ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রাসুল (সা.) মানব জাতির রহমত স্বরূপ

Daily Inqilab সৈয়দ মুহাম্মদ আবু ছালেহ্

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

হযরত মুহম্মদ (সা.) এর বেলাদত (জন্ম) মানব জাতির মুক্তির বড় উপলক্ষ। তিনি বিশ্ব মানবতার মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে দুনিয়াতে এসেছিলেন। তাঁর আবির্ভাব মানব জাতির জন্য আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ অনুগ্রহ বা নেয়ামত প্রাপ্তির পর খুশি ও আনন্দ উদযাপনের জন্য মানুষের প্রতি তাগাদা রয়েছে। এ খুশি বা আনন্দ বিশেষ গোষ্ঠী দল বা দেশের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, এ খুশি সমগ্র মানব জাতির জন্য।
আল্লাহ ঘোষণা করেছেন: ‘আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবী (সা.) কে দু’জাহানের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন’। আল্লাহর নবীকে দুনিয়ায় প্রেরণ মানুষের প্রতি স্রষ্টার বড় করুণার নিদর্শন। যারা এতবড় অনুগ্রহ প্রাপ্তির পরও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে না তারা কেয়ামত পর্যন্ত অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি বহন করবে।
আজকের আধুনিক যুগ সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী মানুষের বিশেষ বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের জন্ম-মৃত্যু দিবস খুব ঘটা করে পালন করে থাকেন। অথচ যাঁর অবদান মানব জাতির সকল দিকেই রয়েছে, যিনি মানুষের নৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দিয়ে গেছেন তাঁর জন্মকে উপলক্ষ করে মানুষকে কতটুকু খুশি উদযাপন করা উচিত? এ ব্যাপারে আল্লাহ মানব জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে এরশাদ করেন: ‘মুমিনদের কাছে রাসুল প্রেরণ করে আল্লাহ তায়ালা বড়ই অনুগ্রহ ও এহসান করেছেন।’ যেই দিনে মানব জাতি এমন নেয়ামত ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েছে- সেই দিনে ঈদ উদযাপনের কথা। পবিত্র কোরানে আল্লাহ আরো বলেছেন: ‘হে বনী ইসরাইল তোমরা স্মরণ করো, যে সব নেয়ামত আমি তোমাদেরকে দান করেছি।’ আল্লাহ বনী ইসরাইলের প্রতি দেয় নেয়ামতকে স্মরণ করতে বলেছেন। অর্থাৎ নেয়ামত প্রাপ্তির জন্য খুশি হতে বলেছেন, তুষ্ঠ হতে বলেছেন। ঠিক একইভাবে বিশ্বমানবতার জন্য হযরতের আবির্ভাব আল্লাহর অপরিসীম দান বা রহমত। অবশ্যই এ নেয়ামতকে উপলক্ষ করে মানুষকে খুশি উদযাপন করতে হবে। এ নেয়ামত প্রাপ্তির যথাযথ কদর বা শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
হযরত মুহম্মদ (সা.) আজ থেকে চৌদ্দশ’ বছর আগে পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে, বহুত্ববাদের বিরেুদ্ধে একত্ববাদের কথা বলে মানুষের মধ্যে অবাঞ্চিত বিশ্বাসের যে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, আজো এ একত্ববাদকে চ্যালেঞ্জ দেবার ক্ষমতা কারো নেই। অথচ, আজো অনেক মানুষ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বহু দেব-দেবীর পূজা অর্চনায় লিপ্ত রয়েছে। তারা নিজেরাও জানে না যে, এ দেব-দেবীর পক্ষে তাদের সকল জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া সম্ভব নয়। এমন কি তাদের একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া পূজিত দেব-দেবীর নড়া-চড়া করবারও কোনো ক্ষমতা নেই। এর পরও তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের প্রথা আঁকড়ে ধরে আছে। অথচ, আল্লাহর নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) অস্থায়ী এ নশ্বর জগতের পরে অনন্তকালীন পরকালীন মুক্তির জন্য মানুষকে অকাট্য দলিলসহ একত্ববাদের কথা বলছেন। যারা সেদিন আল্লাহর নবীর কথাকে আস্থায় এনে সকল যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে উঠে একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়েছে তারা আল্লাহর পরম অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েছে এবং বিশ্বাসীদের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের দরজা খোলা থাকবে।
হযরত মুহম্মদ (সা.) দুনিয়াতে আবির্ভাবের পর তাঁর দাওয়াতের বিশেষত্ব হচ্ছে, তিনি গোত্র বর্ণ, বংশ, ভাষা ও অঞ্চলের সীমাবদ্ধ সকল ব্যবধানকে উপেক্ষা করে মানুষকে মানুষ হিসেবেই আহবান করেছেন। তিনি এমন কিছু মূলনীতি পেশ করেন, যা স্থান-কাল পাত্রের ঊর্ধ্বে সকল মানুষের জন্যই কল্যাণকর। বর্ণের উৎপীড়ন, বংশের বড়াই, জাত-পাতের সকল প্রশ্নের কবর রচনা করে মানুষ হিসেবে মানুষের মানবিক সম্পর্ককে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে প্রিয় নবী (সা.) মানবতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেন।
মানুষের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মানুষ সমাজে বসবাস করে বলেই মানুষ সামাজিক জীব। যে আল্লাহর সম্মুখে জবাব দেবার অনুভূতি রাখে সে নিজের জীবনকে সামাজিক ও ব্যক্তিগত বলে খণ্ড খণ্ড করতে পারে না। তার মধ্যেও বিশ্বাস থাকতে হবে যে, সে যদি বেঈমানী করে তাহলে তার জীবন জানোয়ারের চেয়েও খারাপ হবে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আমি মানুষকে সর্বোত্তমভাবে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাকে নিম্নতম পর্যায়ে ফেলে দিয়েছি।’ এভাবেই প্রিয় নবী (সা.) মানুষের জন্য চিরস্থায়ী চারিত্রিক গুণ সম্পন্ন বিধানই কেবল নিয়ে আসেননি, বরং মানুষের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র এবং আচার আচরণের কালজয়ী ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন।
প্রিয় নবী (সা.) দুনিয়াতে আসার পর মানুষকে নানানভাবে গুণান্বিত করে উৎকৃষ্ট মানুষে পরিণত করেছেন। তাঁর আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীতে ঐ সমস্ত মানুষকে বন্দি করে মানবতাকে শৃঙ্খলিত করে রেখেছিল। সে বন্দিদশা থেকে মানবতাকে মুক্ত করে দুনিয়াকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলেছিলেন প্রিয় নবী (সা.)। বর্তমান কম্পিউটার যুগে আধুনিক বিশ্বের চালচিত্র দেখে একথা স্পষ্ট করে বলা যায় যে আমরা পুনরায় ‘আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগে ফিরে যাচ্ছি’। কেউ লাইসেন্স নিয়ে মাস্তানী করছে, আর কেউ বিনা লাইসেন্স সন্ত্রাস করছে। কেউ লাইসেন্স নিয়ে দুর্নীতি করছে, কেউ বিনা লাইসেন্সে আইন বিরুদ্ধ কাজ করছে। এ হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব সমাজের করুণ চিত্র। নীতি হচ্ছে সমাজের ব্লাড বা রক্ত। রক্ত ছাড়া যেমন মানুষ চলতে পারে না, তেমনি নীতি ছাড়া সমাজ চলতে পারে না। আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সা.) যে নীতি প্রতিষ্ঠা করে সমাজে ভ্রাতৃত্বের স্পন্দন সৃষ্টি করেছিলেন। সে নীতি আজ মানুষের স্পর্শ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। যার ফলে সমাজ হয়েছে কক্ষচ্যুত। ধীরে ধীরে সমাজের সকল সামাজিক বন্ধনই শিথিল হয়ে গেছে। আজ মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে, সমাজ সমাজের বিরুদ্ধে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আজ নতুন করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে সর্বোতভাবে। মানুষ নিজের মস্তিষ্ক থেকে নতুন নতুন মন্ত্র আবিষ্কার করে বিজ্ঞানের যুগে মানবতাকে ধ্বংস করে চলেছে। অথচ, এখনো বাঁচার যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারেনি। বরং কারা কত দ্রুত কত বেশি মানুুষ হত্যা করে ক্ষমতার প্রদর্শনী করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপী।
লেখক: অধ্যক্ষ, ওয়াছিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

ধীর গতিতে নাৎসি-স্টাইলের ফ্যাসিবাদে এগুচ্ছে ভারত

ধীর গতিতে নাৎসি-স্টাইলের ফ্যাসিবাদে এগুচ্ছে ভারত

আতঙ্ক কাটিয়ে আবারও নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প

আতঙ্ক কাটিয়ে আবারও নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প

কোরআনে বর্ণিত স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

কোরআনে বর্ণিত স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

শোক পালন বা শোক দিবস : প্রেক্ষিত ইসলামের নির্দেশনা-১

শোক পালন বা শোক দিবস : প্রেক্ষিত ইসলামের নির্দেশনা-১