ঢাকা   শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭ কার্তিক ১৪৩১

সেন্টমার্টিনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম

দেশের সমুদ্রসীমা ও ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাময় পরিক্ষেত্রে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্যতম আলোচ্য বিষয়। প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন নিয়ে বিগত সরকার রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি করলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ, দূষণ প্রতিরোধ ও উন্নয়নে তেমন কিছুই করেনি। অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেন্ট মার্টিনের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে সরকার। গত ২২ অক্টোবর ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও নিরাপত্তার নাজুক অবস্থার চিত্র বেরিয়ে আসে। সে প্রেক্ষাপটে দ্বীপটিতে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নভেম্বরে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন বন্ধ রাখাসহ আগামী চারমাস পর্যটক সংখ্যা দিনে দুই হাজারে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেন্টমার্টিন যেতে পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি বছরের পর বছর ধরে ভয়াবহ ভাঙ্গন ও দূষণের শিকার হলেও সে দিকে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। বিগত সরকার শুধু সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে অহেতুক রাজনৈতিক প্রপাগান্ডায় লিপ্ত ছিল। সেন্ট মার্টিন ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গোপন সমঝোতার দাবি করেছিলেন শেখ হাসিনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিল।

এক রিপোর্টে জানা যায়, গত কয়েক বছরে সামুদ্রিক ভাঙ্গনের কবলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অর্ধেকের বেশি সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির সাথে সাথে সামুদ্রিক ঢেউয়ের অবিরাম আঘাতের মুখে সেন্টমার্টিন এখন প্রবাল পাথরের উপর দাড়িয়ে থাকলেও চারপাশের ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলে দ্বীপটির অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। বিগত সরকার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পর্যটন থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও দ্বীপের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। অথচ দ্বীপটি নিয়ে মনগড়া কনস্পিরেসি থিউরি বানিয়ে রাজনৈতিক বয়ান হাজির করেছে। সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ, রাত্রিযাপন ও এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধের অর্ন্তবর্তী সরকারের উদ্যোগ এই প্রেক্ষাপটে খুবই ইতিবাচক । অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা প্রবাল দ্বীপের ভাঙ্গন রোধে কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধুমাত্র পর্যটনের আয় বৃদ্ধি করতে সেন্ট মার্টিনে অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও দালানকোঠা নির্মানের কারণে ভাঙ্গনের সাথে সাথে অতিরিক্ত চাপে দ্বীপটি নিচের দিকে দেবে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অতীতের অবহেলা ও ভুলের কারণে বর্তমান দূষণ ও ভাঙ্গন চরম আকার ধারণ করেছে। এ বিষয়ে আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা রক্ষিত করা হয়নি।

যেখানে বঙ্গোপসাগরে নতুন জেগে ওঠা ভ’মি দেশের জন্য নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে, সেখানে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের ধ্বংসের চিত্র বড় দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কার বিষয়। চলমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ও সমুদ্র সম্পদ নিয়ে বিপুল সম্ভাবনার সাথে সাথে বিরূপ আশঙ্কারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সাগরে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সেন্ট মার্টিন নিয়ে মিয়ানমারের শ্যেনদৃষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক আগেই সরকারিভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে গণ্য করা হলেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনীহা ও দায়িত্বহীনতার কারণে ত্রিমুখী সংকটের সম্মুখীন হয়েছে সেন্ট মার্টিন। দ্বীপটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের কারণেই এ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আলোচনা টেনে এনেছিলেন। এসব কারণে সেন্ট মার্টিন নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহ ও কৌতুহল অনেক বেশি। অর্ন্তবর্তী সরকার এবং আগামি নির্বাচিত সরকার সেন্ট মার্টিনের ভাঙ্গন রোধ ও পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা। কোনো গুজব ও অপপ্রচার কাম্য নয়। সেন্ট মার্টিনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মানুষ জানতে চায়। দেশের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ভাঙ্গন রোধ, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তার প্রয়োজনে টাস্কফোর্স ও বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করার উদ্যোগ নিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যটন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেন্ট মার্টিন সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ও অস্বচ্ছতা দূর করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে সমুদ্র সম্পদ বা ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অমিত শাহকে অভিযুক্ত করলেন কানাডার মন্ত্রী, কোনপথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক?

অমিত শাহকে অভিযুক্ত করলেন কানাডার মন্ত্রী, কোনপথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক?

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫০ জন আক্রান্ত

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫০ জন আক্রান্ত

উত্তরায় ডেঙ্গু সচেতনতা লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি নেতা মোস্তফা জামান

উত্তরায় ডেঙ্গু সচেতনতা লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি নেতা মোস্তফা জামান

ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে সামরিক বাজেট দ্বিগুণ বাড়াচ্ছে ইরান

ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে সামরিক বাজেট দ্বিগুণ বাড়াচ্ছে ইরান

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে প্রথম শহীদ জিলুর মৃত্যু বার্ষিকীতে সিলেট যুবদলের দোয়া মাহফিল

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে প্রথম শহীদ জিলুর মৃত্যু বার্ষিকীতে সিলেট যুবদলের দোয়া মাহফিল

বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে ১৯ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদন্ড

বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে ১৯ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদন্ড

ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধবিরতি চুক্তি শিগগিরই হচ্ছে : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী

ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধবিরতি চুক্তি শিগগিরই হচ্ছে : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী

সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মুজেজায় সিলেটে (এক লাফে) অধ্যক্ষ হয়ে যান হাকিম মুহিব বুল্লাহ

সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মুজেজায় সিলেটে (এক লাফে) অধ্যক্ষ হয়ে যান হাকিম মুহিব বুল্লাহ

আদর্শিক ছাত্র জনতার ভূমিকা রাখতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

আদর্শিক ছাত্র জনতার ভূমিকা রাখতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীরা পতিত সরকারের প্রেতাত্মা- মাওলানা ইউনুছ আহমাদ

গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীরা পতিত সরকারের প্রেতাত্মা- মাওলানা ইউনুছ আহমাদ

জকিগঞ্জকে স্বধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষণার দাবী

জকিগঞ্জকে স্বধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষণার দাবী

ফ্যাসিবাদ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশটাকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছিল -আমতলীতে ভিপি নুরুল হক নুর

ফ্যাসিবাদ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশটাকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছিল -আমতলীতে ভিপি নুরুল হক নুর

সায়মা ওয়াজেদের সাথে কাজ করতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার

সায়মা ওয়াজেদের সাথে কাজ করতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার

রেঞ্জ কর্মকর্তার (এসিএফ) বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে শরণখোলায় সুন্দরবনের জেলে মৎস্যজীবিদের মানববন্ধন

রেঞ্জ কর্মকর্তার (এসিএফ) বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে শরণখোলায় সুন্দরবনের জেলে মৎস্যজীবিদের মানববন্ধন

তূণমূল নেতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এসেছে দেশের স্বাধীনতা : সিলেট মহানগর বিএনপি সেক্রেটারী ইমদাদ চৌধুরী

তূণমূল নেতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এসেছে দেশের স্বাধীনতা : সিলেট মহানগর বিএনপি সেক্রেটারী ইমদাদ চৌধুরী

মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল বাকৃবির রেলস্টেশন

মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল বাকৃবির রেলস্টেশন

মানব কল্যাণে চাই সকলের একত্রিত প্রচেষ্টা

মানব কল্যাণে চাই সকলের একত্রিত প্রচেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব দ্রুত সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব দ্রুত সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

অদ্ভুত লাইবেরিয়া

অদ্ভুত লাইবেরিয়া