গাজায় ইহুদি বর্বরতা
২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০ এএম

যুদ্ধবিরতির দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা উপেক্ষা করে গাজায় নজিরবিহীন বর্বরতা চালাচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। পনের মাসের বিরতিহীন বোমা হামলায় গাজাকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পুরো উপত্যকার প্রায় সব অধিবাসীকে বাস্তুচ্যুত, ৪৯ হাজারের বেশি হত্যা ও লক্ষাধিক আহত করার পরও ইহুদি রাষ্ট্রের বর্বর বাহিনী একজন জিম্মিকেও হামাসের কাছ থেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়েছিল। চুক্তি মোতাবেক প্রথম স্তরের যুদ্ধবিরতিতে অন্তত ৩৩ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু উগ্রবাদী ইহুদিরা এই যুদ্ধ বিরতিকে হামাসের কাছে ইসরাইলের কৌশলগত পরাজয় হিসেবে দেখেছে। তারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা ও শিশুহত্যা অব্যাহত রাখার পক্ষেই সাফাই গাইছিল। এর আগে যুদ্ধের শুরুতেই কেউ কেউ গাজায় পারমাণবিক বোমা ফেলে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়ার দাবিও করেছিল। ধারণা করা যায়, জিম্মিদের ফিরিয়ে নিতে ইসরাইলের আভ্যন্তরীণ চাপ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। প্রতিদিনের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকা- বন্ধ করে বন্দি বিনিময় ও শান্তির উদ্যোগে গোটা দুনিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু জায়নবাদী বর্বর ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনি ও আরব প্রতিবেশীদের শান্তিতে বাস করতে দিতে নারাজ। ঠুনকো অজুহাত তুলে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে গিয়ে প্রথমে গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে সেখানকার বাস্তুহীন, বিপর্যস্ত অধিবাসীদের মানবিক বির্পযয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে তাদের উপর টার্গেট কিলিং শুরু করেছে। গত মঙ্গল ও বুধবার ৪৮ ঘণ্টার বিমান হামলায় গাজার আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রায় ১ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।
অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল সাড়ে ৭ দশক ধরে ফিলিস্তিনি ও আরব প্রতিবেশীদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। আর এসব আগ্রাসন, ভূমিদখল এবং যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাবেক ঔপনিবেশিক ও পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো সরাসরি যুক্ত। গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে গাজা দখল করে সেখানে রিভেরা বা প্রমোদ নগরী নির্মাণ ও মার্কিন মালিকানা প্রতিষ্ঠার খায়েশ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর এই উদ্ভট অমানবিক প্রস্তাব সর্বমহলে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর মিশরের প্রস্তাবে গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের জন্য একটি ৫৩ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা নিয়ে আরব বিশ্ব সম্মত হয়। যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নিতে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় আলোচনা এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ইসরাইল গাজায় নতুন করে ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করে। হামাস নির্মূল ও গাজাকে ইসরাইলের জন্য নিরাপদ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা এখানকার নারী ও শিশুদের নির্বিচার গণহত্যায় মেতে উঠেছে। পনেরো মাসের যুদ্ধে বিদ্ধস্ত জনপদে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন একটি অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠির উপর এমন নির্মম বর্বরতা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইহুদিদের এই বর্বরতার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদত স্পষ্ট। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মদতে যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু গণহত্যা চালিয়ে গাজাকে জনশূন্য করে তা দখল করে নিতে চাইছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বর্বরতার নিরব দর্শকে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ, ওআইসি, আরবলীগসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের নিরবতা-নিষ্ক্রিয়তায় বর্বররা শিশুহত্যায় মেতে উঠেছে। এটা যেন সেই ফেরাউন শাসনামল যখন বর্বর শাসক নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্মূল করার লক্ষ্যে রাজ্যের সব শিশুপুত্র হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। এ যেন সেই আরবের অন্ধকার যুগ, যখন মেয়ে শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো। বলা বাহুল্য, ইহুদিরা ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের হত্যা করে ভবিষ্যতের প্রতিরোধ শক্তিকে নির্মূল করতে চায়।
পনের মাস ধরে গাজায় বিমান হামলা করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পাশাপাশি ব্যাপক আকারে স্থল অভিযান চালিয়েও হামাসের প্রতিরোধ শক্তি ও টানেল নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা যায়নি। একজন জিম্মিকেও মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর হামাসের সাথে যুদ্ধ বিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। পরাজয়ের এই গ্লানী থেকেই ট্রাম্প-নেতানিয়াহু উন্মাদের মতো গাজার শিশু হত্যায় মেতে উঠেছে। আইডিএফ’র বর্বরতায় সারাবিশ্ব স্তম্ভিত। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার ইহুদিও ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে। গাজায় নতুন করে ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তীব্র প্রতিবাদ জানালেও দেশের মূল ধারার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নিরবতা বিস্ময়কর। তবে অন্যান্য ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সোচ্চার দেখা গেছে। হামাস, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ হুতিসহ ইরান সমর্থিত প্রতিরোধ ফ্রন্টগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সম্মিলিত সামরিক, অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিলে ইসরাইলের পক্ষে গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। দুই দিনে সহস্ত্রাধিক মানুষ হত্যার পর নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামলা কেবল শুরু’। তারা গাজার ধ্বংসস্তূপকে কবরস্থানে পরিণত করতে চায়। এটা এভাবে চলতে দেয়া যায় না। মানবতাবিরোধী ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শান্তিকামী বিশ্বের সম্মিলিত সামরিক-অর্থনৈতিক, বিচারিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর জীবন রক্ষায় বিশ্বসম্প্রদায়কে এক্ষুণি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে এ সংকটের সমাধান করতে হবে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে গাজায় মানবিক সহায়তা নির্বিঘœ করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে যুবকের পা উড়ে গেছে

রায়গঞ্জে চাঁদাবাজির অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে দুমকিতে ছাত্রদলের মানববন্ধন-বিক্ষোভ

সাতক্ষীরায় দুই আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে আটঘরিয়ায় কলেজ ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাতে চলছে চড়া সুদে ঋণের রমরমা ব্যবসা

তুরিন আফরোজ ৪ দিনের রিমান্ডে

‘কেএফসি’ এবং ‘বাটা’য় হামলা পরিকল্পিত? সমালোচনায় মুখর নেটিজেনরা!

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফুলপুরে ছাত্রদলের বিক্ষোভ-সমাবেশ

ইসরায়েলি বাহিনীকে এআই সরবরাহের প্রতিবাদে দুই মাইক্রোসফট ইঞ্জিনিয়ার বরখাস্ত

কেইপিজেড বিনিয়োগ পরিবেশের ধারণা নিলেন বিদেশি ৭০ বিনিয়োগকারী

হজ ফ্লাইট শুরু ২৯ এপ্রিল

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক

বান্দরবানের লামায় অস্ত্রের মুখে ৮ শ্রমিককে অপহরণ

লালপুরে জুলাইযোদ্ধা পরিচয়ে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি

২ জেলায় নতুন এসপিসহ ৬ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি

বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা উচিত হয়নি: পল ক্রুগম্যান

গাজায় ইসরায়েলী বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

শুরু হলো অ্যাসেসমেন্টের কাজ, শীঘ্রই খোলা হবে নতুন হল