখুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নিন সেহরির জন্য।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তন করে নিন। গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটা বাংলাদেশে অতিপরিচিত। পেটব্যথা, বুকব্যথা যাই হক আর যে কারণই হোক আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মানুষ একটা গ্যাসের বড়ি খেয়ে থাকেন। অনেকে বছরের পর বছর ধরে এই বড়ি খেয়ে সুস্থ আছেন বলে দাবী করেন। কিন্তু এর সুদূর প্রসারী সমস্যা গুলো একবারও চিন্তা করে না।

আসলে গ্যাস্ট্রিক কী তা আমারা সকলে জানি। এতে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরী হতে থাকে। কারো কারো গলার কাছে জ্বালা পোড়া বা প্রদাহ হতে থাকে। কারো কারো চুকা ঢেক উঠে। অনেকে বমি করে এই জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পান। যত্র তত্র ঔষধের দোকান আর ভেজাল ওষুধে ভরে গেছে সারা দেশ। ব্যথা আর গ্যাসের ট্যাবলেট বিক্রি করে অনেকে প্রচুর আয় করে আসছে । শ্রমজীবী মানুষের দেশ বাংলাদেশ। দিন রাত একটানা পরিশ্রমের ফলে দেহে সঞ্চিত ব্যথা আর অনাহারে অর্ধাহারে থাকা মানুষগুলির বেকারির কেক রুটি দ্বারা উদর পুর্ণ করায় আলসারের সাময়িক উপশশম দিতে এই গ্যাসের ঔষধ খেতে খেতে এমন এক পর্যায়ে এসে গেছে যে এখন অনেকের পাকস্থলী, কিডনি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ছে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার: সাধারণ মানুষের কাছে এটি গ্যাস্ট্রিক রোগ নামে পরিচিত। ৪০-৬০ বছর বয়সের মানুষ এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণাবলী: বুক জ্বালা, বদহজম বা অজীর্নতা, পেটে বেদনা, রক্তবমি বা রক্তস্রাব, টক ঢেকুর, বমির রক্ত টকটকে লাল, পেট বেদনা হঠাৎ করে প্রচন্ড আকারে দেখা দেয়, পেটের খাদ্য বমি হয়ে গেলে ব্যথার উপশম হয়। শরীরে পানি স্বল্পতা থাকে এবং জ্বর থাকে। জটিলতা: নতুন অবস্থায় রোগী সহজে আরোগ্য হয় কিন্তু পুরাতন হলে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে বা ছিদ্র হলে পেরিটোনাইটিস হতে পারে।

ডিওডেনাল আলসার: খাদ্য পাকস্থলী হতে নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত সরু যে নালিতে প্রবেশ করে সেই বাকা অংশটিকে ডিওডেনাম বলে। সেই ডিওডেনামের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তাহাকে ডিওডেনাল আলসার বলে। সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে বেশী আক্রান্ত— হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসারের ন্যায়ডিওডেনাল আলসারের লক্ষণগুলো: খাবার গ্রহণের ১-৩ ঘণ্টা পর পেটে ব্যথা শুরু হয়। রক্ত বমি খুব একটা হয় না, কখনও হলেও রক্তের বর্ণ কালো দেখায়। পায়খানার সহিত কালো বর্ণে রক্ত যায় বা রক্ত পায়খানা। জ্বালা যুক্ত ব্যথা। রোগীদের পেটে ক্ষিদে পেলেই ব্যথা বৃদ্ধি হয়। পেটে ব্যথার সময় মুখে পানি আসে বুক জ্বালা করে।

> আসুন জেনে নেই গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না।
১. যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা ইফতারে পানি ও খেজুর খেতে পারেন। ট্যাং বা লেবুর শরবত খাওয়া যাবে না।
২. তেলেভাজা পেঁয়াজু-বেগুনি না খেয়ে চিড়া, দই ও কলা খেতে পারেন। ভাজাপোড়া খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। যদি চিড়া-দই ভালো না লাগে, তবে নরম ভাত বা জাউ ভাত খেতে পারেন।
৩. রাতে ভাত খাবেন। তবে শাক এবং ডাল রাতে না খাওয়াই ভালো। তেল, মসলা এবং ঝাল কম দিয়ে রান্না করা খাবার খান।

৪. বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা দেয়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. রোজায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
মনে রাখবেন কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সৃষ্টি করে। যার যে খাবারে সমস্যা হয় তাদের ওই সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
হোমিও সমাধানঃ-রোগ নয় রোগিকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর প্রাথমিক লক্ষণের কোনোটি দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
কলাম লেখক ও হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ
ইমেইল: [email protected]
মোবাইলঃ ০১৮২২৮৬৯৩৮৯


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রোজাদারের দাঁতের যত্ন
সাদা দাগ মানেই শ্বেতি নয়
নিয়ম মানলে রমজানে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে
আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করব
ইফতার-সেহরিতে কি খাই
আরও

আরও পড়ুন

মির্জাপুরে ট্রেনেকাটা পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

মির্জাপুরে ট্রেনেকাটা পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

জেনারেল মুনিরকে ইমরান খানের প্রতি নমনীয় হতে আহ্বান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তৈরি হচ্ছে ফাটল

জেনারেল মুনিরকে ইমরান খানের প্রতি নমনীয় হতে আহ্বান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তৈরি হচ্ছে ফাটল

বাল্টিমোরে সেতু ভাঙার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে?

বাল্টিমোরে সেতু ভাঙার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে?

ইডি-র তলব এড়িয়ে প্রচারে মহুয়া মৈত্র

ইডি-র তলব এড়িয়ে প্রচারে মহুয়া মৈত্র

বদর যুদ্ধ শিরক ও কুফুরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে

বদর যুদ্ধ শিরক ও কুফুরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে

এবার রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেল ভবনে দুদকের হানা

এবার রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেল ভবনে দুদকের হানা

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমান দুর্ঘটনা, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমান দুর্ঘটনা, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল

রাজশাহীর কাটাখালিতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত ১

রাজশাহীর কাটাখালিতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত ১

বায়ু দূষণে বছরে অকাল মৃত্যু হচ্ছে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির: বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

বায়ু দূষণে বছরে অকাল মৃত্যু হচ্ছে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির: বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

মৎস্য খাতের উন্নয়নে ১৭২ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে জাপান

মৎস্য খাতের উন্নয়নে ১৭২ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে জাপান

জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন নামঞ্জুর

জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন নামঞ্জুর

মাগুরার মহম্মদপুরে বজ্রপাতে এক হাফেজ নিহত

মাগুরার মহম্মদপুরে বজ্রপাতে এক হাফেজ নিহত

সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ইউনুস এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ইউনুস এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারসহ ভারত ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে

কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারসহ ভারত ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে

কুবি প্রশাসনের সেচ্ছাচারীতার অভিযোগ এনে ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ

কুবি প্রশাসনের সেচ্ছাচারীতার অভিযোগ এনে ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ

ঈদে ১৫টি ফেরি ২০টি লঞ্চ চলবে ৭ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক পারাপার

ঈদে ১৫টি ফেরি ২০টি লঞ্চ চলবে ৭ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক পারাপার

ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, তীব্র যানজট

ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, তীব্র যানজট

আরও চার দিন বাড়ল কেজরিওয়ালের রিমান্ডের মেয়াদ

আরও চার দিন বাড়ল কেজরিওয়ালের রিমান্ডের মেয়াদ

প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাতিলের মোকাবেলা করতে হবে

প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাতিলের মোকাবেলা করতে হবে

ভুটানের রাজাকে বিদায় জানালেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

ভুটানের রাজাকে বিদায় জানালেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী