বজ্রপাতে মৃত্যু
২৪ মে ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১২:২০ এএম
ঝড় বৃষ্টি শুরু হতেই শুরু হয়েছে বজ্রপাতে মৃত্যু। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এর একটি বড় কারণ বড় গাছ কেটে ফেলা। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়াও অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আবহাওয়ার ধরন বদলে গেছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত কিছুটা সরে গেছে। মৌসুমের আগে পরে বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত বেড়েছে। আবহাওয়ার পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বজ্রপাতে বছরে গড়ে মারা যান ৩২০ জন। এটা পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। লক্ষণীয়, বজ্রপাতে মৃত্যুর শিকার সবাই গরিব। বিশেষ করে কৃষক ও জেলে।
কালবৈশাখী শুরু হলে সাথে সাথে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। নিরাপদ আশ্রয় বলতে পাকা ঘরকে বোঝানো হয়। অর্ধ শেড, পুরনো-জীর্ণ বাড়িতে আশ্রয় না নেয়াই ভালো। বাড়িতে অবস্থান করলে জানালা, সিঙ্ক, টয়লেট, বাথটাব, ইলেকট্রনিক্স থেকে দূরে থাকা ভালো। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতের সব সুইচ বন্ধ রাখুন। অনেক সময় এসবে বজ্রপাত হয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ লাফিয়ে আপনার শরীরে আসতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বৈদ্যুতিক লাইনের খাম্বা বা উঁচু কোনো দালানের পাশে দাঁড়ানো মোটেই নিরাপদ নয়। টেলিফোনের লাইনে বজ্রপাত হলে সে সময় আপনি কথা বলতে থাকলে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এ সময় ফোনে কথা না বলাই ভালো। তবে মোবাইলে কথা বললে সমস্যা নেই। বজ্রপাতের সময় গোসল না করাই ভালো। এ সময় গাড়িতে থাকলে সমস্যা নেই। তবে গাড়ি থামিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকুন। অনেক সময় আছে যখন নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না তখন নিজেকে যতটা সম্ভব গুটিয়ে নিন। মাথার চুল যদি একদিকে লম্বা হয়ে থাকে তাহলে বজ্রপাত পড়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বজ্রপাত সব সময় উঁচুতে আঘাত করে। আপনার পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে বসুন। দুই পা যতটা সম্ভব কাছাকাছি আনুন। দু’হাত রাখুন হাঁটুর ওপর। এবার মাথা নিচু করুন যতটা সম্ভব। তবে কোনোভাবেই হাত বা হাঁটু মাটিতে লাগাবেন না। এটা করলে আপনি সহজেই বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়বেন। অনেকে মনে করেন বজ্রপাতের সময় শুয়ে পড়তে হয়। এটা খুবই মারাত্মক ভুল ধারণা। এতে বজ্রপাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
যদি নদীতে নৌকায় থাকেন তাহলে একই ভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে ছইয়ের নিচে অবস্থান নিতে পারেন। বনের মধ্যে থাকলে বড় গাছের নিচে না অবস্থান করে ছোট গাছপালার নিচে নিজেকে গুটিয়ে রাখুন। কেউ বজ্র্রপাতে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র্রপাতে আক্রান্তের পর তাকে ধরলে কোনো সমস্যা নেই কারণ এ সময় তার শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না। যদি শ্বাস না নেয় তাহলে চিৎ করে শোয়ানোর পর মুখ হা করান। এবার আপনি বুক ফুলিয়ে বাতাস নিন। তার মুখের সাথে মুখ লাগান। তার নাক চাপ দিয়ে বন্ধ করে আপনি তার মুখ দিয়ে ভিতরে বাতাস দিন। যদি নাড়ির স্পন্দন না থাকে তাহলে বুকে চাপ দিতে থাকুন ও মুখে মুখ লাগিয়ে বাতাস দিন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১১-২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে দুই হাজার ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালে দেশে বজ্র্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এরপর থেকে নানা সময় চিহ্নিত করা হয় কোন কোন এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়। দেখা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পূর্ব ও সরাসরি উত্তর-পূর্ব কোনাকুনি এলাকা অর্থাৎ সুনামগঞ্জ-সিলেট অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ। বাংলাদেশের আকাশসীমায় দুই ধরনের বজ্রপাত ঘটে। একটি মেঘ থেকে মেঘে, আরেকটি মেঘ থেকে মাটিতে। বছরে মেঘ থেকে মাটিতে বজ্র্রপাতের গড় সংখ্যা প্রায় সাত লাখ ৮৬ হাজার। মেঘ থেকে মেঘে যে বজ্র্রপাত, সেটা চিন্তার বিষয় নয়। এতে প্রাণহানি হয় না। কিন্তু দেশের আকাশসীমায় বছরে মেঘ থেকে মাটিতে যে প্রায় সাত লাখ ৮৬ হাজার বজ্রপাত ঘটছে তা যথেষ্ট চিন্তার কারণ। বজ্র্রপাত এমন এক দুর্যোগ চাইলেই যার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় বজ্রপাত আটকে রাখার মতো প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশে এটি এখন সম্ভব। আমরা তা করতে পারলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। তবে এ কথা ঠিক যে, এ ধরনের প্রযুক্তি প্রচলন ও এর সাথে মানিয়ে নিতে আমাদের আরো সময় দরকার। এ জন্য বজ্রপাত থেকে রক্ষায় আমাদের সচেতনতার বিকল্প নেই।
বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারিভাবে যেসব স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্র্রপাত থেকে মানুষ বাঁচানোর একটি উপায় হতে পারে তালগাছ লাগানো। এটি হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সেই সাথে মধ্যবর্তী, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার কাজও চলমান থাকবে। সেটি হতে পারে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি, পূর্বাভাস দেয়ার প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং মাঠেঘাটে কাজ করা সব মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেয়া। বজ্রপাতে হাওর এলাকায় বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই সেখানে মাঠে শেল্টার জোন তৈরি করা অপরিহার্য। সেখানে জমির আলে তালগাছ বা সুপারি গাছ লাগানো হলে সুফল মিলবে। কিন্তু সবার আগে বড় গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত যেসব জায়গায় মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে, সেখানে লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করতে হবে। মাঠপর্যায়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা আগে দেয়া যায়। রাডারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা আগে বোঝা যায় কোন এলাকায় বজ্রপাত হতে পারে। সে ব্যবস্থায় যাওয়ার আগে মৃত্যু কমানোর উত্তম উপায় জনসচেতনতা। এজন্য গণমাধ্যমের ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিয়েও মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। এ ব্যাপারে দ্রুত কিছু না করলে সামনে সমূহ বিপদ।
মো: লোকমান হেকিম
গবেষক-কলামিস্ট, মোবাইল-০১৭১৬-২৭০১২০।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রুখে দাঁড়াও দিল্লির আগ্রাসন
স্বাধীনতার মাস : ইয়া আল্লাহ! এই জাতিকে সর্বকল্যাণে ভূষিত করুন
পতাকা আক্রান্ত, সুশীল বুদ্ধিজীবীরা এখন কোথায়?
জাতীয় ঐক্যের জন্য আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা
আঞ্চলিক উত্তেজনায় দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের
পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার চায় না ৮৯.৫ শতাংশ মানুষ
ক্ষোভ ঘৃণা গণবয়কট!
আইএমএফ’র ঋণের ১.১ বিলিয়ন ডলার মিলবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে
ভারতকে বুঝতে হবে এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয় -আসিফ নজরুল
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোলামি করতে স্বাধীনতা অর্জন করিনি -সোহেল তাজ
মুহাম্মদ ইউনূস, ছাত্র সমন্বয়করা বাংলাদেশে গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড : হাসিনা
কোনো একটি ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক সঙ্কুচিত হবে না -প্রণয় ভার্মা
আসছে নতুন টাকা, থাকছে ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি
পালানোর পথ খুঁজতে থাকে হানাদার বাহিনী
ভয়ঙ্কর সমস্যা সড়ক দুর্ঘটনা
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার
জলহস্তির কুমড়া খাওয়া ভাইরাল
অক্সফোর্ডে ‘ব্রেন রট’ যোগ
দাম বেশি সুবিধা কম