ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আলট্রাসনোগ্রাফি কী এবং কেন

Daily Inqilab ইনকিলাব

২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম

বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন সব যন্ত্রপাতি আবিষ্কিত হয়েছে যার সাহায্যে অতি অল্প সময়ে মানব দেহের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এমন একটি পদ্ধতির নাম আলট্রাসনোগ্রাফি, আর যে যন্ত্র দিয়ে এটা করা হয় তার নাম আলট্রাসনোগ্রাফ মেশিন। এটি এক ধরণের অতি উন্নত প্রযুক্তির রোগ নিরুপণ পদ্ধতি যা শুধু মাত্র নিরাপদ শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়। আলট্রাসনোগ্রাফের শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১-১০ মেগাহার্টজ হয়ে থাকে। এ  শব্দ সাধারণত মানুষ কানে শুনতে পায় না। এ শব্দ তরঙ্গ মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রবেশ করানো হয় এবং প্রতিধ্বনি কম্পিউটার যন্ত্রের সাহায্যে তার পর্দায় ছবি আকারে প্রতিফলিত হয়। তা দেখে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করেন। মানব দেহের অনেক রোগই এ পদ্ধতিতে নিরুপন করা হয়। তার মধ্যে লিভার (যকৃত), পিত্তথলী, অগ্নাশয়, প্লীহা, কিডনি, মূত্রথলী, প্রস্টেট গ্রন্থি, জরায়ু, গর্ভাশয়, থাইরয়েড গ্রন্থি, স্তন, চোখ, বাচ্চাদের মস্তিস্ক ইত্যাদি। মায়েদের গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের গর্ভের সন্তানের বয়স,ওজন,অবস্থান,জন্মগত ত্রুটি সন্তানটি জীবিত না মৃত, সন্তানের সংখ্যা, সন্তান ছেলে না মেয়ে ইত্যাদি তথ্য অতি সহজে জানা যায়। অন্য কোন মাধ্যমে এমন তথ্য জানা এত সহজ নয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা  খুবই প্রয়োজন। কোন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পর ২০-২২  সপ্তাহের পর অথবা ২৮-৩০ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই দরকার কারণ এ পরীক্ষা হতে নিচের তথ্য গুলো জানা যায় এবং কোন প্রকার অসুবিধা হলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করে নিরাপদ থাকা যায়। 
১। গর্ভের বয়স:- এ পরীক্ষায় বাচ্চার মাথা এবং পায়ের হাড় মেপে সে মোতাবেক মহিলার ডেলিভারীর তারিখ বা প্রসবের তারিখ বলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যাদের মাসিকের হিসাব মনে নেই বা হিসাব রাখেন না বা যাদের মাসিক অনিয়মিত তাদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই প্রয়োজন। 
২। গর্ভের সংখ্যা :- এ পরীক্ষার সাহায্যে গর্ভে কয়টি সন্তান বিদ্যমান তা সুন্দর ভাবে জানা যায়। প্রসবের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়। 
৩। গর্ভ ফুলের অবস্থান:- গর্ভাবস্থায় গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা খুবই দরকার। এ পরীক্ষায় যদি দেখা যায় গর্ভফুল জরায়ুর মুখের কাছাকাছি অথবা জরায়ুর মুখে ঢেকে আছে অথবা নাড়ী বাচ্চাকে পেচিয়ে আছে তাহলে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে হবে। এ অবস্থায় সধারণত স্বাভাবিক প্রসব আশা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের প্রস্তুতি নিতে হতে পারে। অনেক সময় হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে তার কারণ জানা যায়  এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া যায়। 
৪। বাচ্চার অবস্থান:- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান জানা জরুরি, কারণ মাথা নিচের দিক হয়ে খাড়া অবস্থায় বাচ্চা না থাকলে বিপদের লক্ষণ হতে পারে। বাচ্চা উল্টো বা কোনাকোনি থাকলে এ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া যায়। ফলে মারাতœক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা ছাড়া পেটের পানির পরিমাণ জানা আরো জরুরি। জরায়ুতে পানিতে ভাসমান অবস্থায় বাচ্চা থাকে। কোন কারণে পানি কমে গেলে বা শুকিয়ে গেলে বাচ্চা মারা যেতে পারে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে অনাগত সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। 
৫। সন্তান ছেলে না মেয়ে:- আধুনিক এ যুগে মহিলারা গর্ভবতী হলেই কাংখিত হয়ে থাকেন পরিবারের সবাই সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানার জন্য। গর্ভের সন্তানের বয়স ২০-২২ সপ্তাহ হলেই এ পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তান ছেলে না মেয়ে জানা যায়। তবে ২৬ সপ্তাহের পরে স্পষ্ট ভাবে জানা যায় সন্তান ছেলে না মেয়ে। যদিও এটা প্রকাশ করা আইনত নিষিদ্ধ। 
৬ । জরয়ুর বাহিরে গর্ভধারণ: অনেক সময় গর্ভধারণ জরায়ুর বাহিরে হয়ে সন্তান বড় হতে থাকে। যা খুবই বিপদ জনক। তা আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জেনে সঠিক চিকিৎসা নিলে বিপদ মুক্ত হওয়া যায়। 
৭ । তা ছাড়া বাচ্চার হৃদস্পন্দন কম না বেশি তা নির্ণয় করা জরুরি। 
বর্তমান সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার, গ্রহণ যোগ্যতা এত ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ পরীক্ষাটি করে থাকেন। তা ঠিক নয়। আপনার দেহের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন কি না তা আপনার চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন। মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঔষধ গ্রহণ করবেন না। অথবা  নিজে নিজে অযথা পরীক্ষা করাবেন না।  মোঃ জহিরুল আলম শাহীনশিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক ফুলসাইন্দ দ্বি পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ গোলাপগঞ্জ, সিলেট।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাঁচকলার উপকারিতা
অপরিণত নবজাতকরাও ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে
বিমান ভ্রমণে জেট ল্যাগ
চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি
আরও

আরও পড়ুন

নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ

কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ

পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত

পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত

দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক

দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক

পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক

লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত

লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত

বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ

বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত

লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত

এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন

এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা

ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর

ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর

আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া

আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া

হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে

হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানিকগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানিকগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত