ব্যাকটিরিয়াও কি ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৯ এএম | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৯ এএম

মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের উপর ব্যাকটিরিয়ার প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাকটিরিয়ার নিজস্ব জগত, পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান সম্পর্কে এতকাল বেশি কিছু জানা ছিল না। নতুন এক গবেষণায় বিস্ময়কর তথ্য উঠে আসছে।

 

এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে, সেই জ্ঞান অনুযায়ী ব্যাকটিরিয়ার এমন কোনো ইন্দ্রিয় নেই যা দিয়ে সে এই আলোর সংকেত গ্রহণ করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বায়োকেমিস্ট মার্গারেট ম্যাকফল-নাই বলেন, ‘‘একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, গোষ্ঠী হিসেবে দৃশ্যমান হওয়ার জন্যই ব্যাকটিরিয়া উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অতি ক্ষুদ্র আকারের কারণে একটিমাত্র ব্যাকটিরিয়ার কিন্তু সেই ক্ষমতা নেই। সে কারণে অনুমান করা হচ্ছে, যে ব্যাকটিরিয়া সেই মুহূর্তে উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে, যখন তাকে দেখার মতো জটিল চোখ ছিল।''

 

কিন্তু আরো বড় কোনো প্রাণীর চোখে ব্যাকটিরিয়া নিজেকে দৃশ্যমান করে তুলতে চায় কেন?

 

বিজ্ঞানীরা বহুকাল সন্ধান চালিয়েও সেই কারণ বুঝতে পারেন নি। তারপর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে ক্ষুদ্র এক প্রাণী সেই রহস্য বুঝতে সাহায্য করলো। প্রতি সন্ধ্যায় হাওয়াইয়ান ববটেইল স্কুইড নামের ক্ষুদ্র অক্টোপাস জাতীয় প্রাণী তার গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ক্ষুদ্র কাঁকড়া ও চিংড়ি শিকার করে।

 

চাঁদ ও তারার আলোয় নিজেই অন্য প্রাণীর শিকার হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সেই স্কুইড এক চতুর কৌশল প্রয়োগ করে। সেই প্রাণী তখন জ্বলজ্বল করতে থাকে। নিজের উজ্জ্বল হওয়ার ক্ষমতা না থাকায় সেই প্রাণী আসলে অ্যালিভিব্রিও ফিশেরি ব্যাকটিরিয়া কাজে লাগায়। স্কুইড তার বিশেষ লুমিনিয়াস অরগ্যানের মধ্যে সেগুলি পুষে রাখে। ব্যাকটিরিয়া স্কুইডের গোটা ত্বকের উপর ছড়িয়ে পড়ে।

 

প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার বড় সেই প্রাণী এভাবে নিজের ছায়া উজ্জ্বল করে অন্য শিকারি প্রাণীর চোখে কার্যত অদৃশ্য হয়ে ওঠে। সেই প্রাণী গবেষকদের চোখেও এভাবে ধুলো দিয়ে এসেছে। তবে একটা উপায় পাওয়া গেছে। সিআইটি-র সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ব়্যন্ডাল স্কারবরো জানান, ‘‘আমরা এমন এক প্রাণী সংগ্রহ করেছি। সেটি একটি পূর্ণবয়স্ক মাদি হাওয়াইয়ান ববটেল স্কুইড। আমরা সেটিকে ভোরবেলা পাঠিয়ে দিলে পরের দিন সকালে সেটি গন্তব্যে পৌঁছবে। পরিবহণের সময় সেটি প্রায় ২০ ঘণ্টা পথেই থাকে। সাধারণত যাত্রার ধকল ভালোই সামলে নিয়ে খুশিই থাকে।''

 

বিমানে প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করার পর ছোট স্কুইড প্যাসিডিনা শহরের গবেষণাগারে নতুন বাসায় পৌঁছেছে। আরো নয়টি নর ও মাদি প্রাণীর সঙ্গে সেটিকে বিশেষ পরিবেশে যত্ন করে রাখা হয়েছে, যাতে সেগুলি নিশ্চিন্ত মনে অনেক বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এর আগের বহু গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অক্টোপাস জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে ব্যাকটিরিয়ার সিম্বায়োসিস বা সহাবস্থান সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন।

 

যেমন জ্বলজ্বল করে ওঠার বায়োলুমিনেসেন্স প্রক্রিয়ার সময় দুই জীবের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের লক্ষণ দেখা যায়। সিআইটি-র আণবিক জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড রুবি বলেন, ‘‘এই সব ব্যাকটিরিয়া নিজস্ব ক্ষমতায় বায়োলুমিনেসেন্স সৃষ্টি করে, এমন কোনো বিশেষ কারণের কথা আমরা জানি না। একমাত্র সিম্বায়োটিক সংযোগের ক্ষেত্রে কোনো হোস্ট প্রাণীর জন্য আলো সৃষ্টি করে, যা সেই প্রাণী নিজস্ব আচরণে কাজে লাগাতে পারে। আমরা খুবই বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, যে ব্যাকটিরিয়া নির্দিষ্ট ঘনত্বে একত্রিত হলে আলোর মাত্রা আচমকা বেড়ে যায়। সেই ঘটনার কারণে আমাদের ধারণা হচ্ছে, যে ব্যাকটিরিয়া পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে। প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো ব্যাকটিরিয়ারও নানা আচরণ রয়েছে। খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে সেগুলি স্পষ্ট হয়।''

 

ব্যাকটিরিয়ার মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের প্রক্রিয়াকে ‘কোরাম সেন্সিং' বলা হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাকটিরিয়া নানা ‘সিগন্যাল মলিকিউল’ ব্যবহার করে, যার ঘনত্ব তারা নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে পারে। যেমন আশেপাশে কোন প্রজাতি রয়েছে, একটি ‘সিগন্যাল মলিকিউল'-এর মাধ্যমে তারা সেটা টের পায়। অন্য একটির সাহায্যে সেটি বাকি ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বুঝতে পারে। ঘনত্ব যথেষ্ট বেশি হলে সব ব্যাকটিরিয়া একইসঙ্গে আলো জ্বালিয়ে দেয়। সূত্র: ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ

পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে করতে চেয়েছিলাম : ওবায়দুল কাদের

পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে করতে চেয়েছিলাম : ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশের মানুষ এখন বুক উঁচু করে চলতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের মানুষ এখন বুক উঁচু করে চলতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

অল্টারনেটিভ নয় ‘ট্রেডিশনাল মেডিসিন’ বলার দাবি ইউনানী চিকিৎসকদের

অল্টারনেটিভ নয় ‘ট্রেডিশনাল মেডিসিন’ বলার দাবি ইউনানী চিকিৎসকদের

নিউইয়র্কে ৪ জুলাই উদযাপনে মারাত্মক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

নিউইয়র্কে ৪ জুলাই উদযাপনে মারাত্মক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে গ্যাস লিক হয়ে গুরুতর অসুস্থ ৩৯ যাত্রী

মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে গ্যাস লিক হয়ে গুরুতর অসুস্থ ৩৯ যাত্রী

সোনাইমুড়ীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো ভাই-বোনের

সোনাইমুড়ীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো ভাই-বোনের

ফুলবাড়ীতে ট্রাক-ভটভটি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত দুই, আহত ৪

ফুলবাড়ীতে ট্রাক-ভটভটি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত দুই, আহত ৪

চৌদ্দগ্রামে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু

চৌদ্দগ্রামে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু

রাজা চার্লসের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিলেন ঋষি সুনক

রাজা চার্লসের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিলেন ঋষি সুনক

ব্রিটেনের নির্বাচনে ‘লাস্ট বয়’! রাজনীতির ময়দানে নেমে ধরাশায়ী এআই প্রার্থী

ব্রিটেনের নির্বাচনে ‘লাস্ট বয়’! রাজনীতির ময়দানে নেমে ধরাশায়ী এআই প্রার্থী

‘আরও ঘুমোতে চাই’, ডেমোক্র্যাট গভর্নরদের বৈঠকে আর্জি ‘ক্লান্ত’ বাইডেনের

‘আরও ঘুমোতে চাই’, ডেমোক্র্যাট গভর্নরদের বৈঠকে আর্জি ‘ক্লান্ত’ বাইডেনের

হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের বোঝাপড়ার ইঙ্গিত

হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের বোঝাপড়ার ইঙ্গিত

সবজির বাজার চড়া

সবজির বাজার চড়া

ভাঙ্গায় বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১০

ভাঙ্গায় বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১০

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আশুরা কবে, জানা যাবে শনিবার

আশুরা কবে, জানা যাবে শনিবার

রাজাপুরে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার

রাজাপুরে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার

নৌকা ডুবে মাদরাসাছাত্রী নিখোঁজ

নৌকা ডুবে মাদরাসাছাত্রী নিখোঁজ

যে কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে

যে কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে