ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার লক্ষ্য ও ভূমিকা এখন জাতির সামনে খোলাসা হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার পরিবার শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করেননি, তিনি আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলটিকে একটি মাফিয়া গ্যাংয়ে পরিনত করেছিলেন। মূলত: সেই পঞ্চাশের দশকে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে যে নতুন আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন থেকেই আওয়ামী লীগ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ডা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানের মসনদ দখল কিংবা পাকিস্তান ভাঙ্গার ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে কাজ করেছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে এসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের পতনের পর ভারতীয় এজেন্ট হিসেবে শেখ হাসিনার ভ’মিকা জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। দিল্লিতে বসে বাংলাদেশবিরোধী গুরুতর প্রপাগান্ডায় লিপ্ত শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির পালিত গণমাধ্যম কর্মীদের নানা বক্তব্য ও প্রচারনার ধরণ থেকে তাদের সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণের দ্বিধা সংশয় কেটে গেছে। এই প্রজন্ম নিজের উপলব্ধিতেই বুজে গেছে, ভারতীয়রা আমাদের সাথে শত্রুর মত আচরণ করছে। ১৬ ডিসেম্বরে এবারের বিজয় দিবসে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের কথা অগ্রাহ্য করে একাত্তরের বিজয়কে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় বলে উল্লেখ করে যে বাণী দিয়েছিল তাতে আমাদের নতুন করে বিষ্মিত ও বা ব্যথিত হওয়ার কিছু নেই। তারা কখনোই স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনি। আন্তর্জাতিক সব কনভেনশনে বিশ্বসম্প্রদায়ের সাথে বাংলাদেশের গৌরবজনক অংশগ্রহণ ও ভ’মিকা, সারাবিশ্বে বাংলাদেশের বিশাল ডায়াসপোরা এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অভাবনীয় সম্ভাবনাকে ক্যামোফ্লেজ করে এর সব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শক্তি শুষে নিয়ে করদ রাজ্যে পরিনত করতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও গণভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় স্বার্থের ষোলকলা পূর্ণ করা হয়েছিল। ‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব’ গ্রন্থে ভারতীয় লেখক কালিদাস বৈদ্য সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি এবং আরো কতিপয় গোয়েন্দা এজেন্ট কিভাবে শেখ মুজিবকে দিয়ে ভারতীয় স্বার্থ হাসিলের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতন্ত্রের অঙ্গিকার থেকে বিচ্যুত হয়ে লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করার অপরাধে শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারদের হাতে নিহত হওয়ার পর বিদেশে থাকা শেখ হাসিনাকে ভারত পরবর্তী টার্গেট হিসেবে গ্রহণ করে দিল্লিতে রেখে তাকে বিশেষভাবে মগজধোলাইসহ রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ভারতের বিশেষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা অজিত দোভাল সেই সত্তরের দশক থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার। এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঐতিহ্যকে ধসিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ভারতের বা বিজেপি’র রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। এ জন্য একাত্তরের ভুল ন্যারেটিভ, জাতীয় ঐক্যের বদলে অনৈক্য, বিভেদ-সংঘাত ও নির্মূলের রাজনৈতিক বয়ান চালু রাখার কোনো বিকল্প ছিল না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ,সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার হরণ, হাজার হাজার মানুষকে গুম-খুন, লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার হুলিয়া জারির সাথে সাথে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এ যুগে নির্বতনমূলক আইসিটি আইন জারি করে সব পথ, সব মুখ বন্ধ করে মেরুদন্ড হিম করা একটি ভয়ের সংস্কৃতি চালু করে শেখ হাসিনার ক্ষমতা, ভারতীয় আধিপত্য ও লুন্ঠন টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার পিতা যেমন আজীবন ক্ষমতায় থাকার আইনগত বন্দোবস্ত পাকা করেও টিকে থাকতে পারেননি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে প্রথমেই সম্ভাব্য সব প্রতিরোধ ভেঙে দেয়ার ক’টকৌশল গ্রহণ করা হয়। ভারতীয়রা ভালো করেই জানতো, স্বাধীনতা-সার্বভৈৗমত্ব ও আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের প্রশ্নে এ দেশের দেশপ্রেমিক-ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনগোষ্ঠির ঐক্য এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গঠিত সামরিক বাহিনী আপসহীন। ইন্দো-মার্কিন সমঝোতায় সাজানো নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর দেড় মাসের মাথায় পিলখানায় জাতির শ্রেষ্ঠ সৈনিকদের হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তার ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ধ্বংসযাত্রার সূচনা করেছিল। এরপর দেশের তৌহিদী জনতার সম্ভাব্য প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেররিজম প্রকল্পের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে জঙ্গি দমনের অর্ক্রেেস্টড ড্রামা শুরু হয়। শেখ মুজিবের ঘোষিত মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে সামনে এনে জামায়াত-বিএনপি নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সাথে সাথে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের যে কাউকে, যখন তখন হত্যা করে মানুষের মধ্যে ভয় ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে ঐব্যবদ্ধ ও সাংগঠনিক প্রতিরোধ থেকে নিবৃত্ত রাখাই ছিল মূল লক্ষ্য। ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের হত্যা করে, রাজনৈতিক কার্যালয়ে তালা দিয়ে যে কাউক গুম করে, জেলে ভরে, হুলিয়া দিয়ে বিপর্যস্ত করে তোলার পর তৌহিদী জনতার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক রাজনৈতিক তৎপরতাকে স্তব্ধ করে দিতে বাতি নিবিয়ে মধ্যরাতে শাপলা চত্বরে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে গুলি চালিয়ে শতশত মানুষকে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই, এলিট ফোর্স র‌্যাব কে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার নিষ্ঠুর মিশনে নামিয়ে দেয়ার এমন ধারাবাহিক তৎপরতা সাম্প্রতিক বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতকের মাঝামাঝি সময়ে রোমের সেনাপতি জুলিয়াস সিজার রিপাবলিকের ক্ষমতা দখল ও বিস্তার করে সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রোমান জাতিকে বিভক্ত করে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেন। সিজার আততায়ীর ছুরিকাঘাতে নিহত হলে গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়। সিজারের উত্তরসূরিরা সিজারের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই স্বৈরতান্ত্রিক সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ‘ডিভাইড অ্যান্ড কনকোয়্যার’ প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছিল জুলিয়াস সিজারের রাজনৈতিক কৌশল থেকে। আধুনিক ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক সা¤্রাজ্যবাদের মূল নীতিই ছিল কোনো দেশ ও জাতিকে দখল ও নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সে দেশের জনগোষ্ঠিকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বিভক্ত করা। উপমহাদেশে বৃটিশদের উপনিবেশ স্থাপন এবং প্রায় দু’শ বছর ধরে শাসন করার প্রধান হাতিয়ার ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে পরস্পরের মধ্যে অবিশ্বাস, অনাস্থা ও হানাহানিতে লিপ্ত রেখে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। বৃটিশদের সেই বিভাজন-বৈরিতার বিষবৃক্ষের ফল এখনো ভারতীয় উপমহাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। মুসলমান সুলতান ও মুঘলরা শত শত বছরে তিলে তিলে বিশাল মুঘল সা¤্রাজ্য গড়ে তোলার সাথে সাথে একটি বৃহত্তর হিন্দুস্তানি জাতি গঠন করে শত শত বছর ধরে তা শাসন করতে সক্ষম হলেও বৃটিশরা ঐক্যের বদলে বিভাজন নীতিকেই বেছে নিয়েছিল। ইতিহাসের মিথ্যা বয়ান সৃষ্টি করে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা সৃষ্টি, মসজিদের নিচে মন্দিরের অস্তিত্ব ইত্যাদি ইস্যুগুলো ইংরেজদের সৃষ্টি। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর বাবরি মসজিদের নিচে রাম মন্দিরের অস্তিত্বের কথা প্রচার শুরু করেছিল ইংরেজরা। অথচ ১৫২৮ সালে বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর তুলসি দাস রাম চরিত মানস উপাখ্যান লিখেছিলেন। এর মধ্য দিয়েই সাধারণ ভারতীয়রা হিন্দু অবতার রামের বিষয়ে প্রথম জানতে পারে। রামমন্দির ভেঙ্গে যদি বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হতো, তুলসি দাসের রামচরিত মানস গ্রন্থে নিশ্চিতভাবেই তার উল্লেখ কিংবা ইঙ্গিত থাকতো। বৃটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার দু’ বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদে রামমন্দির বির্তক শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত হিন্দুত্ববাদিরা ৫শ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এখন ভারতের বিভিন্ন স্থানে পুরনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদ ও মুসলমানদের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করে এসব মন্দিরের নিচে মন্দির থাকার গুজব রটিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি বাস্তব কোনো অজুহাত ছাড়াই শুধুমাত্র মুসলমান ঐতিহ্যের ধারক হওয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্য তাজমহলকে পর্যন্ত ওরা গুড়িয়ে দিতে চায়। হিন্দুত্ববাদ মানে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের একচ্ছত্র সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করা। এ কারণেই হায়দারাবাদ বা কাশ্মিরের মত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের স্বাধীনতা বা স্বায়ত্বশাসন তারা মেনে নিতে পারেনা, একইভাবে বৃটিশদের মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের স্বাধীনতা মেনে নেয়ার পরও আজাদ কাশ্মির দখলসহ পাকিস্তান ভেঙ্গে দিয়ে দখল করার নানা ক’টকৌশলে লিপ্ত রয়েছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে দিয়ে বাংলাদেশের উপর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সফ্ট পাওয়ার এক্সপেরিমেন্ট এবং আগ্রাসনের চরম মাশুল গুনছে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ।

মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অমানবিকতার গভীর ক্ষত দেখেছেন, নিজেও এর নির্মম শিকার হয়েছেন। ভারতে তিনি হিন্দুদেরকে অহিংসার বাণী শুনিয়ে হিন্দু-মুসলমানের সহাবস্থানের প্রত্যাশিত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা দাঙ্গার উন্মত্ততায় মেতে উঠেছিল। ফলে ভারত ভাগ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। এ কারনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিনিধি নাথুরাম গডসে গান্ধীকে হত্যা করেছিল। গান্ধী হত্যার দায়ে হিন্দু মহাসভার কর্মী নাথুরাম গডসে আর তার সহযোগী নারায়ন আপ্তেকে ১৯৪৯ সালের ১৫ নভেম্বর আদালত ফাঁসি দিয়েছিল। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে গডসে তার অন্তিম ইচ্ছায় নিজের দেহাবশেষের একটি অংশ রেখে দিতে বলেছিল, গডসের পরিবার ও ভক্তরা প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর তার সেই অন্তিম ইচ্ছার বাক্যগুলো উপস্থিত সবাইকে পড়ে শোনায়। সেখানে লেখা আছে, ‘শরীরের কিছুটা অংশ রেখে দিও আর যখন সিন্ধু নদ আবারও স্বাধীন ভারতে অন্তর্ভুক্ত হবে আর অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন আমাকে সিন্ধু নদে বিসর্জন দিও। এই কাজে দুই-চার প্রজন্ম লাগলেও সমস্যা নেই।’ নাথুরাম গডসের অন্তিম ইচ্ছা হিন্দুত্ববাদীদের রাজনৈতিক এজেন্ডারই অংশ। তারা অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিবেশিদের উপর আগ্রাসি আধিপত্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছে। তাদের কারণে উপমহাদেশে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না। বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার আয়োজন ও পরিকল্পনা আরো প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। তারা তাদের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে মিথলজিক্যাল অখন্ড ভারতের মানচিত্র স্থাপন করেছে। মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়রে ইতিমধ্যেই নাথুরাম গডসের মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেছে হিন্দু মহাসভা। তারা সেখানে তার মূর্তি স্থাপন করে পূজা অর্চনা করছে। অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠিত হলে গডসের দেহাবশেষ সিন্ধু নদে বিসর্জন দেয়া হবে। এই প্রত্যাশায় দিন গুনছে ভারতের কোটি কোটি হিন্দুত্ববাদী। যারা পাকিস্তানকেই মেনে নিতে পারেনি, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিবে কিভাবে? পাকিস্তানে শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার মত গণশত্রু নেতা না থাকলেও বাংলাদেশে তাদের প্রেতাত্মারা ছড়িয়ে আছে। ভারত ভাগ করে মুসলমানদের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের অপরাধে(!) উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। আর হিন্দুত্ববাদী অখ- ভারতের তাবেদারি,গণবিরোধী ভ’মিকা ও গুম-খুন, গণহত্যা ও রাষ্ট্র ধ্বংসের দায়ে বাংলাদেশের বীর ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। শেখ মুজিবের হত্যাকারিরা ১৯৭৫ সালে যেমন দেশের মানুষের কাছে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিল, ৫০ বছর পেরিয়ে এসে ২০২৫ সালেও তাদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রয়েছে। নাথুরাম গডসে শিকার করেছিল, গান্ধীকে গুলি করার আগে দেশের জন্য তার অবদানের কথা স্মরণ করে তাকে প্রণাম জানিয়েছিল। তার ভাষ্য অনুসারে, সে যত বড় নেতাই হোক, দেশভাগের মত পাপের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমাদের বাস্তবতায় আমরাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারি, লাখো শহীদের রক্তের সাথে যে বা যারাই বেইমানি করবে, জাতিকে বিভক্ত করে রাষ্ট্রের সম্পদ লুন্ঠন করবে, দেশের জনগণ ও ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না। সে সব গণ্যশত্রু দুর্বৃত্তদের বিচারের সম্মুখীন করার মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐক্য সুসংহত ও সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে নবযাত্রা সূচিত হতে পারে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ সময়ের দাবি
ফুলতলী ছাহেব কিবলা মানুষকে জীবনভর আল্লাহর পথে ডেকেছেন
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের

শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের