ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

দাঁতের ইনফেকশন অবহেলার নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম

দাঁতের বিষয়ে অনেক মানুষই সচেতন নন। দাঁতে কিছু হলে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেরি করেন, কেউ কেউ মাস বছরদাঁতের রোগের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধেও জানেন না বেশিরভাগ মানুষ। চিকিৎসকদের মতে, দাঁতের ইনফেকশন কিংবা ব্যথাকে কখনোই হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। কারণ গবেষণা বলছে- দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা থেকে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন জটিল রোগের সমস্যা।

দাঁতের সংক্রমণ কি ?
দাঁতের সংক্রমণ বা দাঁতের ফোঁড়ার সংক্রমণ, যা দাঁতের গোড়া ও আশপাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পরার ফলে দাঁতের পাশে ও গোড়ার ভিতরে পুঁজ ভরে যায়। সংক্রমণটি বেদনা দায়ক হওয়ায় দন্ত চিকিৎসকের প্রয়োজন। দাঁতের চারপাশের শিরায় ও টিস্যুতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরাকে পেরিওডনটিটিস বলে।

> এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি ?
দাঁতের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া লক্ষণ হল ক্রমাগত দাঁতেব্যথা, যার ফলে মাড়ির নিচে শিরা উপশিরাগুলি ফুলে যায়। দাঁতের সংক্রমণের সাথে জড়িত অন্যান্য উপসর্গগুলি হলঃ
* দাঁতে ঠান্ডা বা গরমের স্পর্শে সংবেদনশীলতা
* জ্বরের অনুভুতি
* কিছু খাওয়ার সময় কামড়াতে বা চিবাতে অসুবিধা ও ব্যথার অনুভুতি
* মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি

> এর প্রধান কারণগুলি কি কি ?
দাঁতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। মুখের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে হওয়া নিঃসরণটি অ্যাসিডিক হওয়ার ফলে প্লাক জমে এবং ক্যারিস তৈরী হয়, যা সংক্রমণের জন্য দায়ী। দাঁতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে জড়িত আরেকটি প্রধান কারণ হল অতিরিক্ত মিষ্টি বা মিষ্টিজাত খাবার খাওয়ার পর তা সাথে সাথে পরিষ্কার না করা, যার ফলে মুখের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।

> কিভাবে এর নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয় ?
ওপরে দেওয়া লক্ষণ ও উপসর্গগুলি দেখার পর, প্রথমে এবং সর্বপ্রথম কাজ হল দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় ঠিক করা যাতে উনি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারেন যে দাঁত ও মাড়ির কতটা অংশে পুঁজের সংক্রমণটি ছড়িয়েছে। দন্ত চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন যা থেকে সংক্রমণটির বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পরার বিষয়ে জানা যাবে।

যে পরীক্ষাগুলি সাধারণত দাঁতের সংক্রমণের নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় সেগুলি নীচে দেওয়া হল:
এক্স-রে-সংক্রমণের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য করা হয়।
ওপিজি এক্স রে আপনার দাঁতের ও চোয়ালের বেড়ে যাওয়া সংক্রমণ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সংক্রমণ এড়াতে সাধারণত যে সতর্কতাগুলি অবলম্বন করা হয় তার মধ্যে দাঁতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিশেষভাবে জরুরী। চিকিৎসক প্রতিদিন দুবার দাঁত মাজার ও ফ্লসিংয়ের পরামর্শ দেন প্লাক জমা হওয়া ও সংক্রমণ এড়ানোর জন্য।
তবুও, যখন সংক্রমণটি ঘটে বা ছড়িয়ে পড়ে, তখন যে অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয় তা হলঃ
* পুজ ভর্তি ফোঁড়াগুলি চিড়ে বাদ দেওয়া- পুঁজ ভর্তি ফোঁড়া গঠিত হলে, ব্যথা কমাতে চিকিৎসক ফোঁড়াগুলি থেকে পুঁজ বের করে দেন।
* রুট ক্যানেল পদ্ধতি- দন্ত চিকিৎসক রুট ক্যানেল পদ্ধতির মাধ্যমে মাড়িতে ছড়িয়ে পরা সংক্রমণ ও জমা হওয়া পুঁজ বের করেন।
* প্রাভাবিত দাঁতটি উপরে ফেলা- প্রাভাবিত দাঁতটিতে রুট ক্যানেল পদ্ধতি যখন কার্যকরী হয়না তখন শেষ পদক্ষেপ হিসাবে দাঁতটি তুলে ফেলা হয়।

> জীবাণু ঢোকার রাস্তা :
মুখের ভেতর নানা ধরনের ৭০০টি জীবাণুর বাস, যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি। এ সব জীবাণু ঢোক গেলা এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। তাছাড়া রক্ত চলাচলে মধ্য দিয়েও জীবাণু মুখে ঢুকতে পারে। অর্থাৎ দাঁতে জীবাণু ঢোকার প্রবেশ পথ অনেক। তাই সকলেরই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
পরিশেষে বলতে চাই, শরীরের যে কোনো অঙ্গের মতো দাঁতের যতœও অত্যন্ত জরুরি। তাই দাঁতকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে নিয়মিত যতœ ছাড়াও ডাক্তারি চেকআপ প্রয়োজন। তাছাড়া দাঁতে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় কোনো রোগীর চোখ, কান, মস্তিষ্ক বা হার্টের মতো অঙ্গে অপারেশন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই একথা সত্য যে দাঁতের কোনো সমস্যা হলে অনেকেই প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা উপশমের জন্য ‘পেইন কিলারের’ আশ্রয় নিয়ে থাকেন অনেকে। অথচ দাঁতের সমস্যা সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে সমস্যার শুরুতেই সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ডা. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া
চীপ কনসালটেন্ট এবং মুখ ও দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ
ইসলাম ডেন্টাল কেয়ার, ফেনী।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌ-বাহিনীর ২০০ সদস্য

দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌ-বাহিনীর ২০০ সদস্য

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে