বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১০ মে ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত গরমে জনজীবন অতিষ্ট। ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপর তাপমাত্রায় দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীন প্রকৃতি এখন চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতিও বেড়ে চলেছে। সারাদেশে অঞ্চল ভেদে দৈনিক গড়ে ৫ থেকে ১০ ঘন্টা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক সেক্টর হিসেবে গত ১৪ বছর ধরে ১১ দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে উৎপাদন সক্ষমতা ও সঞ্চালন ব্যবস্থার পেছনে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পরও বিদ্যুতে এমন দুর্গতি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে শতভাগ বিদ্যুৎ সক্ষমতাকে দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন হিসেবে উদযাপন করা হলেও বিদ্যুৎ নিয়ে সাধারণ মানুষের বিড়স্বনা মোটেও কমেনি। গত এক দশকে কয়েকগুণ বর্ধিত হারে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা সাধারণ গ্রাহকরা। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের চাহিদা পুরণে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না নিয়েও বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। দেশের বিদ্যুৎ খাতে অর্থনৈতিক লুঠপাটের এক আজব বাস্তবতা বিদ্যমান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট অন্য সব সেক্টর ও সামগ্রিক জনজীবনের উপর সরাসরি প্রভাব সৃষ্টি করছে।
গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। পরিবেশগত নিরাপত্তা, পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ ও বিরোধিতা উপেক্ষা করে সুন্দরবন এলাকায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। একই সময়ে পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হলেও এখন কয়লা সংকটের কারণে এ দু’টি বৃহদাকার বিদ্যুতকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, কয়লার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ২ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। কোনোমতে ধুঁকে ধুঁকে চলছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাচ্ছে না। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, তাদের কাছে মজুদ কয়লা দিয়ে চলতি মাস পর্যন্ত চালিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও ডলার সংকটের আশু সমাধান না হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রির্জাভ গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ অংকে নেমে আসার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ডলার সংকটের আশু সমাধান নিশ্চিত না হলে কয়লা ও ফার্নেস অয়েলে চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা নিশ্চিতভাবেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশের শিল্পোৎপাদনে, কৃষি ও জনজীবনে।ইতোমধ্যে তৈরী পোশাক খাতসহ রফতানিমুখী শিল্পখাতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং দেশে চলমান এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য চরম দুর্ভোগ ডেকে আনছে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎখাতে সরকারের ভুলনীতি, দায়মুক্তি ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লক্ষকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উৎপাদন সক্ষমতা কোনো কাজে আসছে না। এ মুহূর্তে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ইনস্টলেশন অব্যাবহৃত থাকছে। সরকার একদিকে শতভাগ বিদ্যুত সক্ষমতার সাফল্য উদযাপন করছে, অন্যদিকে জ্বালানি সক্ষমতার অভাবে সারাদেশে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। যেনতেন প্রকারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হলেও জ্বালানি খাতের দেশীয় উৎসগুলোর উন্নয়ন এবং জ্বালানি আমদানির অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সরকার। গ্যাস, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বহুমাত্রিক দুর্নীতি, অপচয় ও অস্বচ্ছতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলেও বছরে একাধিকবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ও লুটপাটের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। দেশে ক্রমবর্ধমান ডলার সংকটের নেপথ্যেও রয়েছে বড় দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অব্যাহত প্রবণতা। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবন দুর্বহ হয়ে পড়েছে। চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতির পেছনে জ্বালানি সরবরাহে ব্যর্থতা এবং সঞ্চালন ও পরিচালন ব্যবস্থাপনার দায় প্রায় সমান। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ৮মে তারিখে দেশের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৭ হাজার ১৩৯ মেগাওয়াট অব্যবহৃত থাকার পেছনে ৩ হাজার ৬৫৩ মেগাওয়াট ছিল জ্বালানি সংকটের কারণে বাকি ৩ হাজার ৪৮৬ মেগাওয়াট ছিল পরিচালনায় অব্যবস্থাপনার কারণে। অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডলার সংকট ও জ্বালানি সক্ষমতায় দেশীয় উৎসগুলোর উন্নয়নে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
২৪ নভেম্বরের ‘পিটিআই’র বিক্ষোভ নিয়ে বুশরা বিবির বার্তা ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
লাঞ্চের আগেই ৪ উইকেট নেই ভারতের
মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ
আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত
বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ
ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস
আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়