তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে
০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১০ এএম
রংপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের জন্যই নয়, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তার প্রশ্নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। আন্তর্জাতিক নদী আইনের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে অভিন্ন নদনদীর উপর ভারতের বাঁধ নির্মান ও একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে কৃষি, খাদ্য উৎপাদনসহ বড় ধরণের পরিবেশগত ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের অনীহা, অসহযোগিতার কারণে এবং দশকের পর দশক ধরে ঝুঁলিয়ে রাখায় তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ায় বিদ্যমান তিস্তা সেচ প্রকল্পটিও এখন অকেজো হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বেশ কয়েক বছর আগেই এ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হলেও চীনের অর্থায়ন প্রশ্নে ভারতের আপত্তির কারণে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। প্রকল্পের সামাজিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের প্রত্যাশার আলোকে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথাও শোনা গেছে। তবে রংপুরসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনগন চীনের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নকেই সমর্থন করছে। যেভাবেই হোক, তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
প্রায় এক দশক ধরে প্রস্তাবাধীন ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে রংপুরবাসির কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এক নতুন আশাবাদ জাগাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে রংপুরের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নানা রকম কর্মসূচিও পালন করেছে। ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদ এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৬ দফা দাবিতে মে মাসের শেষদিকে রংপুর বিভাগের ২৯টি পয়েন্টে জমায়েত হয়ে ‘স্তব্ধ কর্মসূচী’ পালন করে। ৫ মিনিটের জন্য সবকিছু বন্ধ রেখে হাজার হাজার মানুষ এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। তিস্তার ভাঙ্গন, শুকিয়ে যাওয়া তিস্তাপাড়ের কৃষকদের হাহাকার এবং শুষ্ক মওসুমে পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়া তিস্তা সেচ প্রকল্পের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের হাহাকার ফুটে উঠেছে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠে। ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, তিস্তা নদী খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙ্গন রোধে ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণসহ তারা চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিল। তবে দেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ণ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে চীনা অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় যথাশীঘ্র এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের মানুষ যথেষ্ট আশাবাদী। চীনা প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন কোম্পানি ‘পাওয়ার চায়না’ দীর্ঘদিন সরেজমিন সমীক্ষা চালিয়ে প্রকল্পের কাজ অনেকটাই এগিয়ে এনেছে বলে জানা যায়।
দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, পরিবেশগত ভারসাম্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার মত ইস্যুগুলোর সাথে নদীর প্রবাহ, নদী-ভাঙ্গনসহ নদীকেন্দ্রিক বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে যুক্ত। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি। ইতিমধ্যে সরকার শত বছর মেয়াদী ডেল্টা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিল। আপাতত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আমাদের জন্য বিশেষ জরুরী ইস্যু। দেশের সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিত ও দারিদ্র্য পীড়িত জেলাগুলোর বেশিরভাগই তিস্তা পাড়ে অবস্থিত। এ অঞ্চলের অন্তত ৬টি জেলার মানুষ মূলত কৃষি ও মৎসজীবী। তিস্তার উজানে গজলডোবা ড্যামের কারণে তিস্তার অধিকাংশ শাখানদী ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তার মূল প্রবাহ শুষ্ক মওসুমে পানিশুন্য হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের লাখ লাখ জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলেও নদী খনন করে প্রবাহ বৃদ্ধি, ওয়াটার রিজার্ভার নির্মান, ভাঙ্গন নিরোধী বাঁধ নির্মাণসহ দুই পাড়ে পরিকল্পিত নগরায়ন, পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মৎস্য ও কৃষিব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা তিস্কা পাড়ের কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন এবং লক্ষাধিক কোটি টাকার সম্পদ ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষার সম্ভাবনা রয়েছে এই প্রকল্পে। কয়েক দশক ধরে গঙ্গা ও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে প্রত্যাশার কথা শোনা গেলেও ভারতের আপত্তি এবং সরকার সদিচ্ছার অভাবে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, এই সরকারের মেয়াদ থাকতেই পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেশের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাইলফল হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নেত্রকোণায় আ.লীগ নেতা লক্ষীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান তুহিন গ্রেফতার
শামীম ওসমান ও নানক পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা
চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদী থেকে বৃদ্ধের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব ১৮ ই জানুয়ারি শুরু
ভূয়া আসামি দাঁড় করিয়ে জামিনের ঘটনায় ৪ জনের নামে মামলার নির্দেশ
শরীয়তপুরে ওরশ পালনকে কেন্দ্র করে জেলা হেফাজতে ইসলাম ও আয়োজক - ভক্তবৃন্দের মধ্যে উত্তেজনা
কুমিল্লায় ভিন্ন ধর্মের দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ৩৯ বছর
সিএনজি চালিত অটো রিক্সাভর্তী ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার ৪
বিএমআই নয়, স্থূলতার জন্য চাই নতুন মানদণ্ড ,প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের
শিল্পকলার জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল 'সাধুমেলা'
মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের কাজে যোগ দিতে না দেওয়া ১২০ শ্রমিকদের চাকরী বহাল
হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশ
লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে
জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে মৌখিক হস্তান্তর,দুটি হল পরিদর্শন রবিবার
কোটচাঁদপুরে পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার আসামি কটাকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা
শুল্ক বৃদ্ধি প্রমাণ করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীন : বাংলাদেশ ন্যাপ
কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
কালীগঞ্জের পল্লীতে টমেটো, বেগুন ও সবজিসহ বিভিন্ন গাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা
অধিক গাড়িতে সারচার্জ খড়গ
সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ