হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ পক্স নয়
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
তিন বছরের রাহাত এসেছে হাতে, পায়ে আর মুখের ভিতরে অনেক গুলি ফোস্কার মত ঘা নিয়ে। বাচ্চা খুবই বিরক্ত, কিছু খেতে চাইছে না, শরীরটা গরম। মা বাবাও এই সমস্যা নিয়ে চিন্তিত, বলছে এরকম পক্সত আমরা আগে কখনও দেখিনি। এটা কিভাবে হল? আমাদেরও হবে নাকি আবার?
মুখের ভিতেরে জ্বালাপোড়া-ঘা, খাবারে অনীহা, হাতে পায়ে পানিসহ ফোস্কা, জ্বর নিয়ে অনেক বাচ্চাই আজকাল ভুগছে। এদের বেশীর ভাগই বহুল পরিচিত চিকেন পক্স, স্কেবিস, খোসপাচড়ার মত রোগে ভুগছে না। এটি একটি এন্টেরোভাইরাস ঘটিত রোগ, যাকে বলা হয় হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ। যা ৩ থেকে ৭ বছর বয়সের বাচ্চাদেরই বেশী আক্রান্ত করছে। তবে বড়দেরও এটি হতে পারে। কক্সাকি নামক ভাইরাস দিয়ে এটি হচ্ছে। এটি ভাইরাস ঘটিত রোগ হলেও তা পক্স নয়।
লক্ষণ কি হয়:
বাচ্চা দুর্বল হয়ে যায়, বিরক্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
গায়ে জ্বর থাকে।
মুখে ভিতরে ব্যথা, ঘা ও লালচে রং ধারন করে।
হাতে, পায়ের তলায়, পিঠে, পাছায় পানিসহ দানা দেখা যায়। এরা না চুলকালেও এলাকাভেদে এদের রং লাল, সাদা, ধুসর ইত্যাদি রংয়ের হয়।
খাবারের রুচি চলে যায়।
কি কারনে এটি হয়:
সাধারণত কক্সাকি ভাইরাস এ১৬ দিয়েই এটি বেশী হয়। এটি নন পোলিও এন্টেরো ভাইরাস গ্রুপের একটি ভাইরাস। তবে অন্যান্য এন্টেরো ভাইরাসও এই হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ করতে পারে।
জীবানু বহনকারীর মুখ থেকেই বেশীরভাগ বাচ্চা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসলে তার যে সব বডি ফ্লুইড অন্যকে সংক্রমিত করেÑ
নাক ও গলার রস
মুখের লালা
চামড়ার ঘায়ের কস
পায়খানা
হাঁচি কাশির ফলে বাতাসে ভেসে থাকা ড্রপলেট।
কাদের বেশী হয়:
যেখানে অনেক বাচ্চা একসাথে থাকে। ছোট বাচ্চারা ঘন ঘন ডায়াপার বদলায়, একই ওয়াস রুম ব্যাবহার করে। বাচ্চারা হাত মুখে দেয়, একই খেলনা কয়েকজন মুখে দেয়।
সংক্রমিত হওয়ার প্রথম সপ্তাহেই অন্যকে বেশী সংক্রমিত করতে পারে। তবে সমস্যা চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেও বাচ্চার শরীরে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। তাই সে তখনও অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে।
বড়রা কোন লক্ষন ছাড়াই অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
আমাদের দেশে বর্ষার পর পরই এটা বেশী ছড়ায়। তবে গ্রীষ্ম শরতেও এটা হতে পারে।
পশু থেকে মানুষে ছড়ায় না:
পশুদের যে মুখ ও খুড়া রোগ হয় তা থেকে এটি আলাদা। অর্থাৎ পশু থেকে এই রোগ মানুষের কাছে আসে না আবার মানুষের হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ মানুষ থেকে পশুর কাছে যায় না। এরা ভিন্ন ভিন্ন রোগ।
ঝুঁকিপূর্ণ কখন:
বয়সটাই একটা বড় ঝুঁকি। ৫ থেকে ৭ বছরের কম বয়সিদেরই এটা বেশী হয়। আর যারা একই সাথে ডে কেয়ার, নার্সারীতে বা বাসায় অনেক বাচ্চা একসাথে থাকে তারই বেশী আক্রান্ত হয়। ধারনা করা হয় একটু বড় বাচ্চারা আর বড়রা একবার এক্সপোজ হওয়ার পর এন্টিবডি তৈরী করে ফেলে। তারপরও যাদের এন্টিবডি নাই তারা বড় হলেও আক্রান্তের তালিকায় আসতে পারে।
জটিলতা যা হতে পারে:
প্রথম এবং খারাপ জটিলতা হল শরীরের পানি কমে গিয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কারন এ সময়ে মুখ গলায় ঘায়ের কারনে বাচ্চা খেতে ও গিলতে পারে কম।
তাই যারা খেতে পারছে না, নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, প্র¯্রাব কমে যাচ্ছে প্রয়োজনে তাদের শিরায় ফ্লুইড দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্বর, ফোস্কা, মুখে ঘা কয়েক দিনেই সেরে যায় তরল খাবার খেলে আর প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধে। তবে যদি এটা ব্রেইনকে আক্রান্ত করে তবে ভাইরাল মেনিজাইটিস ও এনকেফালাইটিস করতে পারে। যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। যদিও এত জটিল বাচ্চা অনেক কম পাওয়া যায়।
প্রতিরোধের উপায় কি: কিছু কিছু ভাল অভ্যাস হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ থেকে বাচ্চাকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
হাত পরিস্কার: সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে খাবার তৈরি ও খাবার খাওয়ানোর আগে। বাচ্চার ডায়াপার পরিস্কার করার পর, হাঁচি-কাশি-নাক পরিস্কারের পর। সাবানের যোগান না থাকলে সেনিটাইজার দিয়ে হলেও হাত পরিস্কার রাখতে হবে।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা দিতে হবে: কিভাবে হাত মুখ ধুতে হয়। কখন অবশ্যই ধুতে হয়। কোন ভাবেই কেন হাত, আঙ্গুল বা কোন খেলনা মুখে দিতে হয় না তা বলে বুঝাতে হবে।
কমন জায়গা ও ব্যবহার্য পরিস্কার রাখা: যেখানে অনেক মানুষ, বাচ্চা এক জায়গায় আসে, খেলে, খায় তা নিয়ম করে বার বার পরিস্কার করতে হবে। সাবান পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। ফ্লোরটা ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। খেলনা, কলম, পেন্সিল, দরজার নব, লিফ্টের বাটন, টেবিল পরিস্কার রাখতে হবে প্রতি বেলায়।
সংক্রমিত রুগী থেকে দুরে থাকতে হবে: যেহেতু এটা ছোঁয়াচে রোগ তাই যার রোগটি আছে সে বাসায় আলাদা থাকবে যতদিন তার রোগ লক্ষণ থাকে, চামড়ার ঘা শুকিয়ে না যায়, মুখের ভিতরটা ভাল হয়ে না যায়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
উপরের রোগ লক্ষন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে নিজে চিকিৎসা করে বা হাতুড়ের পরামর্শে তা বাড়িয়ে তুলবেন না।
বা”্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে অবশ্যই চিকিৎকের পরামর্শে চিকিৎসা নিবেন।
মুখের ব্যথা বা ঘায়ের জন্য কম খেতে পারছে বা খেতে পারছে না।
কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে এমন রুগী।
১০ দিনেও লক্ষণের উন্নতি হয়নি এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সাধারন কিছু জিজ্ঞাসা:
জ্বর কমাব কিভাবে? উ: প্যারাসিটামল বা আইবোপ্রোফেন খেতে হবে, এসপিরিন নয়।
গোসল করা যাবে? উ: যাবে, তবে হালকা গরম পানিতে। প্রতিদিন গোসল করলেই বরং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে।
ফোস্কায় ক্রিম দেয়া যাবে? উ: সাধারনত চুলকায় না বা ব্যথা করে না। তবে চুলকালে হাইড্রোকর্টিসন মলম দেয়া যায়। আর ক্ষত করে ইনফেকশন করে ফেললে কখনও কখনও এন্টিবায়োটিক মলম দেয়া হয়। নারিকেল তেল, পেট্রোলিয়াম জেলি আরাম দেয়।
বাচ্চা রাতে কম ঘুমায় কেন? উ: মুখের ভিতরের জ্বালা পোড়ার কারনে আর কম খাওয়ার কারনে অনেক বাচ্চা ঘুমাতে পারে না।
বাচ্চাকে মধু দেয়া যাবে? উ: যাবে। এটা মুখের ভিতরের ঘায়ে আরাম দিতে পারে।
কত দিনে এটা ভাল হবে? উ: জ্বর ২-৩ দিনেই চলে যায়, মুখের ঘা ৭ দিন থাকতে পারে, হাত পায়ের ফোস্কা ১০ দিনে শুকায় তবে খুশকি আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।
ডা. জহুরুল হক সাগর
নবজাতক-শিশু-কিশোর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
রূপসী বাংলা হাসপাতাল,
জিয়া সরনী, শনির আখরা, কদমতলি, ঢাকা।
ফোন: ০১৭৮৭ ৭৪০ ৭৪০: ০১৭২৮ ৫৫৮ ৯৯৯।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর বৃদ্ধের মরদেহ মিলল পুকুরে
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কে ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
বুধবার রাতে সচিব নিবাসেও আগুন লেগেছিল
শৈলকুপায় নিহতের ঘটনায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা
মধ্যরাতে আগুন লেগেছিল সচিব নিবাসেও
গোয়েন্দা সংস্থা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে : রিজভী
ফুলপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন
সচিবালয়ের ৮ তলায় মিলল কুকুরের দগ্ধ মরদেহ, চাঞ্চল্যের সৃষ্টি
সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা পল্লীতে ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হলো হরিণের মাংস
ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা সম্পন্ন
প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজে রজতজয়ন্তী উদ্যাপন
‘সচিবালয়ে আগুনের পেছনে আওয়ামী দোসরদের ষড়যন্ত্র রয়েছে’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড : প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি ফখরুলের
আটঘরিয়া-চাঁদভা হাড়লপাড়া সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে দুর্ভোগে পথচারীরা
পুড়ে যাওয়া ২ মন্ত্রণালয় দেখে আসিফ মাহমুদ: ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে’
দেশে ফিরলেন মিজানুর রহমান আজহারী, অংশ নেবেন মাহফিলে
আরেকটি বিধ্বংসী দ্বিশতক হাঁকালেন রিজভি
অবৈধ শিসা তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর
সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন , বন্ধ দাপ্তরিক কাজ
স্থানীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা আজ স্বাবলম্বি